শক্তির ‘অলআউট মহড়া’র কৌশল নিয়ে মাঠে আ.লীগ
৮ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:২৬
ঢাকা: ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে সতর্ক অবস্থানে থেকে সাংগঠনিক শক্তির ‘অলআউট মহড়া’ দেওয়ার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সরকারবিরোধী যেকোনো অরাজকতা ঠেকাতে সতর্ক থাকার পাশাপাশি বিএনপির প্রতি পাল্টা হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন দলটির হাইকমান্ড। নেতারা সরকারবিরোধী নৈরাজ্যকর যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুক্রবার থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে সতর্ক অবস্থানে থাকার দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন।
দলের নেতারা জানান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির অলআউট মহড়া দিতে প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন। ৯ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মহানগর নাট্যমঞ্চে এক সমাবেশ করবে। সমাবেশে কয়েক লাখ লোক জমায়েত করে শক্তির মহড়া দেওয়া হবে।
তারা আরও জানান, ১৩ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রর পাশে বাণিজ্য মেলা মাঠে এক সমাবেশ করবে। সেখানেও শক্তির সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দিবে ক্ষমতাসীন দলটি। আর ১০ ডিসেম্বর সরকারবিরোধী যেকোনো নাশকতা-নৈরাজ্য ঠেকাতে মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, প্রতিটি ওয়ার্ড-থানায় সতর্ক অবস্থান নিয়ে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেওয়া হবে।
১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে দলের হাইকমান্ড বিএনপির প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ থেকে শুধু ২১ বছর আমরা মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্তও মার খেয়েছি। ২০২২ সাল পর্যন্ত অনেক কিছু সহ্য করেছি। বাংলাদেশকে আমরা একটা জায়গায় নিতে চেয়েছি। আমাদের সেই অর্জনটা হয়ে গেছে। কাজেই আজকের বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। এবার যে হাত দিয়ে মারতে আসবে সে হাত ভেঙ্গে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে গাড়িতে আগুন দেবে, সেই হাত ওই আগুনে পোড়াতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’
যৌথসভায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সকল সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও একই সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে জনগণকে কষ্ট দিয়ে সমাবেশ করা- এটা আর হতে দেওয়া হবে না। আমরাও করব না। মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে করার কথা ছিল। আমরা সেখান থেকে সরিয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চে নিয়ে গেছি। আমরাও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাই না।’
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাড়ায় মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের সব জেলা-উপজেলা, মহানগর, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আজ থেকে সতর্ক পাহারায় থাকবেন। আক্রমণ আমরা করব না। তবে উসকানি দিলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। এই বিজয়ের মাস আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে তুলে দিতে পারি না। এটা আমাদের শপথ। অকারণে আক্রমণ আমরা করতে যাব না। শান্ত থেকে ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের যেন কোনো দুর্নাম না হয়। তারা শুরু করেছে, আমরাও দেখব।’
এদিকে, আওয়ামী লীগ প্রধান বিএনপির প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরাও জানি কী করতে হবে। বার বার আঘাত দেবে আর আমরা চুপ করে সহ্য করব? ২০২২ সাল পর্যন্ত সহ্য করেছি কেন? আমরা উন্নয়নের যে পরিকল্পনা করেছি, ক্ষমতায় থেকে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে উন্নত করতে হবে। যদি কেউ ভাবে দুইটা বোমা মেরে, পুলিশকে আঘাত করে, চালডাল দিয়ে খিুচুরি খেয়ে এই সরকার হটিয়ে দেবে- তা হবে না। এত ভাত দুধ দিয়ে খায় না। এত সহজ না।’
দলের নেতাকর্মীদের জনগণের নিরাপত্তায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকটা এলাকায় মাঠে থাকতে হবে মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। ওরা লুটেরার দল। তাই আমাদের যতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, দোকানদার আছে, সবাইকে বলতে হবে- তারা কি শান্তিতে ব্যবসা করতে চায়? নাকি এই অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়? তাদেরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং এদের এই জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা-খুনের বিরুদ্ধে সকলের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর নিয়ে আমাদের ভেতর অতিমাত্রায় কোনো আতঙ্ক বা দুশ্চিন্তা নাই। কারণ আমরা জানি বিএনপি নামক দলটির দৈরাত্ম কতটুকু? আমারা দেখেছি ২০১৩ ও ২০১৪ তারা জ্বালাও পোড়াও করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, সরকারি সম্পদ নষ্ট করেছে। তাই তাদের নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে। তবে তা অতিমাত্রায় না।’
তিনি বলেন, ‘এই রাজধানী ঢাকা সুন্দর সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে চলছে। মানুষ যার যার কাজে ব্যস্ত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত সুন্দর। সেই পরিস্থিতিকে যদি কেউ নসাৎ করতে চায়, বা যদি ফের আগের খাসিলত অনুসারে কোনো জ্বালাও-পোড়াও করতে চায়- তাহলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সরকারের দায়িত্ব হবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। আর আমরা দলগতভাবে ঢাকাকে শান্ত রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন করব।’
সাবেক প্রতিমন্ত্রী নানক আরও বলেন, ‘বিএনপি শব্দবোমা মেরে আতঙ্ক তৈরি করেছে। আমার মনে হয়, বিএনপির লোকজনও আতঙ্কে তাদের নির্ধারিত সমাবেশে যেতে ভয় পাবে। আর বাইর থেকে লোকজন এনে ঢাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টির যে লক্ষ্য তাদের রয়েছে; তা খুব একটা সফল হবে না। তারা বলেছে, ১০ ডিসেম্বরের পর সরকার থাকবে না, সরকার থেকে শেখ হাসিনাকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনবে। আমি বলতে চাই, ১০ ডিসেম্বরে এই ঢাকা তার নিজের গতিতেই চলবে। ১১ ডিসেম্বর সকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা হবে।’
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম