‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পরিবার থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে’
২৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:১৩
ঢাকা: মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পরিবার থেকেই পরিবর্তন আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য রিপোর্ট ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকৌশল পরিকল্পনা ২০২০-৩০ এর অবহিতকরণ এ কথা বলেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ বলেন, আমাদের শারীরিক চিকিৎসা নানা কর্মকৌশল থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ছিল না। এ জন্য নানা পরিকল্পনা আমরা করেছি। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটা উন্নত পরিবেশ দরকার। শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতর চাইলেই হবে না, আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকেই এটি চালু করতে হবে। পরিবারেই তাকে যেন দুর্বল করে দেখা না হয়।
তিনি বলেন, আজ গর্ব করে বলতে হয় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বাংলাদেশের একটি কর্মকৌশল আছে, একটি আইন আছে। কিন্তু সবাই এগিয়ে না এলে, কাজ না করলে এগোবেনা। সবার আগে নিজেকের পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতি হিসেবে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছে। সেখান থেকে উন্নত দেশের কাতারে এসেছি, তাহলে কেন আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের মতো জায়গায় এগোতে পারব না?
সায়মা ওয়াজেদ বলেন, একজন মানসিক রোগীকে আমরা স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি না। তাকে অবহেলা করি। এক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার সময় মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, মানসিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষকে আমরা এমনভাবে গণ্য করি যেন তিনি জীবনভর চিকিৎসায়ও সুস্থ হবেন না। এভাবে তার মানসিক শক্তিকে নষ্ট করে দেয়া হয়। তাকে হার মানতে বাধ্য করা হয়।
তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, আমরা চিন্তা করি না কতটা কষ্ট নিয়ে সে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার এমন পদক্ষেপের পেছনে কী কী কারণ ছিল সেগুলো খোঁজার চেষ্টা করি না। মেন্টাল হেলথ অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্য কী সেটাই আমরা বুঝি না। শরীরের সঙ্গে মনেরও যত্ন নিতে হবে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া একজন মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই উপদেষ্টা আরও বলেন, আমি গর্ববোধ করি যে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যাপক কাজ হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো কার্যকর করতে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এখনও পুরোপুরি বদলায়নি। আমাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন আমাদেরকেই আনতে হবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে। আমরা আজ থেকেই যদি শুরু করি, আমরা পারব আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে।
সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, অটিজমের বিষয়টি দেশে গুরুত্ব পেত না। সায়মা ওয়াজেদের হাত ধরে এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। আইন হয়েছে, মানসিকতা বদলে কাজ হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা বাড়ানো হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য খাত ভাল না থাকলে দেশ ভালভাবে চলতে পারে না।
তিনি বলেন, দেশের ১৮ ভাগ বা তিন কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কোন না কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত। মানসিক স্বাস্থ্য সেবার আওতা ও ব্যাপ্তি বাড়ানো হয়েছে। ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানসিক রোগী নানা কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।
তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য, মহামারির মতো নানা কারণে মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলো। আবার বিয়ে বিচ্ছেদের মতো ঘটনায়ও অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এই জায়গাগুলো থেকে তাদেরকে বের করে আনতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা জানি চিকিৎসার ঘাটতি রয়েছে ৮৯-৯০ শতাংশ।
আমাদের বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বরাদ্দ রয়েছে দশমিক ৫ শতাংশ, যা খুবই কম। যেখানে দেশের ১৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত, সেখানে এত কম বাজেট আর চিকিৎসক দিয়ে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সেজন্য এই খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।— বক্তব্যে যোগ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এসবি
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট মানসিক স্বাস্থ্য সায়মা ওয়াজেদ সূচনা ফাউন্ডেশন