চট্টগ্রামে ক্রিসমাস ডে’র প্রার্থনায় যুদ্ধ থেকে মুক্তি কামনা
২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৪৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো : যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে মানবজাতির মুক্তি ও বৈশ্বিক শান্তি প্রার্থনায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে উদযাপিত হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস ডে। করোনা পরিস্থিতি পার করে এবারের উৎসবে হয়েছে স্বাড়ম্বরে, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাসহ অন্যান্য অনুষঙ্গের কোনো কমতি ছিল না।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত থেকে নগরী ও জেলার ১৪টি গির্জায় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে গির্জাগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। বর্ণিল আলোর পাশাপাশি গোশালা স্থাপন, রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রিসহ নানা আয়োজনে সাজানো হয়।
সবচেয়ে বড় আয়োজন হয়েছে নগরীর পাথরঘাটায় রাণী জপমালা গির্জা ও আর্চবিশপ ভবনে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় ওই গির্জায় মূল প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। বাংলায় এই প্রার্থনায় পৌরহিত্য করেন চট্টগ্রাম ক্যাথলিক আর্চডায়োসিসের আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার।
রাত ১২টা ০১ মিনিটে একই গির্জায় ইংরেজিতে আরও একটি প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এতে পৌরহিত্য করেন রাণী জপমালা গির্জার পাল পুরোহিত লেনার্ড সি. রিবেরু।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় একই গির্জায় আরও এক দফা সম্মিলিত প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে পৌরহিত্য করেন আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার।
শান্তির বারতা পরিবার থেকে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়া এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে মুক্তির আকুতি জানিয়ে প্রার্থনায় শরিক হন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শত, শত মানুষ। নারী–পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ অভিন্ন কণ্ঠে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় মিলিত হন।
এদিন বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাণী জপমালা গির্জার মূল ফটক সর্বসাধারণের জন্য খোলা রাখা হয়। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও শ্রেণী-পেশার শত, শত মানুষ গির্জায় সমবেত হন।
রোববার সন্ধ্যায় আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি কেক কাটেন। এসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান এম. জহিরুল আলম দোভাষ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীরসহ রাজনীতিক, শিক্ষক, শিল্পী, সংস্কৃতিজনরা উপস্থিত ছিলেন।
সমবেতদের উদ্দেশে আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি দেশে যখন যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দরিদ্রদের দুঃখ-দুর্দশা অবর্ণনীয় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে হানাহানি ও অশান্তি বাড়ছে। এ অবস্থায় শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, প্রবাসী-অভিবাসী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের একত্রে মিলিত হয়ে শান্তি-ভালোবাসা, ন্যায্যতা-মুক্তি ও আনন্দের পথ অন্বেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হয়ে পড়েছে। জগতের এ দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় পোপ মহোদয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ঐশবাণীর আলোকে এবং পুণ্য উপাসনার মাধ্যমে একসঙ্গে পথচলার আহ্বান আমরা পেয়েছি।’
সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব পর্যায়ের জনগণ একত্রিত হয়ে বড়দিনের শান্তির বার্তা এবং আনন্দ সহভাগিতা করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার পথ অনুসরণ করি এবং সম্প্রীতির জন্য প্রার্থনা করি।’
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ক্রিসমাস ডে’র শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আপনার নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশে সব সম্প্রদায়ের লোক স্বাধীনভাবে নিজ-নিজ ধর্মের আচার অনুষ্ঠান পালনের অধিকার ভোগ করছেন। সুদীর্ঘকাল থেকে চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সস্প্রীতি বিরাজমান আছে। এখানে সকল ধর্ম-বর্ণের লোক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে একে অপরের ধর্মীয় উৎসবে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।’
ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে নগরীর তারকা হোটেলগুলোতে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। নগরীর পাঁচ তরকা হোটেল রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ’র লবি সাজানো হয়েছে ২০ ফুট লম্বা ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে। পাশেই রয়েছে সুদৃশ্য ক্রিসমাস হাউস। কুকি হাউসে আছে ২০ পদের কেক ও কুকিজ। ক্রিসমাসের বিশেষ ডিনারে আছে অর্ধশতাধিক পদের সালাদ ও দারুণ সব ডেজার্ট। শিশুদের সঙ্গে আনন্দ আয়োজনে থাকছে সান্তাক্লজের সান্নিধ্য।
এছাড়া হোটেল দ্যা পেনিনসুলায় সকাল থেকেই উপহারের সঙ্গে অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছে সান্তা ক্লজ। সুসজ্জিত ও নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। পেনিনসুলার লেগুনা রেস্টুরেন্টে ক্রিসমাস ডে’র রাজকীয় বাফেট আয়োজনের পাশাপাশি সিরাস স্কাই ডাইনিং ও সেইন্টস ক্যাফেতে বিশেষ ক্রিসমাস প্লেটারের আয়োজন করা হয়েছে।
নগরীর গির্জাগুলোতে ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর। তিনি বলেন, ‘মূল গির্জাসহ আশপাশের এলাকায় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর বাইরে সাদা পোশাকে পুলিশও আছে। বিভিন্ন গির্জায় সিসিটিভি বসানো হয়েছে।’
সারাবাংলা/আরডি/একে