‘ক্ষমতা দখলের পালা বন্ধ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট’
১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৩০
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ; সেই প্রজাতন্ত্রের মালিকদেরই অস্বীকার করে ক্ষমতা দখল হয়েছে। তবে ক্ষমতা দখলের পালা আজ বন্ধ। কারণ, পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রক্রিয়াটা সুপ্রিম কোর্ট অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে বন্ধ করে দিয়েছেন।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। মানুষের জীবনকে উন্নত করা। যেটা আমার বাবার সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়েছিল এদেশে। কোনো কথা নেই, বার্তা নেই- হঠাৎ একজন উর্দি পরে ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়ে গেল। অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশে আইয়ুব খান যেভাবে সেনাপ্রধান থেকে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিল, জিয়াউর রহমানও একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে। আবার জিয়ার মৃত্যুর পর জেনারেল এরশাদও তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে রাষ্ট্রপ্রতি ঘোষণা দিয়ে দিল।’
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ক্ষমতার দখলের পথ বন্ধ হওয়ায় সাহসী পদক্ষেপের জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সবসময় প্রচেষ্টা ছিল সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। তাই তার আর্থিক ব্যবস্থাপনা যেটা আগে ছিল সরকারপ্রধানের হাতে, সেটা সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের হাতে হস্তান্তর করি। আলাদা বাজেট বরাদ্দ দিই। বিধিমালা প্রণয়নের ব্যবস্থা করি।’
বিচার বিভাগের নানা উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বিচারপতি, বিচারক ও আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ দেশে আদালতে বোমা মেরে বিচারক হত্যা করা হয়েছে, আইনজীবীকেও হত্যা করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনাও ঘটেছে। শুধু আমি যে শুধু গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছি তা নয়, আমাদের বিচারকরাও এ থেকে রক্ষা পায়নি।’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
এদিন আইন বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইনজীবীরা যাতে তাদের মেধা, প্রতিভা, সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করেন সেই আশাবাদও ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা তথা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ দেওয়া হয়। আর দলগতভাবে এ পদক পান ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালত। পদকপ্রাপ্তরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।
প্রধান বিচারপ্রতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুকেশকুমার রাসিকভাই শাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এছাড়াও বক্তৃতা করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম