মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়নি ১১ বছরেও
১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:০০
ঢাকা: কচ্ছপ গতিতে চলছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প। এখনও ২৫ উপজেলায় খাস জমি বন্দোবস্ত বা জমি অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি। ফলে তৃতীয় দফায় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। এতে তিন বছরের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যাবে ১১ বছর। তবে এবার ব্যয় বৃদ্ধি না করলেও এর আগে এক দফায় ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া মেয়াদ বাড়ায় অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ মেটানোর জন্য সমন্বয় করা হয়েছে ব্যয়। গত ৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বার অন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জমি হচ্ছে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধা। মানুষ তাদের জমিতে হাত দিতে দেয় না। সময় মতো জমি না পাওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। এছাড়া দেখা যায়, খাস হোক আর যেকোন জমিতে অনেক সময় মাজার, কবরস্থান, মসজিদ, মন্দিরসহ স্পর্শকাতর স্থাপনা থাকলে সেখানে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।’
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এটির বাস্তবায়ন শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো- সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করা।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দাপ্তরিক কার্যক্রম অধিক সুষ্ঠু ও সুচারু ভাবে সম্পন্ন করতে ৪৭০টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা। এছাড়াও তহবিল গঠনের মাধ্যমে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার বিষয়টিও এর সাথে যুক্ত ছিল।
কিন্তু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাঙ্ক্ষিত না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও শেষ না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর আবারও ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ একবছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও শেষ হয়নি কাজ। এবারও ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
এদিকে প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৪৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয় ১ হাজার ২২৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। তবে এরপর আর ব্যয় বাড়ানো হয়নি। কিন্তু এবার নতুন করে দুই বছর মেয়াদ বাড়ার কারণে প্রকল্পে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সংস্থান করতে আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় (এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা) করার আবেদন জানানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। সেই আবেদন অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামজিক অবকাঠামো বিভাগ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য উপযুক্ত খাস জমি পেতে দেরি হচ্ছে। এছাড়া উপযুক্ত স্থানে ভূমি অধিগ্রহণ করতে সময় বেশি লাগছে। এজন্য একবার ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করা হয়েছে। এজন্য প্রথম সংশোধনীর পর একবার ব্যয় ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউনের জন্য দ্বিতীয়বার মেয়াদ বাড়ানো হয় ব্যয় ছাড়াই।
এবার তৃতীয়বারের মতো ব্যয় ছাড়া মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এখনো ২৫টি উপজেলায় খাসজমি বন্দোবস্ত কিংবা ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়নি। একটি উপজেলায় জমি সংক্রান্ত মামলা থাকায় কমপ্লেক্স ভবন তৈরির কাজ করা যাচ্ছে না। প্রকল্পটি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প তাই শতভাগ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতেই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এই বর্ধিত সময়ে প্রকল্প পরিচালনা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদির জন্য অর্থের সংস্থান করতে দ্বিতীয়বার আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অংকের সাশ্রয় হওয়া অর্থ থেকে এই আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শুরু থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৩.৯৬ শতাংশ। সেই সঙ্গে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশ।
সারাবাংলা/জেজে/রমু
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ পরিকল্পনা মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স