সরষের মধ্যে ভূত থাকলে দুদকের প্রতি আস্থা হারাবে জনগণ: রাষ্ট্রপতি
৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:৪৬
ঢাকা: সরষের মধ্যে ভূত থাকলে জনগণ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি আস্থা হারাবে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। দুর্নীতি দূর করতে হলে ধনী, দারিদ্র, শ্রেণি পেশার নির্বিশেষে সকলকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। ঘুষ,দুর্নীতি,স্বজনপ্রীতিকে অসম্মানের চোখে দেখতে হবে।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে শিল্পকলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসের অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এখন সবখানেই যেন টাকাওয়ালাদের জয়জয়কার। টাকা কিভাবে এল? সৎ পথে না অবৈধপথে- এটা দেখার জন্য কারও মাথা ব্যথা নেই। কালের বির্বতনে সেই মূল্যবোধ এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি যেন হয়ে গেছে টাকা আর টাকা।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদ, পেশাজীবি, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক ও শ্রমিক সবাইকেই এক হতে হবে। সরকার বা দুদক সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করে দেবে- এই আশায় আমরা বসে বসে দেখব, বাস্তবে এটা কখনো সম্ভব নয়। দুর্নীতি দূর করতে হলে ধনী, দারিদ্রসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে অসম্মানের চোখে দেখতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘দুর্নীতি আর উন্নয়ন একসঙ্গে চলতে পারে না। দুর্নীতি রোধ করতে দুদকে আরও সাহসী পরক্ষেপ নিতে হবে। ছোট-বড়, ধনী দারিদ্র নির্বিশেষে সবার বেলায় একই পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষমতা দেওয়া হয় দায়িত্ব পালনের জন্য, দেখানোর জন্য নয়। দুদকের সকল কর্মকর্তাদের ক্ষমতার সবোর্চ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষমতার অপপ্রয়োগকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হয়, এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশে বসবাস করা প্রত্যেকের স্বপ্ন। এটা সহজ নয়, আবার অসম্ভবও নয়। দায়িত্বশীল গণমাধ্যম একজন দুর্নীতিগ্রস্থ লোককে দুর্নীতি থেকে নিবৃত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। সততা, স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সেজন্য বৈশ্বিকভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। আমরা জানি, দুর্নীতিবাজদের বিচারের বিলম্ব করা, দায়িমুক্তির সংস্কৃতি জন্ম দেয়। বিচারহীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আদর্শ পথ পরিহার করতে শেখায়। দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। তার জন্য বিচার বিভাগকেও থাকতে হবে স্বচ্ছ। নৈতিকতার মানদণ্ডে বিচার বিভাগকে সবার উপরে থাকতে হবে।’
এদিকে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল। এখন কিন্তু সেই আগের অবস্থানে নেই। রাতারাতি দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। এটা একটা সামাজিক ব্যাধি। ক্রমান্বয়ে দূর হবে। দুর্নীতি থেকে উন্নতি করতে হলে সরকারি দফতর থেকে প্রতিটি জনগণকে সচেতন হতে হবে। দুর্নীতি দূর করতে দুদক বদ্ধপরিকর। সেই উদ্দেশ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে দুদকের সকল কমিশনার, সচিব, মহাপরিচালক থেকে পরিচালক এমনকি সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে বেলুন উড়িয়ে ২০তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্বোধন করা হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলায় বড় পরিসরে উদযাপন হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। জাতিসংঘ ২০০৩ সালের ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশ আনকাকের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে দুদক ২০০৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন শুরু করে।
সারাবাংলা/এসজে/এনএস