‘ঢাকায় আমরা নাই, বিএনপিকে এই শহর দিয়ে গেলাম’
৯ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৪৭
ঢাকা: ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বিএনপি কাল থাকবে গোলাপবাগে। মানুষ আতঙ্কিত কেন হবে? জনগণকে বলব, আতঙ্কের কারণ নেই। আমরা চলে যাচ্ছি কাল সাভারে। ঢাকায় আমরা নাই। বিএনপিকে এই শহর দিয়ে গেলাম। আতঙ্ক কেন হবে। আমরা ক্ষমতায়। আমরা কেন অশান্তি চাইব?
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেল ৩টার মধ্যে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তার আগে ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমবেত হন। সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
শেখ হাসিনার ডাক শোনার জন্য ঢাকায় আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের চিরাচরিত ভঙ্গিতে বলেন, ‘খেলা হবে। ছাড় হবে না। লাঠি নিয়ে এলে খেলা হবে। আগুন নিয়ে এলেও খেলা হবে। বিআরটিসির গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। অনেক ছাড় দিয়েছি। আর ছাড় দেব না।’
সমাবেশে লোক সমাগম উপস্থিতির জন্য দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি ধন্যবাদ জানান ওবায়দুল কাদের। গণমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক বন্ধুরা সত্যটা তুলে ধরেন। কিছু কিছু মিডিয়া বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারা কারা চিনে রাখুন। সময় মতো জবাব পাবে তারা। কোনো কোনো মিডিয়া দেখলে মনে হয়, এখানে আর কোনো দল নেই। চট্টগ্রাম, যশোর, কক্সাবাজারে শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছে। তাদের (বিএনপি) সব সমাবেশ চট্টগ্রামের সমান হবে না।’
দলীয় নেতাকর্মীদের রাতে বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা দেখার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাংলাদেশেও অপশক্তির বিরুদ্ধে খেলা হবে। খেলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির। সব অপশক্তি বনাম আওয়ামী লীগ। এই খেলা হচ্ছে রাজনীতির মাঠে।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুদের বলি, আমরা আপনাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি না। এখানে দূতাবাসে যারা আছেন, বন্ধু দেশের প্রতিনিধি আছেন। তারা এখানে কারও পক্ষ নেবেন না। আমাদের ঘরের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না। আমরা জানি, আমাদের গণতন্ত্র কীভাবে আমরা সংরক্ষণ করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি দু’দিন আগে বলিনি, মেঘ চলে যাবে। আমি বলিনি, শেষ পর্যন্ত বিএনপি সমাধানে আসবে। পল্টন থেকে বাঙলা কলেজ না হলে গোলাপবাগ। অবশেষে মেনে নিয়েছে। শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তৈরি হয়ে যান। প্রস্তুত হয়ে যান। যারা আমার সহস্র জননীর বুক খালি করেছে। যারা এদেশের শত শত মায়ের কোল খালি করেছে। সন্তান হারা মায়ের কান্না, স্বামী হারা বধূঁর আর্তনাদ, ভাই হারা বোনের আর্তনাদে বাংলার আকাশ আজো ভারী।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতারা হাজার হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছে। পাচার করে আমেরিকা-সিঙ্গাপুরে ধরা খেয়েছে। তারেক রহমানের সাত বছরের দণ্ড হয়েছে। সাহস নাই জেলে গিয়ে রাজনীতি করবে। সেই সাহস তারেক রহমানের নেই। ২০০৭ সাল থেকে ১৫ বছর। ১৫ বছরে এল না। কবে আসবে?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি দিবাস্বপ্ন দেখছে। অচিরেই তাদের এই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রঙিন খোয়াব কপূর্রের মতো উবে যাবে। নেত্রী আপনার আওয়ামী লীগ প্রস্তুত আছে।’ রাজধানী বিএনপির জন্য ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের সমাবেশ ঘিরে সতর্ক পাহারায় থাকতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে বিএনপির সমাবেশ প্রতিহত করতে মাঠে থাকার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। তারই অংশ হিসেবে একদিন আগে মহানগর নাট্য মঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এ সমাবেশ আয়োজন করে। এ কর্মসূচিটি আগে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের রাস্তায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাস্তায় কোনো কর্মসূচি পালন করা হবে না বলে ঘোষণা দেন ওবায়দুল কাদের।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চলনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সানজিদা খানম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম