ঢাকা: শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক পাহারায় থাকার প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে তা প্রতিহত করতে সহযোগী সংগঠনগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে দলটির হাইকমান্ড।
রাজধানীজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পয়েন্টে সতর্ক অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকেও অবস্থান নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল করবে বিএনপি ও তাদের শরিক-সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। রাজধানীর কয়েকটি স্পট থেকে দল ও জোটগুলো পৃথক গণমিছিল বের করবে।
বিএনপি ঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি শুক্রবার বাদ জুম্মা পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে মগবাজার মোড়ে শেষ হবে। গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় জমায়েত হয়ে বক্তব্য শেষে গণমিছিল শুরু করে দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে যাবে। ১২ দলীয় জোটের গণমিছিল দুপুর ৩টায় বিজয় নগর পানির ট্যাংক এলাকা থেকে শুরু করে কাকরাইল মোড়ের দিকে যাবে। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব সামনে থেকে শুরু করে মতিঝিল শাপলা চত্বর মোড়ের দিকে যাবে। কাওরানবাজার এফডিসি সংলগ্ন এলডিপি অফিসের সামনে থেকে বেলা ৩টায় দলটির নেতাকর্মীরা মালিবাগ মোড়ের দিকে যাবেন
বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান কর্মসূচি থাকবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আগামীকাল শুক্রবার ঢাকায় বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে ১০ ডিসেম্বরের মতোই সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। ঢাকাসহ সারা দেশেই এই সতর্ক পাহারা বসানো হবে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। তিনি বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস করবে, ভাঙচুর করবে, সেখানে কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকব, ললিপপ খাব?
সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থায় পাহারায় থাকবে বলে জানান দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কর্মসূচি হলে জনগণ ভয়ে থাকে। ৩০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে বিএনপি যাতে কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে সেজন্য ঢাকা শহরে আওয়ামী লীগ সতর্কতামূলক অবস্থানে থাকবে।
ইতোমধ্যে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ঢাকা সিটি করপোরেশেনের মেয়ররা মতবিনিময় করেন। সভায় ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচি মোকাবিলায় কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ১০ ডিসেম্বরের মতো আগামীকালও আমরা রাজধানীতে আমাদের নেতাকর্মীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সতর্ক পাহারায় থাকবে। বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে তাহলে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু নৈরাজ্য করার চেষ্টা হলে দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত আছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন মোড়ে ও মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে। সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান করবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রাজধানীতে কড়া পাহারায় থাকবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় পাহারায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থান থাকবে।
বিএনপি গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ২৪ ডিসেম্বর একযোগে ঢাকাসহ সারা দেশে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে গণমিছিল কর্মসূচি হাতে নেয়। তবে সেদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থাকায় ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচি নির্ধারণ করে দলটি।