সাদামাটা সম্মেলনে আ.লীগের সাদামাটা ‘চমক’
২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৩৪
ঢাকা: সাদামাটা সম্মেলনে বড়ধরনের রদবদল ছাড়াই সাদামাটা ‘চমক’ দিল আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্বে তেমন কোনো চমকই রাখেনি ক্ষমতাসীন দলটি। ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলনে ফের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমানে দায়িত্ব পালন করা ওবায়দুল কাদের। ঘোষিত কমিটিতে গত কমিটির তিনটি পদে রদবদল করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির বাকি পদগুলো পরবর্তী সময়ে পূরণ হবে।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ২২তম জাতীয় সম্মেলনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি কাউন্সিলরদের ভোটে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন কাউন্সিলর আমির হোসেন আমু। তাঁকে সমর্থন করেন মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। এ সময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বিকল্প নাম আহ্বান করলে কাউন্সিলররা সমস্বরে ‘না’ উচ্চারণ করেন। ফলে টানা ১০ম বারের মতো আওয়ামী লীগ সভাপতি পদে নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবারের সম্মেলনে তেমন রদবদল হয়নি। বিগত সময়ের পরীক্ষিত সহযোদ্ধাদের ওপর ভরসা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তাই সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলের পুরনো বিশ্বস্তদের ওপর ভরসা রেখেছেন। এবার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মনোনীত হয়েছেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, কাজী জাফর উল্লাহ, ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন এমপি, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাড. কামরুল ইসলাম, সিমিন হোসেন রিমি। এছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে গত কেন্দ্রীয় কাযনির্বাহী সংসদের সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে। এছাড়া গত নির্বাহী কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূরুল ইসলাম নাহিদকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আবদুল মান্নান কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ফের নির্বাচিত হয়েছেন- মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা.দীপু মণি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। কোষাধ্যক্ষ পদে এইচ এন আশিকুর রহমান, অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নতুনভাবে মনোনীত হয়েছেন গত কমিটির উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা।
তবে শ্রম, জনশক্তি ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে কাউকে মনোনয়ন দেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি। গত কমিটির শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন হাবিবুর রহমান সিরাজ এবং ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন হারুনুর রশিদ। উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ছিলেন আমিনুল ইসলাম আমিন। তিনি ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ পদে মনোনীত হয়েছেন। যে তিনটা সম্পাদকমণ্ডলীর পদ খালি আছে তা পরবর্তী সময়ে পূরণ করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে একজনকে বাদ দিয়ে গত কমিটির সবাইকে বহাল রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। গত কমিটির রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সফিক বাদ পড়েছেন। বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকরা হলেন- আহমদ হোসেন, বি. এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সুজিত রায় নন্দী। তিনি গত কমিটিতে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। আর উপ-দফতর সম্পাদক পদে সায়েম খানকে আবারও নির্বাচিত করা হয়েছে। এছাড়া আগামী প্রেসিডিয়াম সভায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
বিকেল তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে সাত হাজার কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অধিবেশন মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। এরপর আট বিভাগ থেকে আটটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বক্তব্য দেন। কাউন্সিলরদের বক্তব্যের পর প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক। ঘোষণাপত্রের সংশোধনী উত্থাপন করবেন আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এর পর সভাপতি কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। কমিটি বিলুপ্তির পর নির্বাচন কমিশন আসন গ্রহণ করেন। এর পর তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন কাউন্সিলরদের প্রস্তাবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন। পরে নবনির্বাচিত সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সম্পাদমণ্ডলীর নাম ঘোষণা করেন।
এছাড়াও সভাপতি কর্তৃক উপদেষ্টাপরিষদ ও সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। এরপর সভাপতির সমাপনী ভাষণ শেষে কাউন্সিল অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা হয়। কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অপর দুই সদস্য ছিলেন ড. মশিউর রহমান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণা করেন।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় সাদামাটা আয়োজনে অনুভূতির সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। গত ২৮ অক্টোবর গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম