Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টিকিট কালোবাজারিতে রেলের ২ কর্মকর্তা জড়িত: র‌্যাব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৪৮

ঢাকা: টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের দুই কর্মকর্তার নাম পাওয়ার কথা জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)। ওই দুই কর্মকর্তার নামে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে টিকাটুলি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারকৃতরা হলেন— মূলহোতা কিশোরগঞ্জের আব্দুল হাকিম (৩৭), শরীয়তপুরের জয়নাল আবেদীন (৫৯), কুমিল্লার শামীম ওরফে সম্রাট (২৭), জামালপুরের আব্দুল জলিল (১৯), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খোকন মিয়া (৫৫) ও কিশোরগঞ্জের উজ্জল ভূঁইয়া (৩৩)। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের কাছ থেকে ২১টি কালোবাজারি টিকিট, মোবাইল ফোন ৫টি, সিমকার্ড ৩টি, মানিব্যাগ ২টি, আইডিকার্ড একটি এবং টিকিট বিক্রয়ের নগদ ৯ হাজার ৮১৮ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের সিও বলেন, গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রেলের দুই কর্মকর্তার নাম এসেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছি, তদন্ত করছি। যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, চক্রটির মূলেহোতা আব্দুল হাকিম। তিনি ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে থাকেন। এরপর তা দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে বিক্রি করতেন। তিনি মূলত তূর্ণা নিশিথা, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, চট্টলা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে থাকেন। এই চক্রটির আরও সদস্য ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ৫-৭ জন করে সক্রিয় সদস্য রয়েছে। যারা তাদের টার্গেটকৃত ট্রেনসমূহের টিকিট কালোবাজারি করে সাধারণ যাত্রীদের নিকট চড়াদামে তা বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে।

বিজ্ঞাপন

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চক্রের মূলহোতা আব্দুল হাকিম নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করে এবং রেলস্টেশনে কর্মরত অসাধু একটি চক্রের যোগসাজসে ২০১৮ সাল থেকে টিকেট কালোবাজারির ব্যবসা শুরু করে। তিনি নিজে টিকেট কাটার কাজ না করে তার অধিনস্ত অপরাপর ৪/৫ জন কর্মী দ্বারা বিভিন্ন মাধ্যমে টিকেট সংগ্রহ করে চড়ামূল্যে তা বিক্রি করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালালেও কখনো গ্রেফতার হয়নি তিনি। কারণ অত্যন্ত সুকৌশলে কর্মীদের দ্বারা দীর্ঘদিন যাবৎ টিকেট চোরাকারবারের ব্যবসাটি চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ চক্রের মূলহোতা হাকিমের নেতৃত্বে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে সাধারণ যাত্রীদের নিকট হতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। তারা কমলাপুর রেলস্টেশন হতে বিভিন্ন জেলার রেলস্টেশন গুলোতেও তাদের এজেন্টদের সঙ্গে যোগসাজসের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।

আরও জানা গেছে, রেলস্টেশনে যে পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করে টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির মূলহোতা আব্দুল হাকিম এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে একাধিক টিকিট সংগ্রহ করে। এমনকি অনেক সময় তারা রিক্সাওয়ালা, কুলি ও দিনমজুরদের অল্প টাকার বিনিময়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে তাদের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। সংগ্রকৃত টিকিট নিয়ে তারা রেলস্টেশনের ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে। রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের নিকট তাদের কালোবাজারি টিকিট বিক্রির জন্য ঘুরতে থাকেন।

ট্রেন ছাড়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে যাত্রী সমাগম শুরু হলে তাদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। তারা তখন দিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এটা তাদের স্বাভাবিক সময়ের কার্যক্রম। কিন্তু ইদসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে তারা এক একটি টিকিট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রয় করে থাকে। তারা ইদের ছুটিকে কেন্দ্র করে ৫০০ টাকার টিকিট সর্বোচ্চ ২০০০ টাকায়ও বিক্রি করেছে বলে জানায়। তারা প্রত্যেকে দীর্ঘদিন যাবৎ এই পেশার মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ এবং যাবতীয় খরচ চালিয়ে আসছে বলে জানা গেছে।

গ্রেফতারকৃত মূলহোতা হাকিম জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাকিমের ক্লায়েন্ট রয়েছে। যাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা মানুষের সুযোগ বুঝে চড়ামূল্যে কখনো দ্বিগুণ বা তিনগুণ মূল্যে টিকেটগুলো বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। এভাবেই দীর্ঘ ৫ বছর ধরে দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে তার কালোবাজারির ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তিনি।

গ্রেফতারকৃত চক্রের সদস্য খোকন মিয়ার নামে টিকিট কালোবাজারির দায়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট ৫টি মামলা রয়েছে। এর আগে গত ২০ অক্টোবরে তাকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব-৩। ওই সময় ৩২ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান তিনি। জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও টিকিট কালোবাজারির কাজে লিপ্ত হন খোকন।

গ্রেফতার হওয়া অপর আসামি শামীমের নামে মাদক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরা পড়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটেন। এ চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়াশি অভিযানে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে পরবর্তী সময়ে পুনরায় এই টিকিট কালোবাজারির ব্যাবসার সঙ্গেই যুক্ত হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে র‌্যাব-৩।

সারাবাংলা/ইউজে/এনএস

টিকিট কালোবাজারি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর