বিজয়ের গৌরবে ৫২ বছরে বাংলাদেশ
১৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০০:০৬
ঢাকা: বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের স্মৃতিবিজড়িত এবং পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার বিজয়ের দিন আজ। আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। মহান বিজয়ের ৫১ বছর পেরিয়ে ৫২ বছরে বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের দিন।
১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারের অধীনে পরিচালিত দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব-মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।
শুক্রবার স্বাধীনতা সংগ্রামের অকুতোভয় বীর শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে জাতি। ইতোমধ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেওয়া হয়েছে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিজয় দিবসের প্রত্যুষে শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এর পরই শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, তিন বাহিনীর প্রধান ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ লাখো জনতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের; যেসব নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তাদেরও। এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোটি কোটি মানুষকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন একই লক্ষ্যে অবিচল একদল রাজনৈতিক নেতা। তাদের সবাইকেই প্রতিবারের ন্যায় এবারও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতি।
স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে। ৫১ বছরের পথপরিক্রমায় সে স্বপ্নের কতটা পূরণ হয়েছে, আজ সে হিসাব মেলাতে চাইবে সবাই। এর মধ্যে আমাদের অনেক চড়াই-উৎরাই মোকাবিলা করতে হয়েছে। রাজনীতি এগিয়েছে অমসৃণ পথে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। জনবহুল ও সীমিত সম্পদের এ দেশকে স্বয়ম্ভর করে তোলার কাজও সহজ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কঠিন দিনগুলোয় রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্র চালু করতে হয়েছিল।
উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তবে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ রক্ষায় হতে হবে যত্নবান। তবেই বিজয় হয়ে উঠবে অর্থবহ। যে কোনো জাতির শক্তির প্রধান উৎস ঐক্য। প্রায় সব ক্ষেত্রেই অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন এটি। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের পেছনে কাজ করেছিল মত-পথ-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ।
বিজয়ের এই ৫১ বছরে পেরিয়ে সামনের পথচলায় ইতিহাসের দায়-মোচনের প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে চলছে একাত্তরের মানবতা বিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এ ছাড়াও হার না মানা বাঙালি অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রেও উড়াচ্ছে বিজয় নিশান।
মহামুক্তির আনন্দ ঘোর এই দিনটি প্রতিবছর এক নতুন আঙ্গিকে জাতির উল্লাসের সজীবতা জোগায়। নতুন শপথে বলীয়ান হয়ে সামনের পথে এগিয়ে চলার স্বপ্ন দেখায়। কারণ বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে কেবল সামনের দিকে এগিয়েই চলে। তাই বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের তাহার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ- জয় বাংলা স্লোগান-গানে এদিনটিতে মুখরিত হয়ে ওঠে লাল সবুজের বাংলাদেশ।
জাতীয় পর্যায়ে এদিন ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তববক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
এদিকে, মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শুক্রবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৬টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সাড়ে ৭টায় ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
সকাল ১১ টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। ১৭ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে বিজয় শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়াও, ১৮ ডিসেম্বর সকাল ১১ টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তৃতা করবেন দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতারা।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম