আ.লীগের সময় ছাড়া কবে গণতন্ত্র ছিল— প্রশ্ন শেখ হাসিনার
১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:১৪
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা এখনো গণতন্ত্রের খোঁজ করেন, মনে হয় যেন উনারা দূরবীন দিয়ে দেখছেন! তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, বাংলাদেশের ৫০ বছরে জাতির পিতার ওই সাড়ে তিন বছর আর আওয়ামী লীগের সময় ছাড়া কবে গণতন্ত্র ছিল? ক্ষমতা তো ছিল ক্যান্টনমেন্টের ভেতর বন্দী। জিয়া-এরশাদ-খালেদা সবার সময়েই তো ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনের জাতীয় কমিটির বৈঠকের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। এদিন সভা পরিচালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গণভবনের ভেতরে ফাঁকা জায়গায় পৃথক প্যান্ডেল করে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় কমিটির সদস্যসহ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
২৪ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আসন্ন ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে এই বর্তমান কমিটির মেয়াদে জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। বৈঠকে আসন্ন সম্মেলনের বাজেট পেশ করা হয় এবং যারা বিভিন্ন সাংগঠনিক অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে আবেদন করেছেন, তাদের বিষয়টিও তোলা হয়। এছাড়া আগামী জাতীয় কাউন্সিল সম্পর্কে জাতীয় কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়। এ সময় দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতান্ত্রিক অর্জন, সাফল্যসহ দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক গুরুত্বও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর দেশের অগ্রযাত্রা থমকে যাওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কিছু র্যাডিকেল পার্টি আছে। কমিউনিস্ট পার্টি বা অন্যান্য পার্টি বাদ দিয়ে যে পার্টিগুলো মিলিটারি ডিক্টেটরদের পকেট থেকে তৈরি হয়েছে যেমন- বিএনপি, জাতীয় পার্টি- সেখানে দেখেন তো গণতন্ত্রের চর্চাটা কোথায়? আর গঠনতন্ত্র মেনে দল পরিচালনা একমাত্র আওয়ামী লীগই করে। আমরা আমাদের গঠনতন্ত্র মেনে সংগঠন করি। এখন পর্যন্ত গঠনতন্ত্র অনুসরণ করি।’ কিন্তু মিলিটারি ডিক্টেটরদের পকেট থেকে যে দল বেরিয়ছে তাদের মধ্যে সেই ধারাটা পাবেন না বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে- তারাই আবার গণতেন্ত্রর কথা বলে। তাদের জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ’ল দিয়ে। তারা আবার আমাদের গণতন্ত্রের ছবক দেয়, পরামর্শ দেয়। আবার গণতন্ত্র নাকি প্রতিষ্ঠা করবে। মার্শাল ’ল দিয়ে, সারারাত কারফিউ দিয়ে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে তারা গণতন্ত্রটা কীভাবে দেয় আর কিসের গণতন্ত্র দেয়- সেটাই আমি বুঝি না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে কেউ কেউ নিজেদের বুদ্ধিজীবী বলে পরিচয় দেয়। তাদের মুখেও শুনি গণতন্ত্র নাকি আনতে হবে দেশে? আমার এখানে প্রশ্ন হচ্ছে- তাহলে কি মিলিটারি ডিক্টেটরদের সময় মার্শাল ’ল দিয়ে যারা রাষ্ট্র চালিয়েছিল সেটাই গণতন্ত্র? ওটাই গণতান্ত্রিক ধারা ছিল নাকি? তারা খোলাসা করে এটা বলতে পারে, কিন্তু সেটা বলে না।’
কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন থেকে সরকার গঠন করেছে; তখন থেকেই এদেশে গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগই জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষা করে, দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি করে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে।’ একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখনই মানুষের অধিকারগুলো নিশ্চিত হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ সময় জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে মানুষ গুমের সংস্কৃতি চালু করার প্রসঙ্গসহ এরশাদ আমলের সংস্কৃতিরও কথা তুলে ধরেন।
খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ৯৬ সালের নির্বাচনে ভোট চুরির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেছিল। এটার সবার মনে রাখা উচিত। তাহলে গণতন্ত্র ছিল কোথায়? জিয়ার আমলেই গণথন্ত্র বা কোথায়? এরশাদের আমলেই বা গণতন্ত্র কোথায়? খালেদা জিয়ার আমলেই বা গণতন্ত্রটা কোথায় ছিল?’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করেছে। জনগণ আমাদের ভোট দিতে রাজি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমাদের ওপর চাপ এলো গ্যাস বিক্রি করতে হবে। একটি বড় দেশের কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করছে। আমরা সেই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করছি, সার কারখানা করছি, পেট্রোল কারখানা করছি। মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে কাজ করছি। সেই গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আর আমাদের পাশের দেশ সেটা কিনবে? এই মুচলেকা আমি দিই নাই, দিতে রাজি হই নাই। যেকারণে, আমাদের সেটার খেসারত দিতে হয়েছিল।’
২০০১ সালের নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী সময়ের অত্যাচারের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এটাকে কি গণতন্ত্র বলবে? এটাকে কী ধরনের গণতন্ত্র? মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল তাদের কারণে? তারপর খালেদা জিয়া ইলেকশন দিয়েছিল? সেই ইলেকশনে কিন্তু কেউ অংশ নেননি। ৪৮ জনের মতো তাদের ঘোষণা করা হল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। কিন্তু জনগণের ভোট চুরির প্রচেষ্টা, মানুষ আবারও রুখে দাঁড়াল। তখনই এমার্জেন্সি জারি হল। শুধু এমার্জেন্সি জারি করা হয়নি, ওই ইলেকশনও বাতিল করা হল। অর্থ্যাৎ খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি দুই দুই বার ভোট চুরির অপরাধেই তাকে সরে যেতে হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালের ইলেকশন নিয়ে তো কেউ কোন তো প্রশ্ন করতে পারে না। সেই ইলেকশনে বিএনপি মাত্র ৩০টা সিট পায়? আর আওয়ামী লীগ সেখানে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা পায়। তাহলে পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোন মুখে প্রশ্ন তোলে? আওয়ামী লীগ কাজের মধ্য দিয়ে জনসমর্থন বাড়িয়েছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছে। জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করেছিল যে, কোনো মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল শুনলে ওই পরিবারের কারও চাকরিও হতো না। এমন একটা ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ আসার পর মুক্তিযোদ্ধারা স্বীকৃতি পেয়েছে। মর্যাদা পেযেছে যে যা দল করুক না কেন? আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিয়েছি। বীরাঙ্গনাদের সম্মান দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নতি করতে পেরেছে। বাংলাদেশ বিশ্বে আজ উন্নয়নের বিস্ময়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ২০০৬ সালের ইলেকশনের আগে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে তালিকা করেছিল। নিশ্চয়ই এ কথা কেউ ভুলে যান নাই। এই ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচনের চেষ্টা করেছিল। ওরা তো জনগণের ভোট চুরি করতে চেয়েছিল। আমার মনে হয়, এদের কাছে ওইটাই গণতন্ত্র। জনগণের ভোট চুরি, জনগণের অর্থ চুরি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, এগুলো থাকলেই তাদের গণতন্ত্র? নইলে গণতন্ত্র খুঁজতে যাবে কেন তারা?
সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসের বীভৎসতায় মানুষ হত্যার ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন না? কোথাও অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষ মেরেছে, সন্ত্রাসী-ছিনতাই-চুরি-ডাকাতি যাদের কাজ ছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরা কোথাও পালিয়েছে নাকি গুম হয়েছে? এ রকম গুমের তালিকা যখন দেয়, যখন আমরা হিসাব বের করি। ৭৬ জনের তালিকা দিয়েছিল। সেখানে দেখা গেল মাত্র ছয় জনের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া সবার খবর পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আসার পর মুক্তিযোদ্ধারা স্বীকৃতি পেয়েছে। যে যা দল করুক না কেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিয়েছি। বীরাঙ্গনাদের সম্মান দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছি বলেই আজ বাংলাদেশ উন্নতি করতে পেরেছে। এদেশ গণতন্ত্রের বাংলাদেশ, উন্নয়নের বাংলাদেশ। বিশ্বে আজ আমরা উন্নয়নের বিস্ময়।’ মাত্র ১৪ বছর আওয়ামী লীগ একটানা ক্ষমতায় বলেই এই পরিবর্তনটা আনা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম