ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা মারতে ‘খাজনার চাইতে বাজনা বেশি’
৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৩৭
ঢাকা: অন্যান্য বছরের মতো ২০২২ সালেও রাজধানীতে ছিল মশার উপদ্রব। একইসঙ্গে মশার তাণ্ডবে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা (২৮১ জন) ছাড়িয়ে গেছে আগের পরিসংখ্যানও (২০১৯ সালে ১৭৯ জন)।
মশক নিয়ন্ত্রণে এ বছর রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি অন্যান্য এলাকায়ও নেওয়া হয় নানা রকমের উদ্যোগ। মশকনিধনে শুধুমাত্র কীটনাশক ব্যবহারই নয় বরং আধুনিক প্রযুক্তি ড্রোন ব্যবহারের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে খাল, নালা, ড্রেনসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ছাড়া হয় ব্যাঙ। এছাড়াও নানা স্থানে মশক নিধন কার্যক্রমে ওষুধ ছেটানোর পাশাপাশি বাজানো হয় জিঙ্গেল। একইভাবে বিভিন্ন এলাকায় নাগরিকদের সচেতন করার জন্য বিলি করা হয় লিফলেট। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ‘প্রতি শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে, নিজ আঙ্গিনা করি পরিষ্কার’ শীর্ষক কার্যক্রমও দেখা যায়।
তবে বছরব্যাপী মশক নিধনের জন্য নানা ধরণের কর্মসূচি দেখা গেলেও বাস্তবে সেগুলো কতটুকু সফল হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কারণ অন্যান্য বছর সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও ২০২২ সালে দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র। ডিসেম্বর মাসেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে মানুষ।
নাগরিকদের অভিযোগ, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে গণমাধ্যমের সামনে মশক নিধনের জন্য নানা ধরণের উদ্যোগ নিয়ে কার্যক্রম চালাতে দেখা যায় সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টদের। তবে মশা মারতে কামান (ফগার মেশিন) দাগানো হলেও বছর জুড়ে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায় নি।
সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা দিয়েই নয় বরং মশক নিধনের প্রয়োজন নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সবাই যদি নাগরিক হিসেবে যার যার দায়িত্ব পালন না করে তবে মশক নিধন পুরোপুরিভাবে করা সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছরেও সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম ছিল অনেকটা ‘খাজনার চাইতে বাজনা বেশি’ হওয়ার মতো। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে না লাগিয়ে অনেক কর্মসূচি নেওয়া হলেও সেগুলোর ফলোআপ না থাকা ও কার্যকারিতা যাচাই না করায় এমন পরিস্থিতি। একইসঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত কোনো পদক্ষেপ না থাকার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে মানুষ, মারা গেছে শিশুরাও।
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ৬২ হাজার ৩৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে ৩৯ হাজার ১৯৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকা মহানগরীর দুই সিটি করপোরেশনের বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৩ হাজার ১৪১ জন।
৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৬১ হাজার ৭০৫ জন।
৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এর মাঝে ১৭৩ জন মারা গেছে ঢাকা মহানগরীর ২ সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে। এর বাইরে কক্সবাজারে মারা গেছে ২৬ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা গেছে।
এছাড়াও ঢাকা মহানগরীর বাইরে বিভাগের অন্য এলাকায় দুই জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ছয় জন, খুলনা বিভাগে ১২ জন, রাজশাহী বিভাগে সাত জন, বরিশাল বিভাগে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে রংপুর ও সিলেট বিভাগে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী দেশে অক্টোবর, নভেম্বর ও ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ হাজার ২৪৩ জন। শুধুমাত্র এই তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২২৬ জন। এর আগে দেশে কখনও বছরের শেষ ভাগে এতো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় নি।
মশক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র বাজেট
মশক নিয়ন্ত্রণে নানা অভিযান, পর্যাপ্ত কর্মসূচি, মশক নিধনকর্মীদের মনিটরিং, সপ্তাহ ও মাসব্যাপী বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, মশার ওষুধ-বাবদ ৪০ কোটি, কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনে চার কোটি, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের বিশেষ কর্মসূচিতে এক কোটি, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ২৫ কোটি এবং মশক নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযানে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখে ডিএনসিসি।
মশক নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি’র বাজেট
মশক নিয়ন্ত্রণে অভিযান, জরিমানা, মনিটরিং, সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি মশক নিধনের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় মশক নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশকে।
মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের নেওয়া উদ্যোগ
২০২২ সালের শুরুতেই মশার কামড় থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় দেড় হাজার মশারি বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রাথমিকভাবে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ মশারি বিতরণ করা হবে বলে জানানো হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মশারি বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মশার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণে মশারি বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিএনসিসির ভাণ্ডার ও ক্রয় বিভাগে মজুত থাকা এ মশারিগুলো দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০টি করে মশারি বরাদ্দ করা হয়েছে। সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট ৭২টি ওয়ার্ডে বিতরণ করা হবে ১ হাজার ৪৪০টি মশারি। কাউন্সিলররা ভাণ্ডার শাখা থেকে মশারিগুলো সংগ্রহ করে বিতরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান জানান, মেয়র কিছু মশারি অনুদান পেয়েছিলেন। ওই মশারিগুলো প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে দেওয়া হচ্ছে। তবে পরবর্তীতে এই কার্যক্রমে তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি।
কাউন্সিলররা জানান, কিউলেক্স মশার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার ফলে মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিতে আলোচনা হয়েছিল। মশারি চাওয়া হয়নি। মশারি বিতরণ করলে হয়তো কিছু পরিবার বা লোকের উপকার হবে। তবে সামগ্রিকভাবে মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীর মুক্তি মিলবে না।
ড্রোনের সাহায্যে মশক নিধনে চিরুনি অভিযান
২০২২ সালের জুলাই মাসে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোনের মাধ্যমে মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজতে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। ড্রোন থেকে ছবি ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া যায় তার একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করে এবং বছরের অন্যান্য সময় মশক নিধন কার্যক্রমে এটি কাজে লাগাবে বলে জানায় ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।
২ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হোটেল প্যারাডাইজে অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। ওই ছাদ থেকে ড্রোন উড়িয়ে আশপাশের ছাদগুলোতে খোঁজা নেওয়া হয় মশার উৎস। এতে মশার অস্তিত্ব আছে- এমন ভবনের তালিকাও করা হচ্ছে বলেও জানান ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের মশক নিধনকর্মীদের পক্ষে প্রতিটি বাড়ির ছাদে উঠে মশার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা কঠিন কাজ। অনেক বাসায় কর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। এছাড়া অল্পসংখ্যক লোকবল দিয়ে এ কাজ পরিচালনা করাও প্রায় অসম্ভব। যে কারণে একটি উঁচু ভবনে উঠে যখন আমরা ড্রোন উড়াচ্ছি, তখন আশপাশের শত শত বাড়ি কিন্তু আমরা এক ঘণ্টার মধ্যে দেখে ফেলতে পারছি। এতে যেমন কাজ সহজ হয়েছে, তেমনি দ্রুততার সঙ্গে মশার উৎপত্তিস্থল ছাদও কিন্তু আমরা চিহ্নিত করে ফেলছি।’
মশা মারতে জলাশয়ে ছাড়া হয় ব্যাঙ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মশা নিধনে নেওয়া হয় এক অভিনব পদ্ধতি। মশক নিধনে খাল, নালা, ড্রেনসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ব্যাঙ ছাড়ে ডিএসসিসি।
এর কারণে হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য কাজে লাগিয়ে ব্যাঙগুলো পানিতে ভাসতে থাকা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলবে। ফলে সেসব স্থানে মশা আর বংশবিস্তার করতে পারবে না।
সর্বশেষ ছিল মেয়রের সাতদিনের আল্টিমেটাম। ডিএনসিসি এলাকার কোনো স্থানে মশার প্রজননক্ষেত্র পেলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ছাড়া দেওয়া হবে না বলে জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।
গত ১২ ডিসেম্বর তিনি বলেন, ‘মালিক বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের জায়গা ও জলাশয় পরিষ্কার রাখতে হবে। সবাইকে সাতদিনের সময় দেওয়া হচ্ছে। ডিএনসিসি’র ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালাবে। কোথাও কচুরিপানা বা মশার প্রজনন ক্ষেত্র পাওয়া গেচলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে নিয়মিত মামলাও দেওয়া হবে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমাদের মশক নিধন কার্যক্রম ও অভিযান চলমান। অনেকেই দুই ভবনের মাঝখানে খালি জায়গায় ময়লা ফেলেন। এটি দ্রুত বন্ধ করুন। স্থানীয় ও হাউজিং সোসাইটির উদ্যোগে এগুলো বন্ধে কাজ করা চলছে। যে সব হাউজিং সোসাইটি মশার ওষুধ ছিটানোর মেশিন কিনেছেন। আমরা সেসব সোসাইটিকে বিনামূল্যে মশার ওষুধ সরবরাহ করব। বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও অন্যান্য ভবনের পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সরাসরি বৃষ্টির পানি নামার সারফেস ড্রেনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সারফেস ড্রেনে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ পেলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কিউলেক্স মশাও নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে সংস্থাটি।
কী বলছে কর্তৃপক্ষ?
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে অক্টোবর মাসেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, কিছুক্ষণ পরেই আবার রোদ হচ্ছে। এসব কারণেও ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা বাড়ছে। এজন্য সবাইকে এডিস মশা নিধনে সচেতন হতে হবে। সিটি করপোরেশন নিয়মিত মশা নিধনে কাজ করছে। নগরবাসীকেও দায়িত্ব নিতে হবে।’
অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় মশক নিধনেওষুধ ছিটানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের জিঙ্গেল বা সচেতনমূলক গান বাজানোর কার্যক্রম চালানো হয়। এই কার্যক্রমের আওতায় প্রতি এলাকায় দুজন করে মশক নিধনকর্মী ওষুধ ছিটিয়ে যান। পাশাপাশি আরেকজন হ্যান্ড মাইকে জিঙ্গেল বাজান যেখানে নানা রকমের সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হয়। এ সময় মশক নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীর করণীয় এবং তাদের সচেতনতার বার্তা প্রচার করা হয়।
ডিএসসিসি’র মুখপাত্র আবু নাছের জানান, মূলত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে জনসচেতনতা। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে জিঙ্গেলগুলো করা হয়েছে। এতে মানুষ আরও সচেতন হয়েছে, বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছে। মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করতে নানা এলাকায় অভিযান, মশক নিধনে ওষুধ ছেটানোর পাশাপাশি এই ধরনের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ডিএসসিসি।
মশক নিয়ন্ত্রণে মশার ওষুধ ছিটানোসহ অন্যান্য কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি ডিসেম্বর মাসে ডিএসসিসি এলাকার নানা স্থানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেলেও ডেমরা, নাসিরাবাদ, কদমতলী, জুরাইন, শ্যামপুর এলাকায় মশার উপদ্রব এখনও বেশি। এসব এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানায় ডিএসসিসি’র মুখপাত্র আবু নাছের।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যে পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ করছে, এভাবে কখনোই মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে না। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রথমত চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পাশাপাশি ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে যেখানে মশা বেশি, কোন ধরনের মশার উপদ্রব বেশি এবং এ মশার জন্য কোন ওষুধ কতটুকু ছিটাতে হবে তা নির্ণয় করে ওই জায়গায় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। তা হলে মশার প্রজনন কম হবে। এ পরিকল্পনাগুলো বছরের শুরু থেকেই কার্যকর করলে মশা নিয়ে আর কারও কথা থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘নানা ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এগুলোর কার্যকারিতা বিবেচনা করতে হবে। ফলাফল বিবেচনায় নিয়ে যদি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার সঙ্গে বছর জুড়ে কাজ করা যায় তবে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানোর সম্ভব হবে।’
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘সমন্বিতভাবে পুরো বছর জুড়েই কাজ করে যেতে হবে। সেটা না করে যদি শুধুমাত্র দায়সারা গোছের কাজ করা হয় তবে পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যায় না। এক্ষেত্রে আসলে নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে। আর তাই কর্তৃপক্ষের উচিত কিভাবে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করা।’
সারাবাংলা/এসবি/এমও