Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দ্বাদশ জয়ের টার্গেটে আ.লীগের সম্মেলনে ‘চমক’ থাকছে

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২২ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:৩১

ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন ২৪ডিসেম্বর। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় সাদামাটা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাদামাটা সম্মেলনে চমক বা নতুনত্ব কী থাকছে— তা নিয়ে দলীয় ঘরানায় জল্পনা-কল্পনা জোরদার হচ্ছে। ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ের সম্মেলনে দলের সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১০ম বারের মতো ১১তমেও অপরিহার্য। সেটা মাথায় রেখেই জাতীয় সম্মেলনের সব প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে দলটি।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের তৃতীয় মেয়াদে হ্যাটট্রিক করছেন নাকি নতুন কেউ আসছেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এই পদে নতুন কেউ এলে সেটি চমক হবে বলেই মনে করছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। সেইসঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে মাথায় রেখে দলের সাংগঠনিক কাঠামোয় সম্পাদকমণ্ডলীতে গুরুত্বপূর্ণ রদবদল হতে যাচ্ছে— এমনটিই জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বড় ধরনের রদবদল হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বিগত সময়ের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে ঘিরে নেতাকর্মীর মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। এ নিয়ে দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা জানান, এ বিষয়ে যথাসময়ে যথার্থ সিদ্ধান্ত নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কয়েক যুগ ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আজকের পথে নিয়ে এসেছেন। আগামীতেও তিনি এভাবেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তাই যথাসময়েই তিনি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দলে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

গত ২৮ অক্টোবর গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়। ২৪ ডিসেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় সাড়ে আট হাজার কাউন্সিলর এবং তার দ্বিগুণ সমসংখ্যক ডেলিগেট ও অতিথি সম্মেলনে উপস্থিত হবেন। মূল মঞ্চের পাশে পতাকা স্ট্যান্ড করা হয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সকল সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সঙ্গীতের তালে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ সময় শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে।

এর পর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এর পর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে দ্বিতীয় অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে।

বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দূতাবাসপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে এবার বিদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও কূটনৈতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১১টি সম্মেলন প্রস্তুতি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া এরই মধ্যে সম্মেলনের পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়কের বক্তব্য ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরির কাজও প্রায় শেষের দিকে। তিন স্তরের মঞ্চের প্রথম সারিতে দলীয় প্রধানের সঙ্গে বসবেন দলের সিনিয়র নেতারা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারিতে বসবেন অন্যরা। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতারাও মঞ্চে থাকবেন।

প্রসঙ্গত, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২১টি জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করেছে। ইতোপূর্বে ২১টি সম্মেলনের মধ্যে পাকিস্তান আমলে আটটি আর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৩টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় প্রয়োজনে দলটি বিভিন্ন সময়ে সাতটি বিশেষ সম্মেলন করেছে। সম্মেলনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বাধিক ১০ম বারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু টানা চার বার দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার আগে, তিনি চার বার সাধারণ সম্পাদক এবং প্রতিষ্ঠার সময়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছে।

নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনগুলোর শীর্ষ পদে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। সেজন্য ধারণা করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও নতুন কেউ আসতে পারে? সম্মেলনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জল্পনা-কল্পনার জোরদার হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিদর্শনে সাংবাদিকদের সামনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই সম্মেলনে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত উপস্থিতি হবে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি। আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা জাতির কাছে অঙ্গীকার রেখেছি। আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাব।’

সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে কিনা?— এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার জানা মতে দলে সেক্রেটারি হওয়ার মতে ১০ জন অভিজ্ঞ নেতা আছেন। কে হবেন সাধারণ সম্পাদক সেটা নেত্রীর ইচ্ছা এবং কাউন্সিলরদের মতামত। সবকিছুর প্রতিফলন ঘটবে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে।

নেতাদের মতে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিক গতিশীল গ্রহণযোগ্য নেতাদেরই সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে আসতে যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমানের নাম শেষ সময়ে আলোচনায় আছে।

সম্মেলন ঘিরে প্রত্যাশা ও চমকের কথা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সম্মেলনই হলো একটি চমক। স্বাভাবিকভাবেই এই সম্মেলনে আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নেতা নির্বাচনই তো আওয়ামী লীগের মতো একটা পার্টির মূল উদ্দেশ্য নয়। সম্মেলেন আমাদের নেত্রী নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী করণীয় নিয়ে পার্টিকে একটি গাইডলাইন দিয়ে থাকেন। এই কাউন্সিলেও তিনি একটি গাইডলাইন দেবেন। সেই গাইডলাইন অনুসারে পার্টি আগামী তিন বছর চলবে। কাজেই এটিই একটি চমক। সেখানে তিনি আগামী নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে কথা বলবেন।’

সম্মেলন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্মেলনে চমক থাকবে। আয়োজন খুবই সাদামাটা, কিন্তু উপস্থিতি হবে ব্যাপক। বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও সংকট মোকাবিলা করছে। সেই সংকট মোকাবিলার অংশ হিসেবেই আমাদের সম্মেলনের ব্যয়ভার কমিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সম্মেলনের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। কারণ, এই সম্মেলনকে ঘিরেই আগামী নির্বাচনের জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি। প্রত্যেক সদস্যের কর্মকাণ্ড নেত্রীর নখদর্পণে। সুতরাং, উনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে, কোন জায়গায় কাজে লাগাবেন। কে কোন জায়গার জন্য বেশি যোগ্য বিবেচিত হবেন। এই ব্যাপারগুলো নেত্রীই ঠিক করে থাকেন।’

জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে তৃণমূল সম্মেলন কার্যক্রম শেষ করেছে দলটি। তিন বছরেরও বেশি সময়ে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬৮টির সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ৬০০ উপজেলা, থানা ও পৌর শাখার মধ্যে ৭০টির মতো শাখার সম্মেলন করা যায়নি। বাকি ১০ জেলাসহ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সব শাখার সম্মেলন জাতীয় কাউন্সিলের পর সম্পন্ন করবে।

২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের আগে ওই বছরের নভেম্বরে তৃণমূল সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হয়। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে দলকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করাই ছিল সম্মেলন কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য। করোনা অতিমারির সংশয় পেরিয়ে ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে আটটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং আট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল করার লক্ষ্যে তিন বছর ধরে কার্যক্রম করে আওয়ামী লীগ।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সম্মেলন সংসদ নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর