Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাঠের রাজনীতিকদের হাতে নৌকা দেওয়ার দাবি তৃণমূল নেতাদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:০৩

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সামনে তূণমূল নেতাকর্মীদের প্রতিনিধি হিসেবে মন খুলে কথা বললেন বিভিন্ন জেলার নেতারা। আগামী নির্বাচনেও নৌকার বিজয়যাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ‘নৌকা প্রতীক ভাড়ায়’ না দেওয়ার দাবি জানান তারা। সেইসঙ্গে অভিযোগ-অনুযোগের সুরে বলেন, কেউ কেউ দলের আদর্শ লালন-পালনের আড়ালে দল বিক্রি করে খাচ্ছে। তাই মাঠ পর্যায়ে যারা দলের নীতি-আদর্শ লালন-পালন করে রাজনীতি করে তাদের হাতেই নৌকা প্রতীক দেওয়ার দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে প্রাায় ৭ হাজার কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে কাউন্সিল অধিবেশন হয়। কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকার ধারাবাহিক জয়ের লক্ষ্যে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’র প্রত্যয়ে নতুন নেতৃত্ব উপহার পেল।

কাউন্সিল অধিবেশনে আটটি বিভাগের মধ্যে অধিবেশনের সভাপতির পছন্দ অনুসারে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতিনিধি হিসেবে জেলার নেতারা বক্তব্য দেন। অধিবেশনে বক্তৃতা করেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী, বগুড়া জেলার সভাপতি মজিবুর রহমান মজনু, নড়াইল জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র বোষ, পটুয়াখালী জেলার সভাপতি কাজী আলমগীর, সিলেট জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সফিকুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, জামালপুর জেলা সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ।

সারাদেশের হাজার হাজার কাউন্সিলরের সামনে বক্তৃতার সুযোগ পেয়ে নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক পরিস্থিতির সঙ্গে আগামী নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরামর্শও তুলে ধরেন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে সামনে পেয়ে মনের কথাও তুলে ধরেন। অভিযোগ-অনুযোগের স্বরে কেউ কেউ বলেন, দলের কেউ কেউ অন্তঃপ্রাণ হিসেবে দলের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন; আবার কেউ দলের আদর্শ লালন-পালনের মোড়কে দল বিক্রি করে খাচ্ছেন। সেজন্য আগামী নির্বাচনে শরিকদের তথা ‘নৌকা প্রতীক ভাড়ায়’ না দেওয়ার জন্য দলীয় প্রধানের কাছে আহ্বান জানান।

বিজ্ঞাপন

বগুড়া জেলার সভাপতি মজিবুর রহমান মজনু বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আমরা আশা করি, আজকের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যে নেতৃত্ব আসবে, সেই নেতৃত্বের নির্দেশনায় আগামী নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করব। আপনি যে উন্নয়ন দেশের মানুষকে দিয়েছেন, তাতে আমরা আশাবাদী।’

বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত বগুড়ার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বগুড়ায় আমরা বিভিন্ন আসনে অত্যন্ত অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হই। তারপরও আমরা মনে করি, আপনার বিগত দিনের কর্মকাণ্ডে ইতোমধ্যে বগুড়ায় যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে সেখানে সম্মানজনক বিজয় হয়েছে। আগামী নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন যাদের দেবেন তাদের নেতৃত্বেই বগুড়ার আসন উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব।’ আজকের ঘোষিত কমিটির মাধ্যমে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করে স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রায় এগিয়ে যাবে।’

নড়াইল জেলার সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বোষ জেলার সংসদীয় আসনে নৌকার বিজয় উপহার দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে আমরা আবার আপনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। আমরা সবাই মিলে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেব। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ছাড়া বিকল্প কোনো নেতা নেই।’

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, ‘দেশি-বিদেশি চক্রের প্রচার সেল যতটা শক্ত, আমাদের প্রচার সেল ততটা শক্ত নয়। সরকারের উন্নয়ন প্রতিটি ওয়ার্ড-ইউনিয়নে পৌঁছে দিতে পারলে বিনষ্টকারীদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যাবে।’

সিলেট জেলার সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সারা দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উন্নীত হয়েছে। আপনার নেতৃত্বে নতুন যে কমিটি আসবে তার প্রতি এখানকার সব কাউন্সিলরদের সমর্থন থাকবে। আপনার নির্দেশ মতো আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যাকে দায়িত্ব দেবেন তার সঙ্গে কাজ করব।’ তিনি আরও বলেন, সারা দেশে বিএনপির অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা চলছে। তার বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা

সাবেক এই এমপি আরও বলেন, ‘সারাদেশে উন্নয়ন চলছে। কিন্তু সিলেটের বিশ্বনাথ এলাকা উন্নয়ন থেকে পেছনে আছে। কারণ, আমাদের দলীয় এমপি নেই। এজন্য করজোড়ে অনুরোধ করছি, আগামী নির্বাচনে নৌকাকে যেন ভাড়া দেওয়া না হয়। নৌকার প্রার্থী আমরা চাই। যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করব।’

ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কোরাইশী বলেন, ‘মিথ্যা (মির্জা) আলমগীরের নির্বাচনি আসন ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো অবস্থান নেই। সেখান পায়ের তলায় তার মাটি নেই। আর ঢাকায় এসে সারাক্ষণ মিথ্যা কথা বলে, বড় নেতা হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রচার করছে। তিনটি নির্বাচনে তাকে আমরা পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছি। আগামী নির্বাচনেও গতবারের চেয়ে বেশি ভোটে পরাজিত করে আপনার হাতে নৌকা তুলে দিতে সক্ষম হব।’

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, ‘নেত্রী আপনার বিকল্প আপনি নিজেই। পটুয়াখালী এখন আর খালি নেই, পটুয়াখালী ভরা। পটুয়াখালীর চারটি আসন আপনার নিজের। মাঠে পর্যায়ের যারা রাজনীতি করে তাদের মধ্যে থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। আমার জেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি চারণের মতো নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য ঘুরে বেড়িয়েছি। আপনাকে সফলতাও দিয়েছি। ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্যে ৬০টি চেয়ারম্যান নৌকার হয়েছে।’

চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই দেশ আমার গর্ব, এ মাটি সোনা। শেখ হাসিনা ছাড়া বাঙালির বিকল্প নেই।’

সকাল সাড়ে দশটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। পরে সভাপতির ভাষণ প্রদান করে প্রথম অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি। সকাল সাড়ে দশটার দিকে সম্মেলনস্থলে পৌঁছান শেখ হাসিনা। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতারা স্বাগত জানান। সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে বেলুন ও পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। দলীয় সংগীতের সুরে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পতাকা স্টান্ডে গিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। জাতীয় সংগীতের সুরে জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয়।

এর পর বিকেল তিনটায় কাউন্সিল অধিবেশনে আগামী তিন বছরের জন্য টানা দশমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আর টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের।

সম্মেলনে আমন্ত্রিত অন্যান্য দলের রাজনীতিকদের মধ্যে ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ঢাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, অসিত বরণ রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

তৃণমূল নেতা নৌকা রাজনীতিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর