পরীক্ষায় চেয়ারম্যানকে নিয়ে প্রশ্ন, সমালোচনা অভিভাবকদের
১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:১৩
সিরাজগঞ্জ: ‘আব্দুল খালেক সাহেব তালম ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা। তিনি ২০২১ সালে একটি স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি এলাকাবাসীর বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দূর করার জন্য তার এলাকায় ২৫টি নলকূপ স্থাপন, রাস্তাঘাট সংস্কার ও নির্মাণ এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ইতোমধ্যে তিনি তার এলাকায় একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন।’
এটি সিরাজগঞ্জের তাড়াশের রানীরহাট সিরাজগঞ্জ বাজার দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় (সৃজনশীল) প্রশ্ন পত্রের ১ নং ক্রমিকের উদ্দীপক। যা পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে। এমনই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল মমিন। এর মাধ্যমে তিনি তালম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেককে নিয়ে তেলবাজি করেছেন বলে সমালোচনা করেন অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা।
ওই প্রশ্নপত্রে উপরের অংশ পড়ে নিচের উদ্দীপক প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখতে বলা হয়েছে। প্রশ্নগুলো ছিল— (ক) বাংলাদেশে জেলা পরিষদের সংখ্যা কত? (খ) জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস- ব্যাখা কর। (গ) আব্দুল খালেক সাহেব কোন ধরনের স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন? ব্যাখা কর। (ঘ) আব্দুল খালেক সাহেবকে চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লিখিত দায়িত্ব ছাড়াও আরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়— বক্তব্যটির যথার্থতা নিরুপণ কর।
এদিকে অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের এক নম্বরে চেয়ারম্যান আব্দুল খালেককে নিয়ে উদ্দীপক প্রশ্ন করায় এলাকাবাসী ও এলাকার অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যা নিয়ে এলাকায় তোলপার শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, প্রধান শিক্ষক, চেয়ারম্যানের তেলবাজি করবেন না শিক্ষার্থীদের শেখাবেন। এমনকি এ নিয়ে ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকেও।
আসমত আলী নামের এক অভিভাবক ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক বিখ্যাত মানুষ রয়েছেন। যারা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন এবং করছেন। তাদের নাম দিলে শিক্ষামূলক হতো। যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষণীয় বিষয়ও হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। এছাড়া উদ্দীপক ওই প্রশ্নের উপরের লেখাটিও ভুলে ভরা। আসলে ওই প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কি বুঝাতে চাচ্ছেন তা আমার বোধগম্য নয়।’
কলামুলা গ্রামের আরেক অভিভাবক আব্দুল হালিম বলেন, ‘এ ধরনের প্রশ্নপত্র করে শিক্ষার্থীদের দেউলিয়া বানাচ্ছেন শিক্ষকরা। এ ধরনের প্রশ্ন যিনি তৈরি করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে তালম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, রানীহাট সিরাজগঞ্জ বাজার দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় অষ্টম শ্রেণির প্রশ্নপত্র আমাকে নিয়ে করা হয়েছে, সে বিষয়টি আমিও জানতাম না।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এস এম সোহেল রানা বলেন, ‘আমি পরীক্ষার সময়কালীন সভাপতি ছিলাম না। পদাধিকার বলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন।’
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মমিন বলেন, ‘প্রশ্নপত্রের জন্য আমি তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে দিয়েছিলাম। সদস্যদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যানের আত্মীয় ছিলেন। তিনি চেয়ারম্যানকে খুশি করতে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফকির জাকির বলেন, ‘নিজেও বিষয়টি দেখে অবাক হয়েছি। এর আগে এমন ঘটনা দেখিনি।’
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিম উল্লাহ বলেন, ‘সৃজনশীল প্রশ্ন করার কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। সেগুলো যাচাই করে বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এনএস