মেট্রোরেলে যাতায়াতের নিয়ম জানা যাবে এমইআইসি থেকে
৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৩০
ঢাকা: বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে মেট্রোরেল একটি জনপ্রিয় ও সহজ গণপরিবহন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও বেশ আগেই চালু হয়েছে এই ট্রেন। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশও। চলতি মাসেই ঢাকায় চালু হচ্ছে এটি। যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য একেবারেই নতুন। সেজন্য জনসাধারণকে এ বিষয়ে ধারণা দিতে এমআরটি-৬ এর উত্তরা ডিপো এলাকায় মেট্রোরেল এক্সিবিশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার (এমইআইসি) নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে প্ল্যাটফর্মে ওঠা, টিকিট সংগ্রহ এবং যাতায়াত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এমইআইসি পরির্দশন করতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে মেট্রোতে চলাচলের জন্য যাত্রীরা পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, এমইআইসি’তে রয়েছে মেট্রোরেলে মক-আপ, মূল ট্রেন সেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনসাধারণকে মেট্রোরেলে যাতায়াত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচলে সক্ষম ২ সেট মিনি মেট্রোরেল। মেট্রোরেল স্টেশন থেকে স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টিকিট সংগ্রহের টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম), মেট্রোরেল স্টেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্মার্ট কার্ড বেজড প্রবেশ এবং বর্হিগমন গেট। এছাড়া মেট্রোরেলের ভেতরে এবং স্টেশনে যাত্রীদের করণীয় এবং কি করা যাবে না- সে সকল বিষয়ে সচিত্র উপস্থাপনা সংবলিত ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিও, অ্যানিমেটেড কার্টুন এবং টিকিট সংগ্রহের পদ্ধতি প্রদর্শন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এমইআইসি’তে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের জন্য এমইআইসি পরিদর্শনের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতি ব্যাচে অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে এমইআইসি পরিদর্শন করতে পারবেন। প্রতি রোববার সাপ্তাহিক ছুটি বাদে বাকি দিনগুলো সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এমইআইসি। এর মধ্যে দুপুর ১টা থেকে ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত নামাজ ও দুপুরের খাবারের বিরতি থাকবে।
মেট্রোরেল বাংলাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন। যা ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং এক দিনে ৫ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। ৬টি কোচ সংবলিত প্রতিটি একমুখী মেট্রোরেল প্রতিবারে ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার কমে যাবে। জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহারও কমে আসবে। ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত ব্যবস্থায় ভিন্নমাত্রা যোগ করবে মেট্রোরেল। এতে কর্মঘণ্টাও সাশ্রয় হবে।
মেট্রোরেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের যাতায়াতের জন্য আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী ও খর্বকায় ব্যক্তিরা যাতে টিকিট অফিস মেশিনের (টিওএম) মাধ্যমে সহজে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন সেজন্য অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতায় টিকিট বুথ রাখা হয়েছে। একইভাবে যারা হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন তারা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম) ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীদের পেইড জোনে সহজে প্রবেশ এবং বাহিরের জন্য হুইল চেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ভাড়া পরিশোধের প্রশস্ত গেট রয়েছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যাত্রীদের জন্য লিফটে উঠা নামার ব্যবস্থা রয়েছে। আবার লিফটের ভেতরে ধরার জন্য হাতল, নিম্ম উচ্চতায় কন্ট্রোল প্যানেল ও নিজের অবস্থান বোঝার জন্য আয়না রয়েছে। লিফটের কন্ট্রোল প্যানেলে ব্রেইল পদ্ধতির নির্দেশনা থাকবে। তাদের স্বাচ্ছন্দ্যে স্টেশনে ওঠা নামার জন্য লিফটের সামনের পথ ঢালু রাখা হয়েছে। মূক ও বধির যাত্রীরা ডিজিটাল নির্দেশিকা অনুসরণ করে স্বাচ্ছন্দ্যে মেট্রোরেল স্টেশনে ও মেট্রো ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন। অন্ধ যাত্রীদের মেট্রো স্টেশনে চলাচলের জন্য ব্লাউন্ড স্টিম ব্যবহারের সুবিধার জন্য হলুদ রঙের ট্যাকটাইল পথের ব্যবস্থা থাকবে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যাত্রীরা শোনা ও দেখার মাধ্যমে সহজে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন। ট্রেনের কোচের বর্হিভাগ ও প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সর্বত্র এমনভাবে ফাঁকা রাখা হবে যাতে যাত্রীরা নিরাপদ ও সহজে মেট্রোতে ওঠা নামা করতে পারেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি ডিসেম্বরে মেট্রোরেল বাণিজ্যিকভাবে চালু করার কথা রয়েছে। এমআরটি-৬ এর আওতায় রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত লাইন নির্মাণের কথা থাকলেও প্রথম ধাপে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হচ্ছে। ডিএমটিসিএল’র নভেম্বরের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের পূর্ত অগ্রগতি ৯৫ ভাগ। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ অগ্রগতি প্রায় ৯৯ ভাগ।
ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনএএম ছিদ্দিক জানিয়েছেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করতে প্রস্তুতি শেষের দিকে। কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া দুই স্টেশনের যে জটিলতা ছিল তা কেটে গেছে। যে কাজ বাকি আছে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
রাজধানীর যানজট কমানোর পাশাপাশি যাতায়াত সহজ করতে ২০১২ সালে মেট্রোরেল নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। পরে সংশোধন করে মতিঝিলের পরিবর্তে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বাড়িয়ে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ করার পরিকল্পনা করা হয়। এই পথে মোট ১৭টি স্টেশনের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ হবে ১৬টি স্টেশন। যা এখন চলমান। এরই মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট স্থাপন করা হয়েছে।
গত নভেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ২২ শতাংশ। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অবকাঠামো কাজের অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর ইলেক্ট্রিকাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মোট ৮টি প্যাকেজে ভাগ করে এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ পথে মেট্রোরেলের ভাড়া হবে প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা আর উত্তরা স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। এতে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস