Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতায় অন্যরকম শিল্প প্রদর্শনী

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:২৬

ঢাকা: প্লাস্টিকের পানির বোতল দিয়ে তৈরি বিশাল গেট দিয়ে ঢুকতেই ডানদিকে চোখে পড়বে গাছের গুঁড়ির উপর শুয়ে থাকা বিশাল আকরের এক রঙিন মাছ। এরপরের গুঁড়ির ওপর বসে আছে বিশালাকার এক কচ্ছপ। সিমেন্ট বা ইট নয়, গাছের গুঁড়িগুলো তৈরি সিগারেটের পরিত্যক্ত ফিল্টার দিয়ে। আর মাছ ও কচ্ছপ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন আকারের পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে।

জনসাধারণকে পরিচ্ছন্নতা ও পরিশবেশ দূষণ বিষয়ে সচেতন করতে ভিন্নধর্মী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ‘বিডি ক্লিন’। স্বেচ্ছাসেবী ও অরাজনৈতিক এই প্রতিষ্ঠানের এটি তৃতীয় প্রদর্শনী। জনসাধারণের মধ্যে যেখানে-সেখানে ময়লা না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলার অভ্যাস গড়ে তোলার সচেতনতার বার্তা দিতে এই আয়োজন বলে জানালেন উদ্যোক্তারা।

বিজ্ঞাপন


২০১৬ সালে ‘পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন’ স্লোগানকে সামনে রেখে ‘বিডি ক্লিন’ প্রতিষ্ঠা করেন চিত্রশিল্পী ফরিদ উদ্দীন। জানালেন, পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ও ডাস্টবিন ব্যবহারে উৎসাহ দিতে ২০১৬ সালের ৩ জুন যাত্রা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য মানসিকতার মানোন্নয়নের চর্চার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মানুষকে আদর্শবান সুনাগরিক হিসেবে পরিচিতি তৈরি করা।

জানা গেল, যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলার ব্যক্তিগত সচেতনতা তো ছিলই। ২০১৬ সালে রাজধানী ঢাকায় ডাস্টবিন দেওয়া দেওয়া হয়েছিল। সেসময় অনেক ডাস্টবিনেই দেখা যায় ময়লা বাইরে পড়ে আছে কিন্তু ভেতরে ফাঁকা। এটি দেখে তার মনে হয় এভাবে করলে হবে না, মানুষকে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার কাজে সচেতন করতে হবে। ২৮ মে চিন্তা মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে নাম, লোগো, টি-শার্ট সব রেডি করে পাঁচদিনের মাথায় কিছু বন্ধু-বান্ধব ও ছোট ভাইবোনকে সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়েন কাজে। ২ জুন দিবাগত রাতে শাহবাগ থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন তারা। প্রথমদিনের যাত্রায় ছিল ২৩ জন আর বর্তমানে পুরো দেশে ৫৮ জেলা ও দেড়শর বেশি উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবী আছেন ৪০ হাজার।

বিজ্ঞাপন

মানুষকে সচেতন করতে শিল্পকে বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মানুষকে মুখে বললে যতটা না সচেতন হয়, শিল্পের মাধ্যমে তার থেকে কয়েক গুণ বেশি জোরালো ও কার্যকরী বার্তা দেওয়া যায়। একটি ছবি বা শিল্প মানুষকে সহজে আকর্ষণ করে। তাই প্লাস্টিকের বোতল, সিগারেটের ফিল্টার, প্লাস্টিকের প্যাকেট ইত্যাদির মাধ্যমে নানা বৈচিত্রের শিল্পকর্ম তৈরি করে মানুষকে সচেতন করছেন তারা। ২০১৯ সালে প্রথম প্রদর্শনীতে তারা প্লাস্টিক দূষণ ফুটিয়ে তুলেছিলে। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে বাদ গেলেও ২০২১ সালে ফিরে আসেন রাসায়নিক দূষণ নিয়ে যা ফুটিয়ে তোলেন সিগারেট ফিল্টার দিয়ে তৈরি শিল্পকর্মের মাধ্যমে। এবার ‘সেভ আর্থ সেভ বাংলাদেশ’ এর তৃতীয় প্রদর্শনীতে প্লাস্টিক বোতল, সিগারেটের ফিল্টারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চিপসের প্যাকেট।”

শিল্প নিদর্শন হিসেবে মাছ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের কারণে এখন আর আগের মত মাছ উৎপাদন হচ্ছে না। সেটি বোঝাতে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে মাছ তৈরি করা হয়েছে। প্রাণিজগতের ক্ষতি ফুটিয়ে তুলতে কচ্ছপ। কচ্ছপের পরেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৮০ ফিট বাই ৮০ ফিটের একটি চিত্রকর্ম। এটিও তৈরি হয়েছে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে। আছে একই মাপে ও রঙের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিও।’

প্লাস্টিক বোতলে তৈরি নানা আকারের দেওয়াল ছাড়াও এখানে দেখা যাবে সিগারেট ফিল্টারে তৈরি বিশালাকার একটি সিগারেট ফিল্টার, পাতাবিহীন গাছ। সিগারেটের ফিল্টারসহ অন্যান্য রাসায়নিক দূষণের ফলে কীভাবে আমাদের প্রকৃতির সবুজ বিনষ্ট হচ্ছে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এর মাধ্যমে। দেখা যাবে চিপসের প্যাকেটের তৈরি বিশালাকার ব্রেইন। মাইক্রো প্লাস্টিক কীভাবে আমাদের শরীরের ক্ষতি করছে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এর মাধ্যমে। সবশেষে দেখা যাবে বিশাল আকারের একটি গ্রেনেড যা দূষণের ভয়াবহতার মাত্রা তুলে ধরেছে। এভাবে নানা শিল্পকর্ম ও গেট ছাড়াও এখানে স্থাপিত পোডিয়ামও তৈরি হয়েছে প্লাস্টিকের বোতল ও প্যাকেট দিয়ে।

শিল্পকর্মগুলো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে ৩০ টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল, ৬ টন চিপসের প্যাকেট ও পাঁচ হাজার কেজি অর্থাৎ ৩ কোটির বেশি সিগারেটের পরিত্যক্ত ফিল্টার। সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করা এসব বর্জ্য দিয়ে তৈরি শিল্পকর্ম নিয়ে মহাখালীর ওয়্যারলেসের টিএনটি মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৯ দিনব্যাপী (৩০ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি ২০২৩) এক প্রদর্শনী।

গতকাল শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। বিডি ক্লিনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘বিডি ক্লিন শুধু নামে না, কথায় না, কাজের মাধ্যমে, ত্যাগের মাধ্যমে, কষ্টের মাধ্যমে তাদের অবস্থান প্রমাণ করেছে। বিডি ক্লিনের সদস্যরা নিজেদের খেয়ে পরের মোষ তাড়িয়ে তারা পরিবেশের জন্য কাজ করছে। এটি ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। এই সুনাম ধরে রাখতে হবে।’

এসময় বিডি ক্লিনকে দশ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সবশেষে মেয়র দেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও দেশের আইন মেনে দেশসেবার জন্য ‘বিডি ক্লিনে’র সদস্যদের শপথ পাঠ করান।

সারাবাংলা/আরএফ/এমও

প্লাস্টিক প্লাস্টিক দূষণ শিল্প প্রদর্শনী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর