‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফয়সালা হবে রাজপথে’
২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:১৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। বিএনপির দশ দফা দাবি তারা মানবে না। তারা পদত্যাগ করবে না। তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। ফয়সালা হবে রাজপথে।’
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ওয়াসা মোড়ে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকেই বিএনপি ১০ দফার আন্দোলন শুরু করেছে। পলোগ্রাউন্ড মাঠ থেকে যে জনসমাবেশ শুরু হয়েছিল সেটা আমরা পুলিশের বাধা, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বাধা, নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সব বিভাগে সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পেরেছি। জনসমাবেশে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে জনগণ বিএনপির দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছে। এ দেশের মানুষের রায় দিয়ে দিয়েছে, এ দেশের মানুষের ভয়েস হচ্ছে- তারা এ সরকার মানবে না।’
‘কিন্তু সরকার ক্ষমতার গদি ছাড়বে না। ক্ষমতার গদি যাতে সরে না যায়, সেজন্য বিএনপির ১০ দফাও মানবে না। দাবি মানাতে হলে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে সবাইকে একজোট হয়ে আন্দোলন করতে হবে। ফয়সালা হবে রাজপথে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে ১০ দফা দাবি মানতে বাধ্য করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে, না হলে দেশের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে।’
দেশে আজ দুর্ভিক্ষ চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। গরিব মানুষ আজ খেতে পারছে না। মধ্যববিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত হয়েছে, নিম্ন মধ্যবিত্তরা গরিব হয়ে গেছে। তারা কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে। আগে দারিদ্র্যসীমা ২০ শতাংশের নিচে ছিল, সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে সেটা আজ ৪০ শতাংশের ওপরে চলে গেছে।’
রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের অভিযোগ এনে মোশাররফ বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রেখেছে। তারেক জিয়াকে দেশে আসতে দিচ্ছে না। এ সরকার জনগণের সরকার নয়। রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে যারা ক্ষমতা দখল করে, তারা জনগণের সরকার হতে পারে না। তারা জনগণের কথা ভাবে না।’
‘দলীয়করণের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যারা ধ্বংস করেছে, তাদের জনগণ আর মেনে নেবে না। তাদের জনগণ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচন করব। সেই নির্বাচনে আমরা জয়ী হব। সেই ভয়ে সরকারের হৃদকম্পন শুরু হয়ে গেছে। শুধু হুইসেলের জন্য অপেক্ষা করুন, দেখবেন সকালে ওঠে তারা সবাই পালিয়ে গেছে। আবার জনতা ক্ষমতায় আসবে।’
সভাপতির বক্তব্যে নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা জনগণকে নিয়ে জনসভা করি আর উনারা বিরিয়ানির প্যাকেট দিয়ে জনসভা করে। মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার ও গণতন্ত্রের অধিকারের সংগ্রামে আমরা জনগণের পাশে আছি, থাকব।’
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এবং উত্তর জেলার আহবায়ক গোলাম আকবর খন্দকার।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড-থানা এবং উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা দুপুরের আগেই ওয়াসার মোড়ে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গনে জড়ো হন। উত্তর জেলার হাটহাজারী থেকে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে আসা একটি বড়ো মিছিল নজর কাড়ে সবার। ওয়াসার মোড়ে সড়কের একপাশে ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ শেষে বের হওয়া গণমিছিল ওয়াসা থেকে কাজির দেউড়ি হয়ে তিন পোলের মাথায় গিয়ে শেষ হয়। গণমিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
সারাবাংলা/আইসি/এনএস