ঢাকা: জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিতা আপনাকে কথা দিলাম, আপনার জনগণ কখনো অভ্যুক্ত থাকবে না। আপনি আজকে নেই। আপনার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়ে জনগণের পাশে থেকে এই জনগণকে উন্নত জীবন দেব। যত অশুভ শক্তি আমাদের বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র করুক। বাঙালি, বাঙালি হিসেবেই এগিয়ে যাবে অগ্রযাত্রার পথে।’
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে বাধা করোনা, আর যুদ্ধ। এজন্য যুদ্ধ চাই না, স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) চাই না— এগুলো বন্ধ করেন। সকল দেশ স্বাধীন, স্বাধীনভাবে তার চলার অধিকার আছে। এই অধিকার সকল দেশের থাকতে হবে। যুদ্ধ মানুষের ক্ষতি করে। যুদ্ধের ভয়াবহতা কি তা আমরা জানি। ৭১ সালে বন্দিখানায় ছিলাম। আমার প্রথম সন্তান জয় সেখানেই জন্ম নিয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের একটা কম্বল দিয়েছিল। গোটা পরিবার এক তলা একটা বাড়ি। কোনো পর্দাও ছিল না, কিছুই ছিল না। এরমধ্যে আমাদের থাকতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি নারীও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। এজন্য যুদ্ধ চাই না। তাই বিশ্বনেতৃত্বের কাছে আহ্বান করব— ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করেন। তাদের উসকানি দেওয়া বন্ধ করেন। শান্তি চাই।’
‘কোভিডের (করোনাভাইরাস) কারণে অর্থনৈতিক অভিঘাত থেকে কেবল আমরা বেরিয়ে আসছিলাম। এখন এই যুদ্ধ, আর স্যাংশন। আমাদের সকল অগ্রযাত্রা নষ্ট করছে। আর সেখানে (ইউক্রেন) আজকে শিশুদের কি অবস্থা? এই শীতের মধ্যে আজকে তারা বিদ্যুৎ পায় না। শুধু ইউক্রেন কেন উন্নত দেশগেুলোর অবস্থা আপনারা দেখেন? কতভাগ বিদ্যুতের দাম তারা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশে এখনো দাম ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। সেজন্য যার যতটুকু জমি আছে শস্য উৎপাদন করার আহ্বান করেছি’— বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘’আমাদের সম্পদ কম। কিন্তু জাতির পিতা বলেছিলেন— ‘আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। এই মাটি মানুষ দিয়েই দেশ গড়ব।’ আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা জানি কি পারব না, আর কি পারব। দেশের মানুষের উপর আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন যেকোনো দুর্যোগকে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আমাদের ছাত্রদের বলেছিলাম, কৃষক ধান কাটতে পারে না, যাও ধান কাটতে। ছাত্ররা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সকল সহযোগী সংগঠন কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে।’’
করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন সমস্যায় সর্বস্তরের মানুষের পাশে নেতাকর্মীদের দাঁড়ানোর প্রশংসার পাশাপাশি সরকারের নির্দেশনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগঠন সকলের আগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়, এটাই আওয়ামী লীগ। এটাই আওয়ামী লীগের শিক্ষা। আওয়ামী লীগের ইতিহাস, সংগ্রামের ইতিহাস। আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। এখন দেশ অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে একটা দেশকে উন্নত করতে। এগিয়ে নিয়ে যেতে। সেভাবেই এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
সারাদেশের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সামনে জাতির পিতার উদর্ধৃতি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বলেছিলেন,‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস, দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। যেদিন বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ পেটপুরে খেতে পারবে, প্রত্যেকের মুখে হাসি ফুটিবে আওয়ামী লীগের সংগ্রাম সেইদিনেই ক্ষ্যান্ত হবে।’
এবিষয়ে জাতির পিতার প্রতীজ্ঞা প্রত্যয়ের দৃঢ়তা ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ এইটুকু বলতে পারে— বাংলাদেশের কোনো মানুষ অভুক্ত থাকে না। তাই পিতাকে বলতে পারি— পিতা, কথা দিলাম। আপনার জনগণ কখনো অভুক্ত থাকবে না। আপনার জনগণ কষ্টে থাকবে না। আপনি আজকে নেই। আপনার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়ে জনগণের পাশে থেকে জনগণকেই সুন্দর জীবন দেব। উন্নত জীবন দেব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সেইভাবেই দেশ পরিচালনা করব।’
‘এই পবিত্র বাংলাদেশ/ বাঙালীর আমাদের/ দিয়া প্রহারেন ধনঞ্জয়/ তাড়াব আমরা করিনা ভয়/ যত পরদেশী দস্যু ডাকাত/ রামা’দের গামা’দের/ বাঙলা বাঙালীর হোক।/ বাংলার জয় হোক/ বাঙালীর হয় হোক’— কবি কাজী নজরুলের এই উক্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় কবেই একথা বলে গেছেন। তাই, যত অশুভ শক্তি যত আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করুক। বাঙালি, বাঙালি হিসাবেই এগিয়ে যাবে অগ্রযাত্রার পথে। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আঘাত আসবে ষড়যন্ত্র আসবে। কিন্তু সেই যড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবেন, এটাই চাই। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্ন ইনশাল্লাহ পূরণ করব।’ এই বলে ২২তম সম্মেলনের উদ্ধোধনী অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাঠে জয়ের ধারাবাহিকতায় প্রত্যয়ে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রতিপাদ্যে এবার ২২তম জাতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটির জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে সম্মেলনস্থলে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসসময় দলের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতারা তাকে স্বাগত জানান। সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে বেলুন ও পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। দলীয় সংগীতের সুরে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পতাকা স্টান্ডে গিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। জাতীয় সংগীতের সুরে জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয়। আসন গ্রহণ করার আগে সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও সম্মানিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা।
দলীয় সভাপতির আগমনকে কেন্দ্র করে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সম্মেলন সফল হোক, আজকের সম্মেলন সফল হোক স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানান। দলীয় সভাপতির আসন গ্রহণের ব্যাপারে ঘোষণা দেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
সম্মেলন প্রস্তুতি সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আয়োজনে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শুরু হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। আওয়ামী লীগের ইতিহাস বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস শীর্ষক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত, জাতীয় সংগীত নৃত্য পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশন পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এরপর অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্ববায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম বক্তব্য রাখেন। সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় সাদামাটা আয়োজনে অনুভূতির সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে নেতৃত্ব নির্বাচনের সম্মেলন। সম্মেলনে আমন্ত্রিত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ঢাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, অসিত বরণ রায়সহ অন্যান্যরা।
আজ বিকেল তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে প্রাায় ৭ হাজার কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৮ অক্টোবর গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়।