শ্যামলী এন আর পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের ভর্ৎসনা
৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:০৩
ঢাকা: বগুড়ায় শ্যামলী পরিবহনের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া সংক্রান্ত আদালতের নোটিশ রিসিভ না করা ও আহতদের কোনো ধরনের খোঁজ-খবর না নেওয়ায় শ্যামলী এন আর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত শ্যামলী এন আর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভংকর ঘোষ রাকেশের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আপনাদের পরিবহন অ্যাক্সিডেন্ট করল অথচ আহতদের দেখতে গেলেন না, খোঁজ-খবরও নিলেন না। শুধু আছেন টাকা কামানো নিয়ে। আসলে আপনারা মানুষের পর্যায়ে পড়েন না। আপনাদের মানবিকতা নেই। মানবিকতা অর্জন করুন, মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন।’
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।
এর আগে আদালতের তলবে হাজির হন শ্যামলী এন আর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভংকর ঘোষ রাকেশ। আদালত তাকে ডায়াসের সামনে ডাকেন। তাকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, ‘আদালতের নোটিশ রিসিভ করেননি কেন?’ প্রশ্নের জবাবে রাকেশ বলেন, ‘ওই সময় দেশে ছিলাম না। আমরা জানতাম না।
’
এরপর আদালত বলেন, ‘আপনারা জানতেন না এটা অবিশ্বাস্য। আপনাদের গাড়ির ড্রাইভারের দোষ। তার কারণে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।’ তখন গাড়ির মালিক বলেন, ‘গাড়ির ড্রাইভার তো পলাতক।’
এ সময় আদালত প্রশ্ন করে বলেন, ‘আহতদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন? তাদের চিকিৎসার জন্য কোনো খরচ দিয়েছেন? কোনো খরচ দেননি। আসলে আপনারা মানুষের পর্যায়ে পড়েন না। মানবিক হোন। মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন।’
পরে আদালত নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার ব্যয় সংক্রান্ত খরচ নিরূপণ করে আহতদের হস্তান্তর করার জন্য উভয়পক্ষের আইনজীবীকে সমঝোতা করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এক সপ্তাহ পর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালত দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। শ্যামলী এন আর পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাজুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাফিউল ইসলাম।
পরে আইনজীবী শিশির মনির জানান, ঘটনাস্থলে আয়নাল হোসেনের মৃত্যু হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সের চালকেরও মৃত্যু হয়। আর আহত হয়েছেন আয়নাল হোসেনের তিন সন্তানসহ বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সাতজন।
রিটের শুনানি নিয়ে গত ৭ আগস্ট আদালত ক্ষতিগ্রস্ত রিটকারী সাতজনকে এক কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে সড়ক পরিবহন আইনের অধীনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের ফান্ড গঠনে কী অগ্রগতি হয়েছে, তা জানাতে বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন আদালত।
সড়ক ও পরিবহন সচিব, আইন সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার রূপনগরের সবজি বিক্রেতা আয়নাল হোসেন তার স্ত্রী ফিরোজা বেগমের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স করে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা সেতুর পাশে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলে আয়নাল হোসেনের মৃত্যু হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সের চালকেরও মৃত্যু হয়। নিহত অ্যাম্বুলেন্স চালকের নাম দ্বীন ইসলাম (৪৫)। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার কাউখালী থানায়। এ ঘটনায় আয়নাল হোসেনের তিন ছেলে ফরিদ হোসেন (২০), ফরহাদ হোসেন (১৮) ও ফিরোজ হোসেন (২৯) আহত হয়েছেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ