২০২২ সালে সারা বিশ্বে নিহত ৬৭ সাংবাদিক: আইজেএফ
১০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৫২
ঢাকা: ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট (আইজেএফ) ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে কর্মরত অবস্থায় সাংবাদিকদের হতাহতের এক তালিকা প্রকাশ করেছে। এই হিসেব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১টি দেশে ৬৭ জন সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মী নিহত হয়েছেন। গত বছর বিশ্বজুড়ে এই সংখ্যা ছিল ৪৭।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আগে গতকাল শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) এই তালিকা প্রকাশ করে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বাবান জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সংক্রান্ত আইএফজে কনভেনশন যত দ্রুত সম্ভব পাস করার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
তালিকায় দেখা যায়, ২১টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউক্রেনে, ১২ জন। এরপরেই মেক্সিকোতে ১১ সাংবাদিক মারা গেছেন, যেখানে অপরাধমূলক সংগঠনগুলো সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়া হাইতি আছে তালিকার তৃতীয় অবস্থানে, যেখানে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬। পরের অবস্থানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান, যেখানে রাজনৈতিক সংকটে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন সাংবাদিক।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে ফিলিপাইনের নতুন নেতৃত্ব সাংবাদিকদের উপর চলমান প্রাণঘাতী হামলা বন্ধ করেনি। ফার্ডিনান্ড ‘বংবং’ রোমুয়াল্ডেজ মার্কোস জুনিয়রের শাসনামলের প্রথম বছরে চারজন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্য এবং আরব বিশ্বেও বেড়েছে সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মী হত্যার সংখ্যা। প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবিদ্ধ হয়ে হত্যার শিকার হওয়া আল জাজিরার সিনিয়র সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহসহ এ বছর আরব বিশ্বে মারা গেছে পাঁচজন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল তিন।
আফ্রিকার দেশ চাঁদ ও সোমালিয়ায় মারা গেছে ৪ জন সাংবাদিক।
মহাদেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে আমেরিকায় ২৯ জন, এশিয়া প্যাসিফিকে ১৫ জন, ইউরোপে ১৪ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বে পাঁচ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।
আইজিএফ প্রকাশিত সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্রে চীন থেকে বেলারুশ এবং মিশর থেকে হংকং, ইরান, মায়ানমার, তুরস্ক এবং রাশিয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক দমন-পীড়নের চিত্র উঠে এসেছে। দুই বছর আগে থেকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে সাংবাদিক নির্যাতনের তালিকা প্রকাশ শুরু করে আইজিএফ। এবারই সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক ৩৭৫ জন কারাবন্দি অবস্থায় আছেন, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চীন ও হংকংয়ে তার মিত্ররা ৮৪ সাংবাদিককে কারারুদ্ধ করে তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এরপর মিয়ানমারে আটক আছে ৬৪, তুরস্কে ৫১, ইরানে ৩৪, বেলারুশে ৩৩, মিশরে ২৩, রাশিয়া এবং অধিকৃত ক্রিমিয়ায় ২৯, সৌদি আরবে ১১, ইয়েমেনে ১০, সিরিয়ায় ১০ এবং ভারতে নয় জন সাংবাদিক কারারুদ্ধ আছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়াতেও সাংবাদিকরা নতুন করে সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন। দেশটিতে আবারও সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কয়েক দশকের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের অবসানের পর রাজনৈতিক সমঝোতা অনুযায়ী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তা ভাঙার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আইএফজে’র জেনারেল সেক্রেটারি অ্যান্থনি বেলাঞ্জার এক বার্তায় বলেন, ‘সাংবাদিক এবং অন্যান্য মিডিয়াকর্মীদের হত্যা বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের। গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ সাংবাদিকতা রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোকে আরও একবার জেগে উঠতে হবে। এই মুহূর্তে পদক্ষেপ না নিলে যারা তথ্যপ্রবাহ বন্ধ করতে চায় তারা উৎসাহিত হবে এবং নেতাদের জনগণের সামনে জবাবদিহিতাকে নিরুৎসাহিত করবে। এতে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীরা উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের পথে যাতে দাঁড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করা যাবে না।’
সারাবাংলা/আরএফ/এমও
আইজেএফ ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস-রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি) সারা বিশ্ব