আজ ক্রিসমাস ডে, মঙ্গল কামনায় গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা
২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:৪৯
ঢাকা: আজ ২৫ ডিসেম্বর। খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন। এদিন যিশু খ্রিস্ট ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবস্থিত বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাই খ্রিস্ট ধর্মালম্বীরা এই দিনটি ক্রিসমাস ডে হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যয়ের পথে পরিচালিত করতেই যিশুর আগমন ঘটেছিল বলেই তাদের বিশ্বাস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে ক্রিসমাস ডে পালন করা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ক্রিসমাস অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত হয় খ্রিস্টজাগ।
রাজধানীর কাকরাইল ক্যাথলিক চার্চে সকালে খ্রিস্টজাগ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শত শত খ্রিস্ট ধর্মের মানুষ প্রার্থনায় অংশ নেন। তারা জানান, গত দুই বছর করোনা আর গেল বছর ওমিক্রনের কারণে উৎসবমুখর পরিবেশে ক্রিসমাস ডে উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। এবার রোগমুক্ত পরিবেশের পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লোকসমাগম বেশি হয়েছে।
কাকরাইল চার্চের আর্চ বিশপ বিজয় এন ডি সকলকে ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জানি এবার একটু লোক সমাগম বেশি হবে, সেজন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থাও সেভাবে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সবধরনের সহযোগিতা করছেন। প্রার্থনা শেষে সারাদিনই আনন্দে উৎসবে কাটাবেন সকলে। চার্চে খ্রিস্টান ধর্মানুসারী ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের মানুষেরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন। তখন ক্রিসমাস ডে শুধু খ্রিস্টানদের থাকেনা, হয়ে ওঠে সার্বজনীন।’
জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন ছিল তেঁজগাও রানীর চার্চেও। চার্চের মূল সড়ক থেকে সাজানো শুরু হয়েছে। সকালে প্রার্থনা শেষে দিনভর চলবে শুভেচ্ছা বিনিময়। নতুন জামা, জুতো পড়ে বড়দের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেছেন শিশুরাও। মীরা রোজারিও বলেন, ‘পরিবার ও সকলের মঙ্গল কামনা জানিয়েছি প্রার্থনায়। যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে সামনের দিনগুলো সুখে শান্তিতে কাটাতে পারি।’
অঞ্জনা সরকার বলেন, ‘করোনার মতো ভয়াবহ রোগ যেন আর না আসে, সে প্রার্থনা জানিয়েছি ঈশ্বরের কাছে।’ মাইকেল সরকার বলেন, ‘গত কয়েক বছর ওভাবে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে ক্রিসমাস উদযাপন করা হয়নি। এবার পারছি। বাচ্চাদের নিয়ে আসছি গির্জায়। ওরা খুব আনন্দ পাচ্ছে।’
ক্রিসমাস ডে উপলক্ষ্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপসনালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। আর একদিন আগে গত শনিবার থেকেই সাজানো হয়েছে পাঁচ তারকা হোটেলগুলো। বরাবরের মতো এবারও তারা নানা আয়োজন রেখেছে। হোটেল সোনারগাঁওয়ের মাঠে সান্তাক্লজের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর আয়োজন রয়েছে। যেখানে সান্তা বাচ্চাদের সঙ্গে খেলবেন কথা বলবেন, গিফঠ দিচ্ছেন। তবে এবারও সেখানে যেতে রাখা হয়েছে টিকিট পদ্ধতি। পুরো ১০০০ টাকা খরচ করলেই তবে মিলবে সান্তার দেখা।
এদিকে ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিস্টান ধর্মালম্বীসহ সকলের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, জাগতিক সুখের পরিবর্তে যিশুখ্রিস্ট ত্যাগ, সংযম ও দানের মাধ্যমে পারমার্থিক সুখ অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য স্থাপনসসহ অশান্ত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যিশুখ্রিস্ট্রের শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণীয়। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, আবহমানকাল থেকে এদেশে সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠান স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, সকল শ্রেণি, পেশা ও সম্প্রদায়ের জনগণের উন্নয়নই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে সকল সম্প্রদায়ের মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তিনি আরও বলেন, সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আওয়ামী লীগ সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধ পরিকর।
ক্রিসমাস ডে’কে আরও আনন্দময় ও উৎসবমুখর করে তুলতে রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলগুলোও নানা আয়োজন করেছে। নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমে কৃত্রিম ক্রিসমাসট্রি রেখেছে। তাতে নানান রঙের আলোকসজ্জাও করা হয়েছে। এদিকে সকালের প্রার্থনা শেষে খ্রিস্টান ধর্মানুসারীরা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন দিনভর। প্রতিটি পরিবারে শুধু কেক কাটাই নয় খাবারেও এনেছেন ভিন্নতা। আবার কারও কারও বাসায় ধর্মীয় গানের আয়োজন করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস