Thursday 15 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে অ্যাজমায় ভুগছে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ!


১ মে ২০১৮ ২১:২৮

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: অ্যাজমা অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ-এর ১৯৯৯ সালে করা জরিপে দেখা গিয়েছিল দেশে অ্যাজমা আক্রান্ত রোগী ছিল প্রায় ৭০ লাখ। তারপর এ পর্যন্ত আর কোনো জরিপ না হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত ধারণা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তারা বলছেন, দেশে বর্তমানে মোট ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ অ্যাজমায় ভুগছেন।

এতো বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়া ‘আশঙ্কাজনক’ বলছেন চিকিৎসকরা। তাদের মত, অ্যাজমার কারণ নির্ণয় করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন ফারিয়া হাসান। ছোট বেলা থেকেই তিনি অ্যাজমায় আক্রান্ত। দেশের বাইরে ছিলেন, কখনও এতোটা কাবু হননি এখন যতটা ভোগাচ্ছে ঢাকার বাতাস। তিনি জানান, ধূলা আর গাড়ির কালো ধোঁয়াতে খুব বেশি কষ্ট হয়। ঢাকায় ফেরার পর কয়েকবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়েছে। ব্যাগে, গাড়িতে, অফিসে- সব জায়গায় ইনহেলার রাখতে হয়, পথে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হলেও বিষয়টি গুরুত্ব দিতে চান না অনেকে। চিকিৎসকের কাছে যান না। আর যখন চিকিৎসকের কাছে যান, তখন দেরি হয়ে যায়। তাই অ্যাজমা রোগের লক্ষণ বোঝামাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

আজ ১ মে, বিশ্ব অ্যাজমা দিবস। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনা করা হয় বিশ্বজুড়ে। এবারে বিশ্ব অ্যাজমা দিবসে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সময় মতো চিকিৎসা নিলে-অ্যাজমা হতে মুক্তি মেলে’।

জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সূত্র জানায়, এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে দেশব্যাপী অ্যাজমা নিয়ে করা পোস্টার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেননা সময় মতো ‍যদি চিকিৎসা নেওয়া যায় তাহলেই কেবল অ্যাজমাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকরা আরও বলছেন, পরিবেশ এবং বংশগত কারণেই সাধারণত এই রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশে দিনে দিনে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর এর বড় কারণ বায়ু দূষণ। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপাতত সর্ম্পূণভাবে এই রোগ থেকে মুক্তি না মিললেও, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে করা সম্ভব।

আন্তর্জাতিক জরিপে উঠে এসেছে, বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ অ্যাজমা রোগে ভুগছেন। আর এই রোগেই মৃত্যু হচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের।

বাংলাদেশে এ সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখের মতো। এর মধ্যে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।

জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রশীর আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, অ্যাজমা একটি অ্যালার্জিজনিত রোগ। বিভিন্ন অ্যালার্জির কারণে শ্বাসনালিতে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে পড়ে। শ্বাস নিতে এবং ছাড়তে সমস্যা হয়। কাশি হয়, বুক চেপে ধরে, শ্বাসকষ্ট হয়, বুকের ভেতরে শব্দ হয়।

ধুলো, ধোঁয়ায় অ্যালার্জি থেকে কেউ কেউ অ্যাজমায় আক্রান্ত হতে পারেন। আবার কারও কারও খাবার থেকে অ্যালার্জি হয়, শরীর চুলকায় এবং চামড়া আক্রান্ত হয়।

ঘরে জমে থাকা ধূলাও অ্যাজমার একটি অন্যতম কারণ, বলেন ডা. বশীর আহমদ। পুরনো কাপড়ে ‘মাইট’ নামে এক ধরনের জীবাণু থাকে যা অ্যালার্জির সৃষ্টি করে। আক্রান্ত ব্যক্তির যা কিছুতে অ্যালার্জি হয়, সেসব থেকে দূরে থাকতে হবে। বিশেষত ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। জমে থাকা ধূলা খুব ক্ষতিকর।

একই মত দেন প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, অ্যাজমার কারণে রোগী মারা যাচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই মৃত্যুর হার শতকরা ৮০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব। একটু সচেতনতা-সাবধানতা অবলম্বন করলে রোগী নিজেই তার সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

ডা. বশীর আহমদ বলেন, বাইরের ধূলাবালিতো ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তাই এই ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। গাড়ি এবং কলকারখানার কালো ধোঁয়া যেন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করে- সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া শিশুরা যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যত নতুন প্রজন্ম একটি ‘অসুস্থ প্রজন্ম’ হিসেবে বেড়ে উঠবে।

সারাবাংলা/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর