উৎসব আমেজে আওয়ামী লীগ, অনুভূতির জাতীয় সম্মেলন শনিবার
২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০০:১৪
ঢাকা: করোনা অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় সংশয়-সংকটের পথচলার গতিতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাঠে জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে এবার ২২তম জাতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। সম্মেলন আমেজে রাজধানীমুখী এখন সারাদেশের নেতাকর্মীরা। দলের সভাপতি হিসাবে এবারও স্বপদে বহাল থাকছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় সাদামাটা আয়োজনে অনুভূতির সম্মেলন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। সম্মেলনে চমক বা নতুনত্ব কী? নতুন মুখ কারা আসছে, কারা বাদ পড়ছে; তা নিয়ে দলীয় ঘরানায় বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা জোরদার হচ্ছে।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর মঞ্চে আসন গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। সম্মেলন মঞ্চে সভাপতির আসন গ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাযনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদদের ১২০ জন মঞ্চে আসন গ্রহণ করবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দলীয় সংগীত, জাতীয় সংগীত নৃত্য পরিবেশনাসহ ২৫ মিনিটব্যাপী আয়োজন রয়েছে। এরপর পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ হবে। শোক প্রস্তাব পাঠ ও গ্রহণের সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে শোক প্রস্তাব পাঠ করবেন দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম স্বাগত বক্তব্য রাখবেন। সাধারণ সস্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ দেবেন। তারপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘোষণা হবে।
দ্বিতীয় অধিবেশন বিকেল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে হবে। এতে ৭ হাজার কাউন্সিলর এতে অংশ নেবেন। এরপর সম্মেলনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অধিবেশন মঞ্চে আসন গ্রহণ করবেন। সভাপতি কর্তৃক নির্ধারিত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ হবে। প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করবেন কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান।
গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করবেন গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। ঘোষণাপত্রের সংশোধনী উত্থাপন করবেন আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। মাননীয় সভাপতির সংসদ নির্বাচন ও কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা। নির্বাচন কমিশনের আসন গ্রহণ। তিন সদস্য বিশিষ্ট সদস্য নির্বাচন কমিশন মঞ্চে আসন গ্রহণ করবেন।
এ সময় আগে থেকে যারা মঞ্চে ছিলেন তারা নিচে নেমে আসন গ্রহণ করবেন। এরপর নির্বাচন কমিশনের অধীনে সম্মেলনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নতুন নাম প্রস্তাব ও সমর্থন সম্পন্ন শেষে পুনরায় দায়িত্ব ও আসন গ্রহণ সম্পন্ন হবে। পুনরায় সভাপতি কতৃর্ক সভাপতি ও সম্পাদমণ্ডলীর নাম প্রস্তাব, সভাপতিমণ্ডলীর পরামর্শে কাযনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্বাচন করা হবে। মাননীয় সভাপতি কর্তৃক উপদেষ্টা পরিষদ ও সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হবে। এরপর সভাপতির সমাপনী ভাষণ শেষে কাউন্সিল অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা হবে।
সম্মেলনের সাজ-সজ্জার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মঞ্চ ও সাজ-সজ্জা উপকমিটির সদস্য সচিব ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ। এটি তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। মূল মঞ্চে চার ভাগে চেয়ার সাজানো হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলইডি মনিটর থাকবে, যেখানে ভিডিওচিত্রে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে।’
তিনি জানান, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সাদামাটা সম্মেলনে এ বছর বিদেশিদের দাওয়াত করা হচ্ছে না। কেবলমাত্র বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি দূতাবাস কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। মূল মঞ্চের পাশে পতাকা স্টান্ড করা হয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সকল সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সংগীতের তালে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবে। সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে ১১টি সম্মেলন প্রস্তুতি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাযনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে মুলতবি ঘোষণা করেন দলটির সভাপতি। শনিবার জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে কাউন্সিল অধিবেশন শুরুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বিদায়ী কার্যনির্বাহী সংসদের এ বৈঠক মুলতবি থাকবে। গত ২৮ অক্টোবর গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, এবারের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তৃতীয় মেয়াদে হ্যাটট্রিক করছেন নাকি নতুন কেউ আসছেন তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে। ‘সাধারণ সম্পাদক’ হিসেবে নতুন কেউ আগামী সম্মেলনে নির্বাচিত হলে দলটির জন্য এটিই হবে বড় চমক বলে মনে করছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জিং হিসাব মাথায় রেখে দলের সাংগঠনিক কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকমণ্ডলীর পদগুলোতে রদবদল হচ্ছে, এমনটিই আভাস দিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বড় বড় ধরনের রদবদল হতে পারে বলে মনে করছেন। জাতীয় চার নেতার পরিবারের মধ্যে বাকি পরিবারের দুই সদস্যের অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে এবারের সম্মেলনে। সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর পরিবারের কেউ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পদে আসতে পারেন।
বিগত সময়কার সম্মেলনের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে ঘিরে নেতাকর্মীর মধ্যে চলছে নানা আলোচনা রয়েছে। এ ব্যাপারে দলটির নীতি-নির্ধারকরা জানান, নেত্রী জানেন, কখন কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কয়েক যুগ ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আজকের পথে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন, আগামীতেও এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে আসছেন কি না তা আওয়ামী লীগ সভাপতির সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে সম্মেলনের দাওয়াত দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এরই মধ্যে সম্মেলনের পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। থিম সং বানানো হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ (বিশেষ দাওয়াত কার্ডধারী), বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিগণ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, জাতীয় সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (আইইবি) সংলগ্ন অথবা ‘শিখা চিরন্তন’ গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। আর সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকল কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাংলা একাডেমি, রমনা কালী মন্দির, টিএসসি ও চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে বুধবার থেকে আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক জেলা-মহানগর শাখার কাউন্সিলর বা ডেলিগেট কার্ড বিতরণ শুরু করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা তাদের স্বাক্ষরিত চিঠিসহ মনোনীত প্রতিনিধিরা কাউন্সিলর ও ডেলিগেট কার্ড সংগ্রহ করেন।
জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে তৃণমূল সম্মেলন কার্যক্রম শেষ করেছে দলটি। তিন বছরেরও বেশি সময়ে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬৮টির সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে ৬০০ উপজেলা, থানা ও পৌর শাখার মধ্যে ৭০টির মতো শাখার সম্মেলন করা যায়নি। বাকি ১০ জেলাসহ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সব শাখার সম্মেলন জাতীয় কাউন্সিলের পর সম্পন্ন করবে। ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের আগে ওই বছরের নভেম্বরে তৃণমূল সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হয়। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে দলকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করাই ছিল সম্মেলন কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য।
করোনা অতিমারির সংশয় পেরিয়ে ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে আটটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং আট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল করার লক্ষ্যে তিন বছর ধরে কার্যক্রম চালায় আওয়ামী লীগ।
পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে যে দলটির প্রতিষ্ঠা, সেই দলটি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১০ তলা নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেছে। বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনার সুযোগ্য, প্রাজ্ঞ, কৌশলী ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দলটি টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আগামী নির্বাচনেও জয়লাভের অঙ্গীকারে নিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত হবে ঘোষণাপত্রে। যা আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় ইশতেহার হিসাবে জনগণের সামনে স্মার্ট বাংলাদেশে বিনিমার্ণের প্রত্যয়নামা হবে। সময়ের অবিরত পথচলায় আরেকটি‘অনুভূতি’র সম্মেলনের দ্বারপ্রান্তে এখন আওয়ামী লীগ। রাত পোহালেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সূচনা হবে কাউন্সিলের।
সারাবাংলা/এনআর/একে