Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১০ বছরে ঢাকার নদীর তীর থেকে ২২ হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:০৫

ঢাকা: নদ-নদী অবৈধ দখলের ঘটনা নতুন নয়। কখনো রাজনৈতিক প্রভাব আবার অর্থের প্রভাব খাটিয়ে রাজধানী ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। গত দশ বছরে অর্থাৎ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নদ-নদীর তীর থেকে ২২ হাজার ৫৩৯টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৮৪১ দশমিক ৪৯ একর তীরভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। এসকল এলাকায় ভরাট করা ২ লাখ ঘনমিটার বালু/মাটি/রাবিশ এবং ১ দশমিক ৫ লাখ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। আর ২০১৯ সাল থেকে তীরভূমি দখল করে রাখা পণ্য নিলামের মাধ্যমে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর নাব্যতা এবং নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে পরামর্শ প্রদান, সুপারিশ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্য গঠিত ‘টাস্কফোর্স’র ৪র্থ বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরও জানানো হয়, ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোর অবৈধ দখল ও দূষণরোধে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ২০১০ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। নদী তীর দখলের অভিযোগে বিভিন্ন জনের থেকে ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু নদী ও তুরাগ নদে উচ্ছেদকৃত তীরভূমিতে ‘সীমানা পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ৫৬২টি সীমানা পিলার নির্মাণ, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১৪টি ভারী জেটি এবং তিনটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হবে। এপর্যন্ত ৪ হাজার ৪৭৯টি সীমানা পিলার নির্মিত হয়েছে, আর নির্মাণ কাজ চলমান ১ হাজার ১০১টি এবং ১ হাজার ৯৮২টির দরপত্র প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া ৬টি জেটি নির্মিত হয়েছে, আর ৮টি জেটির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ১০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মিত হয়েছে, ৪২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণাধীন। দু’টি ইকোপার্ক নির্মিত হয়েছে, এরমধ্যে একটির নির্মাণ কাজ চলমান।

বৈঠকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদীরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তারমধ্যে ‘টাস্কফোর্স’ অন্যতম। নদীরক্ষায় আমরা সতর্ক আছি। নদী তীর দখল ও দূষণরোধে কাজ করছি। দূষণের ক্ষেত্রে দূষণকারীদের বিরুদ্ধে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। শিল্প মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। অনেক শিল্প কারখানায় ইটিপি রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর সঠিক ব্যবহার হয় না।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদী রক্ষায় কাজ করছে। প্রথমে তারা ৪৮টি নদী নিয়ে কাজ করছে। পরবর্তীতে অন্যান্য নদী নিয়ে কাজ করবে। নদী রক্ষায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে এসমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের উন্নয়নের মহাযাত্রায় বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণ করতে পারব।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও পরিবেশ রক্ষায় সরকার সচেষ্ট রয়েছে। নদী রক্ষায় নৌপরিবহন, পানিসম্পদ, স্থানীয় সরকার; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছে। করোনাকালীন কাজের গতি কিছুটা ধীর হয়ে গেলেও থেমে যাইনি। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ তখন গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নদী রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করি নাই। স্থানীয় প্রশাসন যার যার অবস্থান থেকে কাজ করেছে।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কিছুটা সমস্যা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে পেরেছেন। তার দক্ষ ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। তার নেতৃত্বে নদী রক্ষাসহ সবকাজ এগিয়ে নিতে চাই। তিনি আমাদের সাহস দিয়েছেন। নদী রক্ষায় সবচেয়ে বড় সাফল্য মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে অবৈধ দখলরোধে সীমানা পিলার, ওয়াকওয়ে এবং বনায়নের জন্য ইকোপার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য বঙ্গবন্ধুর সময়ে সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০০৮ পর্যন্ত আর কোনো ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়নি। বর্তমান সরকারের সময়ে ৮০টি ড্রেজার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের কাজ চলমান রয়েছে।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক , নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এছাড়া এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরনসহ সংশ্লিষ্টরা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।

সারাবাংলা/জেআর/এনএস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর