Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভোটের আগে রংপুরের সাবেক মেয়র মোস্তফার আয় নিয়ে প্রশ্ন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:০৪

রংপুর: রংপুর সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার হলফনামায় দেওয়া আয়ের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। ২০১৭ সালের নির্বাচনের হলফনামার সঙ্গে ২০২২ সালের নির্বাচনের হলফনামায় আয়ের হিসাব অমিল থাকায় সংস্থাটি এই প্রশ্ন তুলেছে।

এসময় অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন, সরকার, রাজনৈতিক দল, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরির পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন ও অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আহ্বানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। আগামী ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

সংস্থাটি প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণের পর জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার হলফনামায় দেওয়া তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জানানো হয়, ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি প্রদত্ত হলফনামায় তার নিজের আয় দেখিয়েছিলেন ১০ লাখ ১২ হাজার ২১২ টাকা সেখানে নির্ভরশীলদের কোন আয় উল্লেখ করেনি।

কিন্তু এবারের সিটি নির্বাচনে তিনি নিজের কোন আয় উল্লেখ না করলেও নির্ভরশীলদের আয়ের ঘরে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন; যেখানে প্রার্থী নিজের ও নির্ভরশীলদের আয় যোগ করে হিসাব করলে জাপা প্রার্থীর বর্তমানে আয় বেড়েছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৭২৮ টাকা যা শতকরা হারে ১০৩ শতাংশ আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটি প্রশ্ন রাখেন জাপা প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কি কোন আয় কিংবা মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কোনো বেতন-ভাতা গ্রহণ করেননি।

বিজ্ঞাপন

তিনি ২০১৭ ও ২০২২ সালের রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ ৫৩ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী অর্থাৎ ৬৫ জন প্রার্থী ২০১৭ ও ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এই ৬৩ জন প্রার্থীর ২০১৭ সালের হলফনামার সঙ্গে ২০২২ সালের হলফনামায় তথ্য তুলনা করে দেখা যায় ৪২ জন প্রার্থীর আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, সাত জনের আয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি, ১০ জনের আয় কমেছে। চারজন ২০২২ সালের হলফনামায় আয় উল্লেখ করেননি। এ বিবেচনায় নিলে বলা যায় যে ১৪ জনের আয় কমেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৬৩ জনের সম্পদের তথ্য তুলনা করে দেখা যায়, ৩৭ জন প্রার্থীর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে, ১০ জনের সম্পদের কোন পরিবর্তন হয়নি, ১৫ জনের সম্পদ হ্রাস পেয়েছে, একজন ২০২২ সালের হলফনামায় সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেননি। তাকে বিবেচনায় নিলে বলা যায় যে ১৬ জনের সম্পদ হ্রাস পেয়েছে।’

নির্বাচনের সকল প্রার্থীদের হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে চারজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, তিনজনের স্নাতক, একজনের এইচএসসি এবং একজনের এসএসসির নিচে। মোট ৩৩ টি সাধারণ ওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া ১৭৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৬৪ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে, ৩৬ জনের এসএসসি এবং ২৭ জনের এইচএসসি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ ও ১৭ জন। ৪ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেনি। এছাড়া, মোট ১১ টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৬৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে এসএসসির কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর সংখ্যা সংখ্যা ২৮ জন, ১৭ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি এবং আটজনের এইচএসসি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন করে।’

নির্বাচনের সকল প্রার্থীদের হলফনামায় পেশা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেন, ৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে চারজনই ব্যবসায়ী। চাকরিজীবী প্রার্থী আছেন দু’জন যার মধ্যে একজনের পেশা শিক্ষকতা। আইনজীবী আছেন একজন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেশার ঘরে উল্লেখ করেছেন ‘সাবেক মেয়র রংপুর সিটি কর্পোরেশন’। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া একজন আইনজীবী। এদিকে ১৭৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১২৯ জনের পেশাই ব্যবসা। কৃষির সাথে সম্পৃক্ত আছেন ২০ জন। ১৭ জন আছেন চাকরিজীবী। পেশার ঘর পূরণ করেনি ৬ জন। এছাড়া ৬৭ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর অধিকাংশই গৃহিণী। ১৩ জনের পেশা ব্যবসা, ৬ জন পেশার ঘর পূরণ করেননি।

এছাড়া, ৯ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বর্তমানে মামলা আছে কেবল খেলাফত মজলিসের প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মণ্ডলের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। এদিকে ১৭৮ জন সাধারণের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৪২ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা চলমান রয়েছে আর ৬৭ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারি মামলা আছে।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুজনের মহানগর কমিটির সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম উদ্দীন প্রমুখ।

সারাবাংলা/ইআ

রসিক নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর