মাতৃভাষায় বই পেল পাহাড়ের শিশুরা
১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩৯
রাঙ্গামাটি: পুরোনো বছরের জীর্ণতা ও সব গ্লানিকে পেছনে ফেলে ২০২৩ খ্রিস্টীয় বছর স্বাগত জানাল। আর স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বছরের সেই আনন্দকে বাড়িয়ে দিয়েছে বই উৎসব। বছরের প্রথম দিন সকালেই নতুন বই নেওয়া জন্য নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটে গেছে শিক্ষার্থীরা। এদিন নিজেদের মাতৃভাষায় নতুন পাঠ্যপুস্তুক পেয়েছে পাহাড়ের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর শিশু শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় জেলা শহরে অবস্থিত বনরূপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবারের বই উৎসবের উদ্বোধন করেছেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। এসময় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস (ডিপিইও) মো. সাজ্জাদ হোসেনসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘বছরের প্রথমদিনে শিশুদের হাতে বই পৌঁছাতে পারছি, সেজন্য গর্ববোধ করছি। পাশাপাশি আমাদের তিন পার্বত্য জেলায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষী শিশুদের মাতৃভাষায় বই দেওয়া হচ্ছে৷ এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই উদ্যোগকে পূর্ণ বাস্তবায়নে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদসহ এখানকার শিক্ষা বিভাগের সকলে মিলে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাতৃভাষায় বই পেলেও এখনো তাদের সিলেবাস (পাঠক্রম) পদ্ধতি চালু হয়নি। এটা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মাতৃভাষার শিক্ষায় পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়টি এখনো আমাদের গাইডলাইনে আসেনি। এটি নিয়ে আলোচনা করে গাইডলাইন মোতাবেক পরীক্ষাপদ্ধতি চালু করা যায় কি না, সেটি আমরা দেখছি।’
এদিকে, এদিন সকাল থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জেলার সব উপজেলার প্রায় সবগুলো প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই উৎসব হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিপিইও কার্যালয়। তথ্যমতে, এ বছর পুরো জেলায় সরকারি-বেসরকারি ১ হাজার ৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৯ হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি বই বিতরণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, জেলায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ২৯ হাজার ৮০৬ শিক্ষার্থীকে ৬৭ হাজার ৭৫০টি মাতৃভাষার বই দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চাকমা ভাষার বই দেওয়া হচ্ছে ৫৩ হাজার ২২৪টি, মারমা ভাষার বই দেওয়া হচ্ছে ১০ হাজার ৮২১টি এবং ত্রিপুরা ভাষার বই দেওয়া হচ্ছে ৪ হাজার ১০১টি। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা— এই তিন ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের প্রাক-প্রাথমিকে দুইটি বই, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে তিনটি এবং তৃতীয় শ্রেণিতে একটি করে বই থাকবে। তবে জনসংখ্যাগত দিক দিয়ে রাঙ্গামাটি জেলায় মারমা ও ত্রিপুরাদের চেয়ে চাকমাদের বসবাস বেশি হওয়ায় এ নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাই বেশি বই পাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে দেশের ‘ক্ষুদ্র’ নৃগোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য বই বিতরণ করে আসছে সরকার। সে বছর থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, এবং সাদ্রি— এই পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ শুরু হলেও তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষী শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক থেকে বই পাচ্ছে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণি, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণি ও ২০২০ সালে তৃতীয় শ্রেণিতেও মাতৃভাষায় বই পেয়েছে তারা।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, কেবল তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্তই মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা। তবে পাহাড়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ছাড়াও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী বসবাসরত করলেও তাদের সন্তানেরা মাতৃভাষায় পড়তে পারছেন না।
সারাবাংলা/এনএস