Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রফতানি হচ্ছে চলনবিলের শুঁটকি, দেশে মিলছে না ন্যায্যমূল্য

মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, লোকাল করেসপন্ডেন্ট
১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৫৪

নাটোর: চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়ার মিঠাপানির শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শুঁটকির উৎপাদনও। চড়া দামেই এসব শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে। তবে একটি মাছ সংরক্ষণাগার থাকলে শুঁটকির উৎপাদন আরও বাড়বে বলে মনে করছেন উৎপাদনকারীরা। শুঁটকির চাহিদার পাশাপাশি উৎপাদন বাড়তে থাকলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শুঁটকি উৎপাদনকারীদের। আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ন্যায্যমূল্য থেকে তাদের বঞ্চিত করছেন বলে জানান শুঁটকি উৎপাদনে জড়িত ব্যক্তিরা।

বিজ্ঞাপন

ভোজনরসিক বাঙালির প্রিয় খাদ্যের মধ্যে অন্যতম রসনা দেশিয় প্রজাতির শুঁটকি। হরেকরকম রান্না করা যায় বলে দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। স্বাদ-গন্ধে অতুলনীয় মিঠা পানির শুঁটকির প্রতি সবারই কমবেশি আগ্রহ আছে। নানা জাতের শুঁটকি উৎপাদনে দেশজোড়া খ্যাতি রয়েছে চলনবিলের শুঁটকির। শুঁটকির এসব চাতাল থেকে প্রতি মৌসুমে প্রায় চার’শ মেট্রিক টন দেশি প্রজাতির মাছের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়।

শুঁটকির মধ্যে আছে পুঁটি, চিংড়ি, টেংরা, খলসে, পাতাসী, আইকোর, চাঁদা, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কইসহ বাহারি মাছ। বাঁশের মাচায়, ছইয়ে ঢাকা চালার নিচে স্তুপ করে রেখে শুকানো হয় শুঁটকি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব শুঁটকি বাণিজ্যিকভাবে রফতানি হচ্ছে বিদেশে। ভারত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশেও দিন দিন কদর বাড়ছে সিংড়ার চলনবিলের মিঠা পানির এসব শুঁটকির।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ধারে নিংগইন এলাকায় গড়ে উঠেছে চলনবিলের সর্ববৃহৎ শুঁটকি চাতাল। এখানে রয়েছে ৫টি শুঁটকির চাতাল। এছাড়া উপজেলার জোলারবাতা, বড়িয়াসহ ৭টি স্থানে গড়ে উঠেছে শুঁটকি চাতাল। নারী-পুরুষ মিলে এই চাতালে কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ কাটা, বাছাই, ধোয়া, রোদে শুকানো, তোলার কাজে শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাস্তার পাশে মাচার ওপর শুঁটকির পসরা সাজিয়ে বিক্রিও করছেন কেউ কেউ। মহাসড়কের পাশে গাড়ি থামিয়ে অনেকেই কিনে নিচ্ছেন শুঁটকি।

শুঁটকি উৎপাদনকারী শাহ্ আলম বলেন, ‘মাছের আড়ৎ থেকে বিভিন্ন দামে মাছ কিনে আমরা এ চাতালে আনি। এরপর মাছ কেটে পরিষ্কার করে রোদে শুকাই। শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রফতানি করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এখানে এসেও শুঁটকি কিনেন।’

বিজ্ঞাপন

নিংগইন শুঁটকি চাতালের মালিক দৌলত হোসেন ও জয়নাল আবেদীন জানান, ৩ কেজি পুঁটি মাছে ১ কেজি, ৪ কেজি চিংড়ি মাছে ১ কেজি, ৩ কেজি শোল মাছে ১ কেজি, ৪ কেজি মলা মাছে ১ কেজি এবং সাড়ে ৩ কেজি গুচি মাছে ১ কেজি করে শুঁটকি পাওয়া যায়। এর মধ্যে পুঁটি মাছের শুঁটকির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। উৎপাদন খরচ কম হলেও দাম বেশি পাওয়া যায়।

তারা জানান, শোল মাছের শুঁটকির কেজি আকারভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, পুঁটি ৩০০ টাকা, টাকি ৩৫০ টাকা, চেলা ৬০০ টাকা, পাতাসি ৮০০ টাকা, গুচি আকারভেদে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, কাঁচকি ৭০০ টাকা, বোয়াল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা ও বাইম ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তারা আরও জানান, প্রক্রিয়াজাতকরণে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার না করায় স্বাদ অক্ষুন্ন থাকে। তাই খুচরা ক্রেতারও অভাব হয় না।

শুঁটকির উৎপাদনসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চলনবিলে একটি মাছ সংরক্ষণাগার থাকলে বর্ষার সময় মাছগুলো ধরে রেখে শীতের শুরুতে শুঁটকি তৈরি করা যেত। একটি মাছ সংরক্ষণাগারই উন্মোচন করতে পারে চলনবিলের মাছকেন্দ্রিক অর্থনীতির নতুন দিগন্ত।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন বলেন, ‘শুঁটকি মাছ এখন রফতানি পণ্য। সঠিক উপায়ে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা গেলে সারা বছরই শুঁটকি মাছ বাজারজাত করা সম্ভব। চলনবিলের মিঠা পানির মাছ থেকে উৎপাদিত এখানকার শুঁটকির গুণগত মান ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত। যারা শুঁটকি উৎপাদন করছেন আমরা তাদের প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। এবছর চলনবিলে বর্ষার পানি বিঘ্ন হওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। যার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম উৎপাদন হতে পারে। যেহেতু শুঁটকি বিদেশে রফতানি হচ্ছে সে ক্ষেত্রে উৎপাদন কম হলেও উৎপাদনকারীরা লাভবান হবেন।’

সারাবাংলা/এমও

চলনবিলের শুঁটকি ন্যায্যমূল্য রফতানি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর