গোপীবাগে ৬ খুন: ৯ বছরেও দাখিল হয়নি মামলার প্রতিবেদন
২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৫৪
ঢাকা: ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ওয়ারীর গোপীবাগের বাসায় লুৎফর রহমান ফারুকসহ ছয় জন খুন হন। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত ৯ বছরেও শেষ হয়নি। কবে নাগাত শেষ হবে সেটাও বলতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মামলটিতে এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রায় ৯৭ বার সময় নিয়েছে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
গোপীবাগে পীর লুৎফর রহমান ফারুকসহ ছয় জনকে নির্মমভাবে খুনের বিষয়ে আক্ষেপ করে তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘৯ বছর চলে গেল। এখনও আমার বাবা-ভাইসহ প্রিয়জনদের হত্যার বিচার পেলাম না।’
মামলাটির সর্বশেষ গত ২১ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এ জন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদীর আদালত ২১ ডিসেম্বর (আজ) প্রতিবেদন প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
মামলা সম্পর্কে বাদী আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘এখনও মামলার তদন্তই শেষ হলো না। আর বিচার তো দূরের কথা। মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আসে আবার চেঞ্জ হয়। এভাবেই চলছে মামলা। কবে তদন্ত শেষ হবে, আর কবেই বা বিচার পাব।’
‘বাবা, বড় ভাইকে হারিয়েছি। বাবার পরে ভাইয়ের স্থান। সেটা গোছাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। কিন্তু প্রিয় মানুষদের অভাব অনুভব হয় ক্ষণে ক্ষণে।’
মা সালমা বেগমের প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, স্বামী-সন্তান হারানোর কষ্ট কেউ ভুলতে পারে না। মায়ের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। মা এখনও কাঁদেন তাদের জন্য। আশায় আছেন, হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে মামলার তদন্ত চলছে। এখনও খুনের আসল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। কোনো ক্লু নেই। কাজেই এ মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্তের দায়িত্বে আসার পর কারাগারে আটক আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কিন্তু তারা কেউ এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মুখ খুলছে না। এ মামলার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আশা করি শীঘ্রই সব কিছু প্রকাশ্যে আসবে।’
মামলাটির এজাহার থেকে জানা যায়, নিহত লুৎফর রহমান ফারুক পীর ছিলেন। এ কারণে তার অনেক মুরিদ ছিলেন। যারা তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তিনি নিজেকে সবার কাছে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে দাবি করতেন। যার কারণে হত্যার আগেও রাজধানীর বিবির বাগিচায় লুৎফর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয় এবং গেন্ডারিয়া ও গোপীবাগে হামলার চেষ্টা করা হয়।
২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর মাগরিবের নামাজের আগে ১০-১২ জন লোক লুৎফর রহমান ফারুকের কাছে আসে। তারা জানায় ধর্মীয় বিষয়ে জানার জন্য এসেছে। এ সময় লুৎফর রহমান তাদের সবাইকে দরবার ঘরে বসতে দিয়ে মুরিদ শাহিনকে খাবার আনতে বাজারে পাঠায়। এরই মধ্যে সন্ধ্যা ৬টার দিকে লুৎফর রহমান ফারুক, তার বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, তার মুরিদ শাহিন, মজিবুর, মঞ্জুরুল আলম, রাসেল ভূইয়া-সবাইকে মুখে স্কটেপ দিয়ে মুখ আটকে ও হাত-পা বেঁধে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় পীর লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক ওয়ারী থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার নথী থেকে জানা গেছে, মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা হলেন- হাদিসুর রহমান সাগর, জুলফিকার বিন সাদ ওরফে আবু ওয়াক্কাস, মামুনুর রশীদ রিপন, সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম ওরফে জিতু ওরফে নিরব ওরফে নিয়ন ওরফে হিমু, সৈয়দ আল আমিন, তরিকুল ইসলাম, আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আ. হাদী, মো. আজমির অমিত, মো. গোলাম সরোয়ার, জাহাঙ্গীর হোসেন ও রফিকুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে আজমির অমিত ও গোলাম সরোয়ার জামিনে আছেন। অপর ১০ আসামি কারাগারে আটক রয়েছে।
সারাবাংলা/এআই/ইআ