লাশ মেলে ৪ দিন পর, খুনের রহস্য উদঘাটন ২ বছর পর
১১ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় প্রায় দুই বছর আগে পুকুর থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। স্থানীয় থানা-পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে ‘আত্মসমর্পণ’ করলেও পিবিআই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জানিয়েছে- ওই যুবককে নৃশংসভাবে খুনের পর পুকুরে গাছের শেকড়ের নিচে তার লাশ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
এ ঘটনায় পিবিআই তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে ঘটনায় জড়িত মূল ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের পর দুবাইয়ে পালিয়ে গেছে বলে তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) সকালে গ্রেফতার দু’জনকে নিয়ে পিবিআই টিম রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ঘটনাস্থলে যায়। যে পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার হয়েছিল সেই পুকুরের পানি সেচে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত ‘গাছের বাটাম’।
গ্রেফতার তিনজন হল- বসু কুমার মালাকার (৩৩), সুবল মালাকার (২৭) এবং বাপ্পা চৌধুরী (৩২)। তবে হত্যায় জড়িত মূল আসামি জনি কুমার মালাকার (৩২) বর্তমানে পলাতক আছেন বলে পিবিআই জানিয়েছে।
২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের মালাকার পাড়ায় একটি পুকুর থেকে তপু মালাকারের (২৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজের পর ওইদিন সকালে লাশটি পুকুরে ভেসে উঠে। এ ঘটনায় রাঙ্গুনিয়া থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে খুনের বিষয় উঠে আসায় ওই বছরের ৪ মার্চ রাঙ্গুনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন সাকিল বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে না পেরে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু আদালত সেটি গ্রহণ না করে খুনের রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেন পিবিআইকে।
গত ৭ ডিসেম্বর রাঙ্গুনিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয় বসু কুমার মালাকারকে। তার দেওয়া তথ্যে ৯ ডিসেম্বর রাতে সুবলকে মৌলভীবাজার থেকে এবং বাপ্পাকে রাঙ্গুনিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। সুবল ও বাপ্পাকে ১০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তিনদিনের জন্য পিবিআইয়ের হেফাজতে নেওয়া হয়।
পিবিআই কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সুবল ও বাপ্পাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা তপুকে খুনের বিষয়টি স্বীকার করে। তারা জানায়, জনি গাছের বাটাম দিয়ে মাথায় আঘাত করে তপুকে খুন করে। এরপর তিনজন মিলে লাশ গুমের উদ্দেশ্যে রেখে দেওয়া হয় পুকুরের মধ্যে গাছের শেকড়ের নিচে। তাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে তারা খুনের এবং লাশ গুমের স্থান দেখিয়ে দেয়। তাদের দেখানো মতে পুকুরের পানি সেচে গাছের বাটামটি উদ্ধার করি।’
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) নাজমুল হাসান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বসু কুমার মালাকার ঘটনায় জড়িত নন। সুবল মোবাইলের যে সিম ব্যবহার করে, সেটি বসু’র নামে নিবন্ধিত। সেই নম্বর থেকে ঘটনার পর ভিকটিম তপুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। সেই ফোন কলগুলোর সূত্র ধরে বসুকে শনাক্ত করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর সুবলের সন্ধান মেলে। এরপর বাপ্পাকে পাওয়া যায়। তবে জনি মালাকার হত্যাকাণ্ডের পরপরই দুবাই চলে যায়।
কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, জনি মালাকার নামে ওই গ্রামের এক যুবক মদ বিক্রি করত। সুবল ও বাপ্পা তার সহযোগী। ভিকটিম তপুর কাছ থেকে জনি কিছু টাকা পেত। হতে পারে সেটা মদ বিক্রির টাকা, আমরা এখনো নিশ্চিত নই। সেই টাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে জনি গাছের বাটাম দিয়ে তপুর মাথায় আঘাত করে খুন করে। এরপর সুবল ও বাপ্পাসহ তপুর লাশ যাতে পাওয়া না যায় সেজন্য পুকুরের পানির মধ্যে গাছের শেকড়ের নিচে আটকে রাখে।’
সারাবাংলা/আরডি/এনএস