Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংলাপ, ইভিএম ও উপনির্বাচন নিয়ে বছরজুড়ে আলোচিত ইসি

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:১২

ঢাকা: বরাবরের মতো বিদায়ী ২০২২ সালেও আলোচনা ও সমালোচনা বাইরে থাকতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সার্চ কমিটি, ফেব্রুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, নতুন ইসির দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে মার্চের শুরুতে তড়িঘড়ি করে শিক্ষকদের সঙ্গে সংলাপে বসার মধ্য দিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এরপর সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু হলেও অনেক ব্যক্তিও রাজনৈতিক দলের ইসির সংলাপে সাড়া দেয়নি। ফলে দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই আস্থার সংকটে পড়ে নতুন কমিশন।

বিজ্ঞাপন

বছরজুড়ে আরও বেশ কিছু বিষয়ে আলোচিত ও সমালোচিত মুখে পড়ে কমিশন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইসির সংলাপে অংশ না নেওয়া। পাশাপাশি নতুন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপির অংশ গ্রহণ না করাও ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচনের ঘোষণা, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ভোট গণনাকালে ফলাফল পাল্টে ফেলার অভিযোগ, ইসির নির্দেশনা অমান্য করার পরেও কুমল্লার সংসদ সদস্য বাহার এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারা ছিল চোখে পড়ার মতো। সর্বশেষ গাইবান্ধা-৪ আসনের উপনির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে পুরো নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা। অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, বিভিন্ন বিভিন্ন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হওয়া, জেলা পরিষদ নির্বাচনেও নিয়ে বছরজুড়ে সমালোচনার মুখে ছিল ইসি।

বিজ্ঞাপন

সার্চ কমিটি ও নতুন ইসি গঠন: চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সার্চ কমিটির সদস্য ছিলেন বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. ছহুল হোসাইন, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। সার্চ কমিটির দেওয়া ১০ জনের তালিকা থেকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য পাঁচ জনকে চূড়ান্ত করেন রাষ্ট্রপতি। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয় সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে। নির্বাচন কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এবং সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান।

ইসির সংলাপ ও ইভিএম নিয়ে মতবিরোধ: নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে গত ১৩ মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। এরপর ২২ মার্চ থেকে সুশীল সমাজ, ৬ এপ্রিল থেকে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ইসি কয়েকধাপে সংলাপে বসে ইসি। এই সংলাপে সুশীল সমাজের অনেক প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ না করায় গ্রহণযোগ্যতা ও কমিশনরে প্রতি আস্থার বিষয়ে সমালোচনা মুখে পড়তে হয় ইসিকে।

অন্যদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গত ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানান ইসি। ইসির সংলাপে ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ ১০টি রানৈতিক দল ইসির সংলাপে অংশ নেয়নি। সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেও নানান ইস্যুতে চরম মতবিরোধ দেখা দেয়। বিশেষ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বিরোধীতা করলেও নির্বাচন কমিশন ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে বাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ২০২২ সালে বছরজুড়েই রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মধ্যে ইভিএম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলে।

ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলের মতামত পাল্টে ফেলার অভিযোগ ইসির বিরুদ্ধে: রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপের পর দলগুলোর মতামত পাল্টে ফেলার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে ইসিরি বিরুদ্ধে। ইসির সংলাপকালে অংশ নেওয়া ২৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে কেবল ৪টি রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে, ৯টি দল শর্ত দিয়ে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মতামত দিয়েছে, ১টি দল ইভিএমের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো মত দেয়নি। বিপরীতে ১৫টি রাজনৈতিক দল সরাসরি সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন। কিন্তু ইসির প্রকাশিত রোডম্যাপে সংলাপের ফলাফল পাল্টিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইসির রোডম্যাপে বলা হয়েছে, ১৭টি রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে, ১২টি দল স্পষ্টভাবে ইভিএমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে ইসির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে বির্তকের মুখে ইসি: চলতি বছরের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আবারও প্রশ্নের সম্মুখীন হয় ইসি। নির্বাচনে ভোট গ্রহণ নিয়ে কোনো প্রার্থীরই তেমন অভিযোগ না থাকলেও ভোটের ফলাফল ঘোষণার শেষ দিকে ভোটগণনাকালে ব্যাপক হইচই, হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলে, কিছু সময়ের জন্য ফলাফল ঘোষণা বন্ধ রাখে রিটার্নিং কর্মকর্তা। বন্ধ রাখার আগে মোট ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ৬২৯ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। ব্যাপক হট্টগোলে ২০/২৫ মিনিট ফলাফল প্রকাশ বন্ধ রেখে মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে মনিরুল হককে হারিয়ে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ফল ঘোষণার পর মনিরুল হক অভিযোগ করেন, আমাকে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে। এ নিয়ে ইসি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।

ইসির নির্দেশনা অমান্য করলেন এমপি বাহার: কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে এলাকা ছাড়তে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের ৮ জুন এ নির্দেশনা দেওয়া হলেও ১৫ জুন নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ছাড়েননি তিনি। ইসি বারবার এলাকা ছাড়ার অনুরোধ করলেও ইসির কোনো অনুরোধ আমলে নেননি এমপি বাহার। ফলে ইসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২৭ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত: চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৬১টি জেলা পরিষদের মধ্যে ২৭ জেলায় ২৭ জন একক চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে সদস্য পদে ১৯ এবং সাধারণ সদস্য পদে ৬৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদে ১১৪ জন প্রার্থী ভোটের আগেই নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে একজন দাঁড়াচ্ছে, আরেকজন দাঁড়াচ্ছেন না। কাজেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াটা বেআইনি নয়। আবার নির্বাচন কেউ অংশ নিতে পারবে না, এমন অবস্থার তৈরি হয়েছে, তা তো নয়। আমরা চাচ্ছি সবাই নির্বাচনে আসুক। কিন্তু কেউ যদি না আসে, কেমন করে তাদের আমরা আনব।’

গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও নির্বাচন স্থগিত: গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণের পর প্রথমে ৫০টি কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তারপরেও অনিয়ম বন্ধ করতে না পারায় পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি। স্বাধীনতার পর কোনো সংসদীয় আসনের পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা এর আগে ঘটেনি। এতে করে ক্ষমতাসীন দল বিব্রত হলেও ইসির ভাবমূর্তি কিছুটা বেড়েছে। পরে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির বিষয়টি প্রমাণ পাওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তকাসহ ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে বরখাস্তসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ডিসি, এসপিসহ অধিকাংশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো শাস্তিমূলক বব্যবস্থা না নেওয়ায় ইসির ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সারাবাংলা/জিএস/এনএস

নির্বাচন কমিশন (ইসি)

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর