উন্নয়নের উচ্ছ্বাসে ভোটের মাঠে ছুটবে আওয়ামী লীগ
১ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:৫২
ঢাকা: উন্নয়নের উচ্ছ্বাসে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধারাবাহিক জয়ের প্রত্যয়ে নতুন বছরের পথচলায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিদায়ী বছরে করোনা অতিমারির সংকট থেকে বেরিয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের প্রভাবে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে পরে সরকার। এরপরও বিদায়ী বছরের প্রত্যয়ে নতুন বছরে সাংগঠনিক শক্তিতে ভর করে দৃশ্যমান উন্নয়নে নৌকার জয়রথ এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বিদায়ী বছরে জনমুখী বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন, অন্যদিকে সাংগঠনিক শক্তি সুসংহত করে আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয়কে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ছিল। পদ্মা সেতু থেকে মেট্রোরেলের একাংশ রুট উদ্বোধন, মধুমতি সেতু থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে’র দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি শেষে উদ্বোধন, ১০০টি ব্রিজ ও সড়ক-মহাড়কের একই দিনে উদ্বোধন, জাপানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের বাস্তবায়ন সাফল্য আগামী নির্বাচনে ভোটের মাঠে স্বস্তি দেবে দল ও সরকারকে এমনটাই মনে করেন দলের হাইকমান্ড।
‘যতবারই হত্যা করো, জন্মাব আবার; দারুণ সূর্য হব, লিখব নতুন ইতিহাস’- তাই প্রমত্ত পদ্মার বুকে ৪২টি স্তম্ভকে স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দলকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
বছরজুড়ে দেখা যায়, বিদায়ী বছরে করোনা অতিমারির সংকট পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের প্রভাবে বাংলাদেশ সরকার সবচেয়ে বেশি ঝামেলাপূর্ণ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে বাধ্য হয়। বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমদানির বাড়তে থাকে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। ডলার স্বল্পতার সংকটও ঘনীভূত হয়। মূল্যস্ফীতি দেখা দিলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দেশের মানুষকে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় নেওয়ার পরও গ্যাস স্বল্পতার কারণে জ্বালানি সংকট দেখা দিলে লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে নেতিবাচক প্রভাব জনগণের ভিতর। সরকারবিরোধীরা দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার দায় চাপার কৌশল নেয়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কথার রাজনীতি। সরকার বিরোধী পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শ্রীলংকার মতো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে যাবে বলে গুজব ছড়ানো শুরু করে। সরকারের পক্ষ থেকে গুজবের ব্যাপারে পাল্টা জবাব দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করতে হয়।
বৈশ্বিক সংকটের কারণে অর্থনৈতিক মন্দার ঘনঘটার মধ্যেও খোলে বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের সেতু পদ্মা সেতুর দ্বার। বিদায়ী বছরের ২৫ জুন স্পর্ধিত বাংলাদেশের নবযাত্রার দ্বার উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পদ্মা সেতুর ৪২টি স্তম্ভকে স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হিসাবে আখ্যায়িত করেন। সবশেষ যানজট ভোগান্তির রাজধানীতে মেট্রোরেল একাংশ রুট উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)’ অর্জন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভের অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির গতিপথের এগিয়ে নিতে চায়। টানা তিন মেয়াদে ১৪ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার জনকল্যাণমুখী, সমৃদ্ধ, সমতা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণে জাতিকে অগ্রসরমান অভূতপূর্ব সাফল্য ও অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রত্যয়ই হবে দলটির নতুন বছরে পথচলার অঙ্গীকার।
এদিকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০৯৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২১৭৯টি ইউনিয় পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়। এই সময়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৮২টির মধ্যে ৩৩৯টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হয়। ৩১৮টি পৌরসভার মধ্যে ২৫১টিতে মেয়র প্রার্থী পদে নৌকার প্রার্থী নির্বাচিত হয়। ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৫০ জন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৩টি সংসদীয় আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জয়লাভ করে।
বিদায়ী বছরে ২২তম জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে তৃণমূল থেকে সংগঠন শক্তিশালি করার কাজ শুরু করে। একইভাবে সহযোগী সংগঠনের দিকেও নজর দেয় আওয়ামী লীগ। ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে নতুন নেতৃত্বের পথচলায় আগামী জাতীয় নির্বাচন অভিমুখে জয়ের প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার গ্রহণ করে। আর পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একুশ শতকের উপযোগী আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে কাজ করছে বলেও মনে করে দলটির নেতারা।
নেতাদের মতে, নতুন বছরে দ্বাদশ জয়ে ভোটের মাঠে ছোটা শুরু করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বিভাগীয় সমাবেশ-জনসভা করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ভোট প্রার্থনায় নামবেন। নতুন বছরে ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় নির্বাচনি জনসভা হবে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি জনসভায় যোগ দেবেন সংগঠনটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া বিদায়ী ২০২২ সালে ৪ নভেম্বর যশোর, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে মহাসমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। তিন মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
করোনাপরবর্তী সময়ে যশোরে জনসভার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ঢাকার বাইরে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেন। দীর্ঘদিন পর দলীয় নেত্রীকে সশরীরে পেয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্যোম সৃষ্টি হয়। সমাবেশ থেকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে আগামী নির্বাচনেও নৌকায় ভোট প্রার্থনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ১১ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সুবর্ণজয়ন্তীর যুব সমাবেশে ক্ষমতাসীন যুব শক্তির মহড়া হয়। এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে সরকার টানা মেয়াদে সাফল্যের সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে বলে দাবি করেন। এখন ডিজিটাল যুগ পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে প্রবেশ করার প্রত্যয় করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প সকল ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ন্যানো টেকনোলজি ইত্যাদি ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে তৃণমূল পর্যায় থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে সব কাজ সম্পাদিত করার অঙ্গীকার করেছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অনুসঙ্গ ধারণ করে তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ হিসাবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠা, ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন সেন্টার স্থাপন ও ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্থাপন, ৯২টি হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের কাজ অগ্রসর হয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্ন্যান্স এবং স্মার্ট সোসাইটি-এই চারটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি; এই ভিশন ইতোমধ্যে জাতির সামনে তুলে ধরেছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যোগাযোগ প্রযুক্তির সফলতার ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ আগামীতে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা নিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার অঙ্গীকারে বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের কাজ জোরদার হবে।
এসডিজি’র অভীষ্টসমূহ বাস্তবায়নে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট দেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রাকে এখন এগিয়ে নিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নতুন বছরে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকেই এগোচ্ছে দলটি।
সারাবাংলা/এনআর/এমও