Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লণ্ডভণ্ড জাপায় দেবর-ভাবির পদ-পদবির লড়াই তুঙ্গে

আজমল হক হেলাল স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:১২

ঢাকা: জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছিল। ওই সময় জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে। এক পর্যায়ে তা প্রকাশ্যেও আসে। এভাবেই চলছিল জাপা। কিন্তু হঠাৎ করেই রওশন অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েকমাস দেশের বাইরে ছিলেন। এই সুযোগে দলে একক আধিপত্য বিস্তার করেন জিএম কাদের। কিন্তু রওশন চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে জাপার লাগাম টেনে ধরেছেন। তিনি এখন জাপার চেয়ারম্যান হতে চাইছেন। কিন্তু এই পদ ছাড়তে রাজি নন বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

বিজ্ঞাপন

বলতে গেলে লণ্ডভণ্ড জাতীয় পার্টিতে দেবর-ভাবির পদ-পদবির লড়াই এখন তুঙ্গে। কে হবেন পার্টির চেয়ারম্যান?- তা নিয়ে চলছে দেন-দরবার। এই দেনদরবার ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিক থেকে শুরু করে সরকারি ও বিএনপি শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবে কোনো লাভ হয়নি। বরং কূটনৈতিক মহলে জাপার অবস্থান নড়বড়ে হয়েছে। অপরদিকে, দেবর-ভাবি দু’জনই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছেন। জাপার দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র বলছে, জিএম কাদের দল গোছানোর পাশাপাশি ঢাকাস্থ পশ্চিমা ও দক্ষিণ-পূর্ব দেশের দূতাবাসগুলোর কূটনৈতিক মহলে নিজের একটি অবস্থান সৃষ্টি করেছিলেন। সেইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার এইসব কার্যক্রমের অগ্রগতি ভেস্তে গেছে। তার এখন আর আগের মতো কদর নেই। দেবর-ভাবির পদ-পদবির লড়াইয়ের কারণে জাপার ভবিষ্যৎ কী হবে- সেদিকে নজর রাখছে ঢাকাস্থ বিদেশি দূতাবাস ও মিশনগুলো।

জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করার ক্ষমতা বা যোগ্যতা জাতীয় পার্টির নেই। তাদের আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করতে হবে। এই বিষয়টিও ঢাকাস্থ প্রভাবশালী বিদেশি দূতাবাস ও মিশনগুলোর জানা আছে। ফলে জাপার প্রতি তাদের গুরুত্ব আরও কমে গেছে।

এর আগে, গত বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে রওশন এরশাদকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। এর পরই তোলপাড় শুরু হয় দলটির মধ্যে। জেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ আনন্দ-উল্লাস মেতে ওঠেন। তবে কিছুক্ষণ পরই রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছে।

এর কিছু সময় পর জিএম কাদেরের পক্ষ থেকে মাহমুদ আলম (যুগ্ম দফতর সম্পাদক) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রওশন এরশাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোনো এখতিয়ার নেই। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে বেগম রওশন এরশাদকে নিয়োগের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০-এর উপধারা ২ খ এর পরিপন্থি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, জাপার গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী, পার্টির যেকোনো নিয়োগ, অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় কাউন্সিল শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের ওপর অর্পণ করেছে। কো-চেয়ারম্যানসহ অন্য কেউ নিয়োগ বা অপসারণের ক্ষমতা রাখেন না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদের ওপর কোনো আদালত কর্তৃক কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। অস্থায়ীভাবে চেয়ারম্যানের গঠনতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এ বিষয়ে দলটির একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি নাম গোপন রাখার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, দেবর-ভাবির পদ-পদবির লড়াইয়ের কারণে জাতীয় পার্টি ধ্বংসের মুখে। এ লড়াই আমৃত্যু থাকবে। এতে করে দলের ক্ষতি হলো। তিনি বলেন, ‘দল আছে বলে কূটনৈতিক মহল আছে। দল নেই, কিছু নেই। কূটনৈতিক মহল আগের মতো জাপার কোনো নেতাকে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিও আমাদের বিশ্বাস করে না। আমরা এখন সন্দেহের পার্টি।’

এ সব বিষয় জানতে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এ প্রসঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেকমন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সব দলেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কোনোটা দৃশ্যমান, কোনোটা অদৃশ্য। বর্তমানে জাতীয় পার্টিতে যে লড়াই চলছে তা থেমে যাবে। লড়াই থাকবে না। আর এর প্রভাব কূটনৈতিক মহলে কেন, কোথাও পড়বে না। জাতীয় পার্টির সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

জাতীয় পার্টি জিএম কাদের তুঙ্গে দেন দরবার রওশন এরশাদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর