ছাত্রলীগে নতুন নেতৃত্ব, ফের চাঙ্গা ঢাবির রাজনীতি
২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:২৬
ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। এবং দু’জনই সক্রিয় রাজনীতি করে এতদূর এসেছেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগেরও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। সেজন্য ঢাবির হলগুলোতে বর্তমানে রাজনৈতিক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার আমেজ। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেছেন। নতুন নেতৃত্ব ঘিরে স্লোগান, রাজনৈতিক কার্যক্রম, মিছিল— বর্তমানে এসবেই মুখর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
গত ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের ১৪দিন পর ২০ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে সভাপতি এবং সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি পদে মাজহারুল কবির শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে তানভীর হাসান সৈকতের নাম ঘোষণা করা হয়। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ নিজ হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ছিলেন।
এর আগে, ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সনজিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসেন। এর সাড়ে তিনবছরের বেশি সময় পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আংশিক কমিটি গঠিত হয়। এর আগে, ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছিল। গত দুই কমিটির মধ্যকার সময়ের ব্যবধান ছিল পাঁচ বছর।
এদিকে, নতুন নেতৃত্ব ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আছে উৎসব-উন্মাদনার আমেজ। চলতি পথে, মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি কিংবা হলগুলোর মূল ফটক স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত থাকে প্রায় সময়। এছাড়া, সংস্কৃতি অনুযায়ী নতুন নেতৃত্ব ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা ‘গ্রুপ’ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেছে। নতুন চার নেতাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি হলেই এখন অন্তত চারটি করে গ্রুপ আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ইউনিটগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আওতায় থাকলেও প্রচলিত সংস্কৃতি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী প্রার্থীও থাকেন এখানে। মূলত, নেতৃত্ব নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার শীর্ষ নেতারা ‘সমঝোতার’ ভিত্তিতে নিজেদের প্রার্থীদের হলের নেতৃত্বে আনেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলছে, শীর্ষ চারনেতার এলাকা ও ব্যক্তিগত পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে হলগুলোর বেশিরভাগ পদপ্রত্যাশী নিজেদের রাজনীতিতে সক্রিয় করেন। তবে কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতারা বলছেন, কোনো পর্যায়ের কমিটির ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার ছাপ থাকবে না এবার।
হলগুলোর সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোটাদাগে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসনকে কেন্দ্র করে হল রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, বৃহত্তর বরিশাল ও আরও কয়েকটি অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।
এদিকে, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চল ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নকে কেন্দ্র করে এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের অন্যান্য অংশ ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেছে।
সদ্য পদপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, যোগ্যতা ও পরিশ্রম হবে হলগুলোর নেতৃত্বে আসার মানদণ্ড। পদপ্রত্যাশীদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা তাদের— কোনো ধরনের দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে সুস্থ প্রতিযোগিতা বজায় রেখে মেধা-মনন, যোগ্যতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নেতৃত্বে আসতে হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো রাজনীতির পাওয়ার হাউজ। ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট এগুলো। যারা হলগুলোর প্রার্থী হয়েছেন বা হবেন, তাদের প্রতি আমার সুস্পষ্ট বার্তা থাকবে, তারা যেন সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে সহিষ্ণুবোধ বজায় রেখে রাজনীতি করেন। নিজেদের মধ্যে যেন কোনো প্রকার দ্বন্দ্বে না জড়ান।’ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে নেতাকর্মীদের স্মার্ট সিটিজেন হওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।
গুণগত মানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি গঠনতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখাসহ কোথাও কোনো আঞ্চলিকতার সুযোগ নেই। এটি আমার সুস্পষ্ট বার্তা। যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা নেতৃত্ব নির্বাচন করব। সংখ্যাগত নয়, বরং গুণগত মানই আমাদের কাছে সব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং যাদের ব্যাপারে হলগুলোর বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ভালো রিপোর্ট দেবেন, তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।’
আঞ্চলিকতার প্রশ্নে শয়ন বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে আঞ্চলিকতা শব্দটি যায় না। আমি কথা দিতে পারি, আমাদের রাজনীতির ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার ‘আ’ অক্ষরটুকুও থাকবে না।’
পদপ্রত্যাশীদের প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অর্জনের পথে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন নেতৃত্ব আসা মানে পুরাতনদের বিদায় করে নতুনদের সুযোগ করে দেওয়া। যারা হলের নেতৃত্বে আসতে ইচ্ছুক, তাদের মধ্যে এখন প্রতিযোগিতা থাকবে। আমি চাই, এই প্রতিযোগিতা যেন সুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। মেধা-মনন ও সৃজনশীলতার মধ্য দিয়ে নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বগুণ গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অর্জনের পথে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।’
পরিশ্রম ও যোগ্যতা নেতৃত্বে আসার মানদণ্ড হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক। আমি কোনো অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক নই। আমি সুস্পষ্ট বলতে চাই, আঞ্চলিক জায়গা থেকে রাজনীতিকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যদি তা-ই হতো, তবে একই অঞ্চল থেকে দু’জনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হতো না। যোগ্যতা থাকতে হবে এবং পরিশ্রম করেই নেতৃত্বে আসতে হবে। আমি নিজেও তেমন।’
সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম