২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করবে তরুণরা: প্রধানমন্ত্রী
১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:০১
ঢাকা: ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সব দিক থেকে বাংলাদেশ স্মার্ট হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের শক্তিই তারুণ্য। এই শক্তি দিয়েই দেশের উন্নয়ন হবে। আজকের তরুণ সমাজই ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিববর্তন হয় দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে উন্নয়ন করেছিলাম। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর এসে দেখি স্বাক্ষরতার হার ৬৫ ভাগ থেকে আবারও নেমে গেছে ৪৫ ভাগে। অবশ্য এটার কারণ আছে। খালেদা জিয়া মেট্রিক পরীক্ষায় শুধু উর্দু ও অংকে পাস করেছিলেন, আর কোনো বিষয়ে পাস করেনি। জিয়াউর রহমান ইন্টারমেডিয়েট পাস, আর তারেক জিয়া যে কি পাস তারও কোনো ঠিকানা নাই। তাদের কথা হচ্ছে— আমরা পড়ি নাই তোমরা পড়বে কেন? তাই স্বাক্ষরতার হার ৬৫ ভাগ থেকে ৪৫ ভাগে নামিয়ে আনে।’
বিএনপি-জামায়াতের মেয়াদে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বেহাল দশার কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ সামনের দিকে যায়, উন্নয়নের ধারা আরও বেশি উন্নত হয়। আর বিএনপি আসলে দেশটা চলে যায় পিছন দিকে। উন্নয়নটা তাদেরই হয়। হাওয়া ভবন খুলে। খাওয়া ভবন খুলে খাই খাই করে, আর কিছু করতে পারে না। যে কারণে বারবার জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছে।’
নিজ সরকারের ধারাবাহিকতায় অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক খাতে উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘রূপকল্প ২০২১ দিয়েছিলাম। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ব। বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ করব। আল্লাহর রহমতে যখন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছি, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
এই সরকারের মেয়াদে সারাদেশে রাস্তাঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের ঘর তৈরি করে দেওয়াসহ আর্থ-সামাজিক খাতে বিভিন্ন অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে সব থেকে বেশি কাজ আওয়ামী লীগ সরকার করে গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। দেশে কোনো মানুষ অভুক্ত থাকবে না। কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা সৃষ্টি করেছে। এরপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। ফলে আজকে সারাবিশ্বেই প্রতিটি পণ্যের মূল্য বেড়েছে। খাদ্যপণ্য ও পরিবহনের মূল্য বেড়েছে। ফলে যেসব জিনিস আমদানি করতে হয়, সেখানে অনেক টাকা খরচ করে হচ্ছে। তারপরও দেশের মানুষের যাতে কোনো কষ্ট না হয় সেই ব্যবস্থা করেছি।’
ব্যাংকে টাকা নেই তাই টাকা রাখা যাবে না— এ বিষয়ে গুজব রটনাকারীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই টাকা তুলে ঘরে রাখতে গিয়ে দেখে টাকা চুরি হয়ে যায়। অর্থ্যাৎ চোরের সুযোগ হয়েছে। যারা এই গুজব ছড়াচ্ছে তারা চোরদের এজেন্ট কি না, সেটা আমি জানি না। মনে হয় তারা চোরদেরই এজেন্ট হবে। গুজবে কেউ কান দেবেন না। আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, সেখানে সমর্থন চাই।’
নিজ সরকারের মেয়াদে মেগাপ্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। টানেল হচ্ছে। খুব শিগগিরই মেট্রোরেল হয়ে যাবে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। সেজন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই। অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত উন্নয়নের পরিকল্পনা দিয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সব দিক থেকে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। প্রতিটি মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ই-ইকোনমি অর্থ্যাৎ ডিজিটাল অর্থনীতি চালু করব। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ই-গর্ভনেন্স নিশ্চিত করব। ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে করে যাচ্ছি, ডিজিটাল সেন্টার করেছি। সেখানে একজন নারী ও একজন পুরুষ থাকবে। প্রতিটি কাজে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারেই ছিল— তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের উন্নয়ন। কাজেই এই তারুণ্যের শক্তি দিয়েই বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। আজকের তরুণ সমাজই ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করবে। একইসঙ্গে ডেল্টা প্ল্যান করেছি। বাংলাদেশ বদ্বীপ, এই বদ্বীপ উন্নত সমৃদ্ধ হবে। দক্ষিণাঞ্চল অবহেলিত ছিল। এখন আর অবহেলিত নাই। বরং পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এখন ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়েছে। কাজেই সারাদেশের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ, সেটা করতে পেরেছি।’
দলীয় নেতাকর্মীদের নিজের অবস্থান থেকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল- মানুষের অন্ন বস্ত্র চিকিৎসা শিক্ষার ব্যবস্থা করা। প্রতিটি গ্রামকে শহর হিসাবে উন্নীত করে দিচ্ছি। ফলে এখানে আর কোনো বিভেদ থাকবে না। গ্রামের মানুষ শহরের নাগরিক সুবিধা ভোগ করবে। সেইভাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। এই অগ্রগতি কেউ থামাতে পারবে না।’
দেশের দুঃসময়ে রাস্তায় যুব মহিলা লীগের স্লোগান আর ত্যাগ কোনোদিন কেউ ভুলবে না বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্দিনের ভূমিকার কথা স্মরণ করে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) যুব মহিলা লীগের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে সকাল ৯টার পর থেকে সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলর, ডেলিগেট আমন্ত্রিত অতিথিরা সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করে। দুপুর ১২টার পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে আসার পর সংগঠনের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলকে সঙ্গে নিয়ে পতাকা স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে এবং দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর সম্মেলনের বক্তৃতা পর্ব শুরু হয়।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নাজমা আক্তার এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সহ-সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন সুলতানার নাম ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন।
এর আগে, যুব মহিলা লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ। সেই সম্মেলনে সভাপতি পদে নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অপু উকিলকে পুনর্নির্বাচিত করা হয়। ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রীদের নিয়ে ২০০২ সালের ৬ জুলাই গঠিত হয় যুব মহিলা লীগ। সে সময় ১০১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটির প্রধান ছিলেন বর্তমান সভাপতি নাজমা আক্তার, যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। ২০০৪ সালে যুব মহিলা লীগের প্রথম সম্মেলনে সভাপতি হন নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। তিন বছর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় সম্মেলন হয় ১৩ বছর পর।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস