Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঐতিহাসিক মুজিবনগরের আম্রকানন পরিচর্যায় নতুন উদ্যোগ

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৫৮

ঢাকা: ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকাননের পরিচর্যায় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’ এর অধীনে আম্রকাননের ১১৭০টি আমগাছের পরিচর্যা করতে চায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুজিবনগর আম্রকাননের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে বাগানের আমগাছগুলো অযত্ন অবহেলায় পরাগাছায় ভরে গেছে। বাগানে এখন আর আমের দেখাও মেলে না। বেশকিছু গাছ মরেও গেছে। সঠিক পরিচর্যা পেলে বাগানটি থেকে বছরে সাড়ে ৫ কোটি টাকার আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি মুজিবনগরের ঐতিহাসিক আম গাছগুলোও রক্ষা পাবে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ঐতিহাসিক মুজিবনগরে প্রায় ৩৬ একর এলাকা জুড়ে আম্রকাননে ছোট বড় প্রায় ১১৭০টি আম গাছ রয়েছে। ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’ এর তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ আম গাছগুলো বর্তমানে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত এবং পরগাছার কারণে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। তাই ঐতিহাসিক আম গাছগুলো টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে পরিচর্যা করা আশু প্রয়োজন। সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের প্রস্তাবিত ৩য় সংশোধনীতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকাননের পুরনো আম গাছগুলোকে রেজুভেনাশন পদ্ধতির মাধ্যমে দৃষ্টি নন্দনসহ ফল উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।

বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘১১৭০টি গাছ পরিচর্যা করলে কয়েশ টন আম হবে। এক গাছে আম হবে ২০ থেকে ২৫ মণ। প্রায় ১১০০ গাছে উৎপাদন ১১০০ টন এর কম হবে না। কাঁচা আমের দাম ৫০ টাকা কেজি ধরলেও বছরে এই বাগান থেকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে এখন একটি আমও হয় না, কেবল যত্নের অভাবে।’

বিজ্ঞাপন

মৃত বা প্রায় মরতে বসা গাছ রক্ষায় কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো গাছ যদি রিপ্লেস করতে হয় আমরা ওই গাছের ১০টি কলম করব। যে জায়গার গাছটি রিপ্লেস করতে হবে সেখানে প্রথমে একটি কলম রোপণ করে বাকি ৯টি সংরক্ষণ করব। যদি ওই গাছটি মারা যায় সেখানে বাকি ৯ টির একটি রোপণ করব। অর্থাৎ যেখানে যে গাছটি আছে সেই গাছটির জাতই আমরা রক্ষা করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাগানটিতে বিভিন্ন জাতের আম গাছ রয়েছে। আচার করার জন্য ব্রিটিশ রাণী সেখানে এ গাছগুলো রোপণ করেছিলেন। সে কারণে সেখানে একেক গাছের আম একেক জাতের। আমরা প্রত্যেকটি গাছে মার্কিং করব। বাগানের ডিজিটাল সার্ভে করা হবে। প্রত্যেকটি গাছে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের চলমান এই প্রকল্পের সংশোধনীতে এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৭ লাখ টাকা।’

ড. মো. মেহেদী মাসুদ আরও বলেন, ‘মুজিবনগর আম্রকাননের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এর পরিচর্যা অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই গাছগুলোর দেখভালের দায়িত্ব পেলে আর একটি গাছও মারা যাবে না, আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করব। পাশাপাশি বাগানটিতে থেকে আম উৎপাদনে আমরা সর্বাত্মক কাজ করব।’

জানা গেছে, ২০১৫ সালে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’ শুরু করে সরকার। ২০২০ সালের ১০ মার্চ প্রকল্পটির ২য় সংশোধনী অনুমোদন পায়। এখন প্রকল্পটির ৩য় সংশোধনীর পরিকল্পনা চলছে। এরইমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও প্রকল্প স্ট্যায়ারিং কমিটি ৩য় সংশেধানী অনুমোদন করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আগামী ২১ ডিসেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় (পিইসি) তা ওঠার কথা রয়েছে। সেখানে তা অনুমোদন পেলে তা চূড়ান্ত অনুমোনের জন্য একনেকে উঠবে। প্রকল্পটির ২য় সংশোধনী পর্যন্ত ব্যয় ছিল ৪৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ৩য় সংশোধনীতে ২৫৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ৫১টি জেলায় ৪০২টি প্রকল্পটি উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা দাবি করে থাকেন, এ প্রকল্পের প্রভাবে সারাদেশে এখন বছরব্যাপী বিভিন্ন জাতের ফল চাষ হচ্ছে। আর বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকাননের পরিচর্যা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আমবাগান বা বৈদ্যনাথতলাতে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা, পাঠ করা হয় বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। শপথ গ্রহণ এবং ঘোষণাপত্র পাঠের পর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ একটি বিবৃতি পাঠ করেন এবং বৈদ্যনাথ তলার নাম রাখেন মুজিবনগর।

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

আম্রকানন ঐতিহাসিক আমবাগান মুজিবনগর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর