রাজাকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নে আরও ৬ মাস লাগবে
২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৩০
ঢাকা: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে শব্দ দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও ঘৃণা ছড়িয়েছে এবং এখনো ছড়াচ্ছে তা হলো ‘রাজাকার’। রাজাকার একটি আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ সেচ্ছাসেবক। ওই সময়ে রাজাকার, আলবদর, আল-শামসসহ নানান নামে দল গঠন করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ করেছেন বাংলাদেশের কিছু সংখ্যক স্বাধীনতাবিরোধী মানুষ। যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধীতা করেছে। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি রাজকারদেরও একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির দাবি ওঠে। সে দাবি পূরণে সরকার কাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করা হবে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে শান্তি কমিটির আওতায় রাজাকাররা কাজ করতো। একাত্তরে এই বাহিনীতে ৫০ হাজার সদস্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করতো, যারা মাসিক ভাতাও পেতেন। আবার কেউ কেউ সেচ্ছাশ্রমে কাজ করতেন। এ প্রসঙ্গে গবেষক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, ওই সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিতেই সহায়তা করতেন না তারা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধও করতেন। লুটপাটও করতেন। ওই সময়ে পাকিস্তানিদের সহায়তা দিতে বেশ কয়েকটি সংগঠন গড়ে ওঠে। রাজাকার, আলবদর, আল শামস নামে গঠিত সংগঠনগুলোর পেছনে ছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে।
জানা যায়, এদের মধ্যে অন্যতম ছিল জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, মুসলিম লীগ নেতা খাজা খয়ের উদ্দীন।
এদিকে স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা কয়েক দফা তৈরির পর গেল বছর চূড়ান্ত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন সময় রাজাকারদের তালিকা তৈরিরও দাবি ওঠে। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যার মধ্যে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নামও। যে কারণে ওই তালিকা নিয়ে নানা মহলে ব্যাপক সমালোচনায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে মুক্তিযু্দ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সে তালিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
তখন জানানো হয়েছিল, ২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবসের আগেই নতুন করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হবে। সে কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় ওই ধরনের তালিকা প্রকাশ করার এখতিয়ার নেই সরকারের। যে কারণে ওই কার্যক্রম সেখানেই থেমে যায়। এরপর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল- জামুকা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আইনটি সংশোধন করে ফের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই সময়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকও বলেছিলেন আইনটি সংশোধন হলে রাজাকারদের তালিকা প্রণয়নে আরো কোনো বাধা থাকবে না।
জামুকা সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য শাহজাহান খানের নেতৃত্বে গঠিত রাজাকারদের তালিকা তৈরিতে একটি উপ-কমিটি কাজ করছে। এই কমিটি রাজাকারের তালিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া ও প্রকাশের বিষয় নির্ধারণ করবে।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে জানান, রাজকারদের তালিকা তৈরির জন্য উপ-কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছেন। নিশ্চয়ই তারা এবার নির্ভুল একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এ প্রসঙ্গে উপ-কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটু নির্ভুল তালিকা যাতে প্রণয়ন করা যায় সেজন্য বিষয়টি নিয়ে সতর্কভাবে কাজ করা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, নব্বুইয়ের দশকের শেষ দিকে রাজাকারের তালিকা প্রণয়নের দাবি প্রথম উত্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরী। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে রাজাকারদের তালিকা তৈরির বিষয়টি সামনে আসে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সব সময় রাজাকারদের তালিকা তৈরির জোর দাবি জানিয়ে আসছিলো। এরপর অন্যান্য মহল থেকেও এ দাবি ওঠে। আলোচনা হয় সংসদেও। এরপর এই তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিজয় বিশদের অন্যান্য সংবাদ:
- ইতিহাস লেখা আছে জাদুঘরে
- মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়নি ১১ বছরেও
- কুল্লাপাথার হতে পারে ঐতিহাসিক স্থান
- রাজাকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নে আরও ৬ মাস লাগবে
- নাসিরকোট স্মৃতিসৌধ নতুন প্রজন্মের পথপ্রদর্শক
সারাবাংলা/জেআর/রমু