বাণিজ্যের স্বার্থেই সমুদ্র নিরাপদ রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:০৩
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ সম্পন্ন সমুদ্র পথে। তাই অবাধ বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্বার্থেই সমুদ্রকে নিরাপদ রাখতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি সংঘাত নয়, সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের লক্ষ্য শান্তি এবং সৌহার্দ্য বাংলাদেশে স্থাপন করা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ-২০২২ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে, ২৮ দেশের অংশগ্রহণে শিপ বেল বাজিয়ে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন তিনি। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা স্মারক বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই পররাষ্ট্রনীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা সর্বদা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। সেই নীতি মেনেই আমরা সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সরকার পরিচালনা করছি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকে আমরা এই নীতি মেনে চলি। যেকারণে আমাদের নিকট প্রতিবেশী এবং আঞ্চলিক দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সংঘাত নয়, সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়। বাংলাদেশে শান্তি ও সৌহার্দ্য স্থাপন এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ যে মানবজাতির জন্য কি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে তা ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিজেরা দেখেছি। আর বর্তমানে যখন রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান রয়েছে। এই যুদ্ধের ভয়াবহতাও এখন আপনারা দেখতে পারেন এবং উপলব্ধি করতে পারেন। আমরা যুদ্ধ চাই না আমরা শান্তি চাই— আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই আহ্বানই জানিয়েছি। এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। কোনো সমস্যা থাকলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করতে হবে।’
নিকট অতীতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অঙ্গীকারের প্রতিফলন দেখাতে সক্ষম হয়েছি। প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা বিরোধ ছিল। যা শান্তিপূর্ণভাবে দুইটি দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে সমাধান করেছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত নিয়ে সমস্যা ছিল, সেই সমস্যারও সমাধান করেছি’— বলেন শেখ হাসিনা।
সমুদ্রসীমার সমাধান নিয়ে জাতির পিতার দূরদর্শিতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তার সরকারের মেয়াদে সমুদ্রসীমা আইনের মাধ্যমে বিরোধ নিরসন করে সমুদ্রসীমা আইন চুক্তি, সিটমহল বিনিময়, সীমান্ত চুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তিরও প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণভাবে যেকোনো সমস্যা সমাধান করা যায়, এটাই আমরা বিশ্বাস করি। কাজেই শান্তি আমাদের সমৃদ্ধি এনে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমসাময়িক সময়ে ভারত মহাসাগরে অর্থনৈতিক গুরুত্ব কৌশলগত কারণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ এই সমুদ্রপথেই চলে। অবাধ বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্বার্থেই সমুদ্রকে নিরাপদ রাখতে হবে। চলাচল নিরাপদ রাখতে হবে।
সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও অনুসন্ধানের বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এজন্য কক্সবাজারে আমরা একটি সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের সরকার সমুদ্র সম্পদের অপার সম্ভাবনা উপলব্ধি করে বাংলাদেশের সামুদ্রিক খাতের উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে সমুদ্র অর্থনীতি তখনই সম্ভব যখন আমরা সমুদ্রে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় পরিকল্পিত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুণগত উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের নৌ বাহিনীকে আধুনিকায়ন করছি। আঞ্চলিক ভৌগোলিক সীমানার মাধ্যমে প্রতিটি দেশ বিভক্ত হলেও বিশাল জলরাশি দ্বারা তা প্রকৃতপক্ষে আমাদের এক করেছে।’
ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ-২০২২ অনুষ্ঠান অংশগ্রহণকারী সকল দেশের সঙ্গে বন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে বলেও বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী।
একইসঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সোনালী বালুকাময় সমুদ্র সৈকত উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনার দেশ। অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ এবং তীরবর্তী অঞ্চলের অপার সম্ভাবনা এবং পর্যটন সম্ভাবনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন বলে আশা করছি।’
সারাবাংলা/এনআর/এনএস