নতুন ‘মুড়িকাটা’য় কমছে পুরনো পেঁয়াজের দাম
১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৩:১২
এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
শীতের মৌসুমে বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন পেঁয়াজ। ব্যবসায়ীদের কাছে এ পেঁয়াজ ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ নামে পরিচিত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মুড়িকাটা পেয়াজ আসতে শুরু করায় পুরনো পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।
‘পুরনো দেশি পেঁয়াজ’ বাজারে নেই বললেই চলে। যাদের কাছে স্টক রয়েছে, তারা এই পেঁয়াজ বিক্রি করছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। একইসঙ্গে কমতে শুরু করেছে দামও। নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে।
পাইকারি বিক্রেতা ও উৎপাদনের শীর্ষে থাকা কয়েকটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের আগাম বন্যা ছাড়াও শীতের সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে উৎপাদনের। এছাড়া ভারত থেকে পূর্বের বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। ‘সময় শেষ হওয়া’ ও ভারতীয় পেঁয়াজের অধিক আমদানির কারণেই পুরনো দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি বলে মনে করেন বিক্রেতারা।
ক্রেতারা বলছেন, ‘পেঁয়াজ নিয়ে এ আবার কোন ডাকাতি!’ তবে কেউ কেউ বলছেন, দাম বেশি হলেও কিনতে তো হবে। শুক্রবার সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পুরনো দেশি পেঁয়াজের কোনো হদিস নেই। সেখানে এসেছে নতুন দেশি পেঁয়াজ। পাইকারি বাজারে সাধারণত রাতে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও শুক্রবার দিনেও ব্যস্ত দেখা গেছে অনেক বিক্রেতাকে। কেউ কেউ আবার নতুন করে পেঁয়াজ আনার জন্যে জেলা শহরগুলোর বাজারেও গিয়েছেন। আবার কেউ রয়েছেন পেঁয়াজের পরিচর্যায় ব্যস্ত।
৮ বছর ধরে কারওয়ানবাজারের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের ব্যবসা করছেন জামালপুরের শহিদুল ইসলাম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, পুরনো দেশি পেঁয়াজ শেষ। বাজারে এখন নতুন পেঁয়াজ এসেছে। নতুন দেশি পেঁয়াজ আমরা ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। আর ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।
তিনি বলেন, এ বছর ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি অনেক বেশি হয়েছে। তবে দুইতিন দিন আগেও বাজারে পুরনো পেঁয়াজ ছিল। তখন আমরা তা বিক্রি করেছি ১২০ টাকা কেজিতে। এই পাইকারি বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টি দোকান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী ও মানিকগঞ্জ থেকেই এখানে বেশি পেঁয়াজ আসে। একই বাজারে ১২ বছর ধরে ব্যবসা করেন জামালপুরের জগলু। তার দোকানেও পুরনো দেশি পেঁয়াজের দেখা মিলে নি। কথা হলে তিনি জানান, তারা ৮০ টাকা কেজিতে নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। ৪ বছর ধরে চাচার সঙ্গে পেঁয়াজের ব্যবসা দেখছেন জামালপুরের সুজন। তিনি জানান, ৪৮০ টাকা পাল্লায় নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এখানে সবাই জামালপুরের কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, ‘এখানের শতকরা ৮০ জনই জামালপুরের।’
মহাখালীর আরজতপাড়া বউ বাজারের ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানেই পুরাতন দেশি পেঁয়াজ নেই। যেসব দোকানে আছে তারা দাম হাঁকছে ১৪০ টাকা করে। পেয়াজের এমন দাম শুনে আরজতপাড়া থেকে বাজারে আসা এক নারী ওই দোকানিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘পেঁয়াজ নিয়ে এ আবার কোন ডাকাতি!’ বিজয় সরণীর কলমিলতা বাজারে দেখা গেছে, কোন কোন দোকানে এখনও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দাম রাখা হচ্ছে ১৩০ টাকা। আর কাওরান বাজারের খুচরা বাজারে পুরনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। আর ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৮০ টাকা।
সেখানে কথা হলে ৩ বছর ধরে ব্যবসা করা খুচরা দোকানি সাব্বির বলেন, দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, পুরাতন ১২০ টাকা ও ভারতীয় ৮০ টাকা। পাশের দোকানি মামুনকে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, পেঁয়াজ কিনতে কেজি প্রতি এখন তাদের ১০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। তাই দাম বেশি।
ফার্মগেট থেকে কারওয়ানবাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছিলেন মো. সোহেল। পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে কোন বেগ পোহাতে হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দাম বেশি। তবু বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। কারণ ভারতীয় পেঁয়াজে তেমন স্বাদ নেই।’
এদিকে পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- বাজারে এখন নতুন পেঁয়াজ উঠায় পুরনো পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। পাবনা প্রতিনিধি জানান, বন্যার কারণে চলতি বছর যমুনা ও পদ্মার চরে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। অনেক কৃষক যথাসময়ে পেঁয়াজের দানা বপন করতে পারেননি। এছাড়া নভেম্বরের শেষদিকে জলাবদ্ধতার কারণেও উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, অঞ্চলটিতে এখনও পেঁয়াজের উৎপাদন শুরু হয়নি। আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে খুচরা বাজারে এখন ৬৫ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারী বাজারে ৬০ টাকা।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদ ড. এম আসাদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, চলতি বছর বারবার বৃষ্টি হওয়ার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আমদানিকারকরা হয়ত এ বিষয়টি বুঝেই সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকার বা বিরোধী দল কারোই মাথাব্যথা নেই।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ কিন্তু আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। যার আর কোন খাবার জুটে না, এক বেলা পান্তা আর কাঁচামরিচ দিয়ে ভাত খাবে, সেও কিন্তু সকালে কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে ভাত খায়। অথচ যে ৯টি ক্রিটিক্যাল কমোডিটি আছে ( যেমন চাল ও গম), তার মধ্যেও কিন্তু পেঁয়াজ নেই। পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারো ভাবনা নেই বলেই এমনটি হচ্ছে বলে তার মত।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে