বিদায় চেয়েও মুক্তি মেলে না তার
২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:১৬
ঢাকা: বিদায় চেয়েও ‘সভাপতি’র গুরুভার থেকে ছুটি পাচ্ছেন না বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ঐক্যের প্রতীক হয়ে ১৯৮১ সালে প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। সেই থেকে যত সম্মেলন হয়েছে প্রতিটিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ২২তম জাতীয় সম্মেলনেও আগামী তিন বছরের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
শনিবারও কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্যে দল থেকে বিদায় চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যেখানেই থাকি না কেন আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমি চাই আপনারা নতুন নেতা নির্বাচন করুন। দলকে সুসংগঠিত করুন। নতুন আসতে হবে। পুরাতনের বিদায়, নতুনের আগমন- এটাই চিরাচরিত নিয়ম।
দলটির দীর্ঘ পথচলার ৭৪ বছরের মধ্যে ৪১ বছর ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও নৌকার বিজয়ের প্রত্যয়ে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনে এবারও দলের সভাপতি হিসেবে স্বপদে বহাল থাকলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে টানা ১০ম বার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুভার পেলেন শেখ হাসিনা। সম্মেলনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি কাউন্সিলরদের ভোটে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন কাউন্সিলর আমির হোসেন আমু। তাতে সমর্থন করেন মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। এ সময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বিকল্প নাম আহ্বান করলে কাউন্সিলররা সমস্বরে ‘না’ উচ্চারণ করেন। ফলে টানা ১০ম বারের মতো আওয়ামী লীগ সভাপতি পদে নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। তার আগে সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনার বিদায় নেওয়ার কথা বললে কাউন্সিলররা ‘না, না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এতে তার বক্তব্য শেষ করতেও কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। কাউন্সিল অধিবেশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এদিন বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের কাউন্সিল অধিবেশন হয়। কাউন্সিল অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই কমিটি ২০১৯ সালে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে। আপনারা দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা যথাসম্ভব পালনের চেষ্টা করেছি। এরপর অনেক ঝামেলা, অনেক কিছু গেছে। করোনা মোকাবিলা, যুদ্ধ- সব কিছুর মধ্যে দিয়েও আমরা সময় মতো কাউন্সিল করতে পেরেছি। যেসব জেলা ও ইউনিটে এখনও সম্মেলন হয়নি, নতুন যে কমিটি আসবে সেই কমিটির নেতৃত্বে এসব জায়গায় অবশ্যই যেন সম্মেলন হয়। সেদিকে নজর দিতে হবে।’
উপস্থিত কাউন্সিলরদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানেই থাকি না কেন আপনাদের সঙ্গে আছি। আমি চাই আপনারা নতুন নেতা নির্বাচন করুন। দলকে সুসংগঠিত করুন। পুরাতনের বিদায় নতুনের আগমন এটাই চিরাচরিত নিয়ম। এই কথা বলে আমি আপনাদের থেকে অনুমতি চেয়ে নিয়ম অনুযায়ী ২০১৯ সালের সম্মেলনে যে কার্যকরী সংসদ নির্বাচিত হয়েছিল সেটা বিলুপ্ত ঘোষণা করছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছি।’
এ সময় উপস্থিত কাউন্সিলররা ‘না, না’ শব্দ করতে থাকেন। তাদের থামাতে না পেরে শেখ হাসিনা বলে উঠেন— ‘এরকম করলে হবে না তো’। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব হবে। সমর্থন হবে। তখন আপনারাই বিবেচনা করবেন। আপনাদের ওপর সব ভার ছেড়ে দিয়ে বিদায় নিচ্ছি।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনস্থলে আসেন। বেলুন ও পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। দলীয় সংগীতের সুরে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পতাকা স্টান্ডে গিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। জাতীয় সংগীতের সুরে জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয়। আসন গ্রহণ করার আগে সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও সম্মানিত অতিথিদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
পরে সম্মেলন প্রস্তুতি সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আয়োজনে সংক্ষিপ্ত পরিবেশনা শুরু হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। আওয়ামী লীগের ইতিহাস বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস শীর্ষক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত, জাতীয় সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা হয়। উদ্বোধনী অধিবেশন পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এরপর অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্ববায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম বক্তব্য দেন। সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের।
বিকেল তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে সাত হাজার কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অধিবেশন মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। এরপর আট বিভাগ থেকে আটটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বক্তব্য দেন। কাউন্সিলরদের বক্তব্যের পর প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক। ঘোষণাপত্রের সংশোধনী উত্থাপন করবেন আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এর পর সভাপতি কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
কমিটি বিলুপ্তির পর নির্বাচন কমিশন আসন গ্রহণ করেন। এর পর তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন কাউন্সিলরদের প্রস্তাবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন। পরে নবনির্বাচিত সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সম্পাদমণ্ডলীর নাম ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম