Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাগজে আছে, সাইনবোর্ডে নেই!

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:১৮

ঢাকা: জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব সড়কের দুই পাশে অবস্থিত দোকানপাট ও ভবনে সেসব নামের ব্যবহার নেই। অধিকাংশ দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে সড়কের আগের নামই ব্যবহার করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তো বটেই, পুরনো নামে ঠিকানা লেখা রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডেও। এসব দোকান ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, নাম পরিবর্তনের বিষয়টি তারা জানেন না। এমনকি সিটি করপোরেশন থেকে কখনো এ বিষয়ে কিছু বলাও হয়নি।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর মৌচাক মার্কেট থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং হয়ে রামপুরা বিটিভি ভবন পর্যন্ত সড়কের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ইকবাল ও তছলিম সড়ক। কিন্তু রামপুরা টিভি সেন্টার থেকে শুরু করে মালিবাগ পর্যন্ত প্রায় সব দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই দেখা গেল পুরনো নাম ডিআইটি সড়ক লেখা। মালিবাগ রেলগেটের পর জাতীয় যুব উন্নয়ন ও কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ঠিকানার জায়গায় লেখা, ৮৯, ডিআইটি রোড, মালিবাগ ঢাকা-১২১৭।

বিজ্ঞাপন

রাজধানী উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মোট ৪৪টি সড়কের নামকরণ হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে। এছাড়াও শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ স্মৃতি পার্ক, মেয়র আনিসুল হক সড়ক, নরোদম সিহানুক সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কমপ্লেক্সসহ মোট ৫৪টি স্থাপনার নামকরণ হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনদের নামে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করা ৪৯টি সড়কের মধ্যে বেশ কয়েকটি রাস্তায় সরেজমিনে দেখা যায়, কাগজ-কলমে নাম পরিবর্তন হলেও তার দেখা নেই সড়কে। এমনকি সড়কের নামফলকও চোখে পড়েনি। দোকান মালিকরা বলছেন, তাদের দোকানের অফিসিয়াল কাগজপত্রও আগের নামেই চলছে। আগের ঠিকানাতেই ট্যাক্স দেওয়াসহ অন্যান্য অফিসিয়াল কাজ সারেন তারা।

রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত সড়কের আগের নাম ছিল প্রগতি সরণি। পরবর্তী সময়ে এর নামকরণ করা হয় বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম এভিনিউ। রামপুরা ব্রিজ থেকে বাড্ডা ইউলুপ পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে সব জায়গায় দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পেট্রোল পাম্প- সব জায়গায় এখনো লেখা প্রগতি সরণি।

ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রান্তের বেশ কয়েকটি কাঠ, বাঁশ ও আসবাবপত্রের দোকানে গিয়ে জানা গেল, তারা জানেনই না যে এই রাস্তার নাম কোনো মুক্তিযোদ্ধার নামে করা হয়েছে। আশপাশের সবাই প্রগতি সরণি লেখে দেখে তারাও সেই নাম লেখেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টিম্বার ব্যবসায়ী জানালেন, ‘সিটি করপোরেশন অফিসে তো কত কাজে যাই, তারাও তো প্রগতি সরণিই লেখে। কোনোদিন তো বলে নাই যে, নাম বদলাতে হবে।’

রামপুরা এলাকায় আরাফাত কফি হাউজ নামে একটি কফিশপ পাওয়া গেল যেখানে লেখা শহিদ ফারুক ইকবাল সড়ক। দোকানের মালিক গোলাম হোসেন মন্টু। রামপুরার বাসিন্দা গোলাম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুরো ঢাকায় সরকার শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বিভিন্ন সড়কের নামরকণ করেছে। আমাদের এই রাস্তার নামও তো বদলাইছে। আমি তো শুরু থেকেই জানি। তাই দোকানের ঠিকানাতেও সেটাই লেখা।’

কিন্তু রাস্তার নাম শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ইকবাল ও তছলিম সড়কের পরিবর্তে শহিদ ফারুক ইকবাল সড়ক লেখা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, পুরো নামটি তার জানা ছিল না। এভাবে রামপুরা, হাজিপাড়া, আবুল হোটেল থেকে মৌচাক পর্যন্ত সড়কের দুুই পাশে ডিআইটি রোড লেখাই দেখা গেল। তবে মালিবাগ রেলগেট পার হয়ে কয়েকটি দোকানে পুরো নাম শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ইকবাল ও তছলিম সড়ক পাওয়া যায়। পাশাপাশি কয়েকটি দোকানের কেউ নাম পরিবর্তন করেছেন, আবার কেউ করেননি। যারা করেনি তারা অজ্ঞতা ও নির্দেশনা না পাওয়ার কথা জানান।

অখণ্ড ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মেয়র থাকাকালে ঢাকার অনেকগুলো সড়কের নাম মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করেন। এরশাদের আমল থেকে শুরু হয়ে মির্জা আব্বাস ও মোহাম্মদ হানিফও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কের নামকরণের ধারাবাহিকতা রেখেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে আজও চলমান রয়েছে।

এর আগে, গত বৃহপস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে সড়কের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করার ঘোষণা দেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক আছে ২৭টি। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও দেশবরেণ্য ভাষা সৈনিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সেতু ও অবকাঠামো রয়েছে ৬১টি।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভাষা শহিদ ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জাতির এসব বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমার-আপনার সকলের দায়িত্ব। কেউ জানেন না, এটি ঠিক নয়। আমরা সিটি করপোরেশন থেকে একাধিকবার প্রচারণা চালিয়েছি নাম পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু এ বিষয়ে মানুষের উদাসিনতা চোখে পড়ার মতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্সে ঠিকানা বদল, চিঠি দিয়ে নাম পরিবর্তনের কথা বলা হলেও অনেকেই বদলান না। এমনকি আমরা ছোট করে নতুন নামে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দিয়ে এসেছি। কিন্তু অনেকেই সেটি তুলে বা তার ওপর আগের নামের ঠিকানা দিয়ে আবার সাইনবোর্ড লাগিয়েছে।’

পরিবর্তিত নাম ব্যবহার না করলে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বার বার সতর্ক করতে পারি কিংবা বলতে পারি। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো আইন নেই। সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।’

বিজয় বিশদের অন্যান্য সংবাদ:

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

নামকরণ বিজয় বিশদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সড়ক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর