Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইতিহাসের সাক্ষী ‘ছয় দফা’ মঞ্চ নিয়ে খুলল লালদিঘী ময়দান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সংস্কার এবং ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে এমন সব স্থাপনা নিয়ে নতুন রূপে সাজানো চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানের গেইট খুলল প্রায় তিন বছর পর। আগের ভাঙাচোরা সীমানা দেওয়ালগুলো সংস্কার করা হয়েছে, নির্মাণ করা হয়েছে ‘ছয় দফা মঞ্চ’। বালির মাঠটি ঢেকে দেওয়া হয়েছে সবুজ ঘাসে।

সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আনুষ্ঠানিকভাবে লালদিঘী ময়দান উন্মুক্তের ঘোষণা দিয়ে ‘মাঠের মালিক’ সরকারি মুসলিম হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। তিন বছর পর খোলা পেয়ে মুসলিম হাইস্কুলের ছাত্ররা ফুটবল নিয়ে নেমে পড়ে মাঠে। কেউ আবার ব্যাট-বল নিয়ে নামে। সবুজ ঘাসের ওপর বসে, গড়াগড়ি দিয়ে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিশুরা।

সদ্যসমাপ্ত ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এসে যে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন, তার মধ্যে একটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ‘লালদিঘী মাঠ আধুনিকায়ন’ প্রকল্প। এর একমাসের মাথায় মাঠটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো।

লালদিঘী ময়দান আধুনিকায়নের মূল উদ্যোক্তা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘এই লালদিঘীর মাঠে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও এখানে জনসভা করেছেন, উনার সভা এখানে ইতিহাস হয়ে রয়েছে। লালদিঘী মাঠের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়। এটা মূলত স্কুলের শিক্ষার্থীদের খেলার জায়গা। তবে মাঠে বিভিন্ন দোকানপাট বসতো। গাড়ি পার্কিং করে রাখা হতো। অন্ধকার নামলে অসামাজিক কার্যকলাপ হত। ঐতিহাসিক এই মাঠের ঐতিহ্য দিন দিন হারাতে বসেছিল।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাঠটি আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খুবই কম খরচে কাজটি আমরা সম্পন্ন করেছি। কোভিডের কারণে আমাদের কার্যক্রম ব্যহত হয়েছে। সময় না পাওয়ায় জনসম্মুখে মাঠের উদ্বোধন করতে পারিনি। এখন শিক্ষার্থীরা এখানে খেলতে পারবে। স্থানীয় শিশু-কিশোররাও খেলতে পারবে। বয়স্করা এখানে এসে হাঁটাহাঁটি করবেন। মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।’

আগের নিয়মে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি করা যাবে জানিয়ে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো আগে যেভাবে বুকিং দিয়ে সভা-সমাবেশ করেছে, সামনেও একইভাবে করতে পারবে। সিটি করপোরেশন এ মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে। জেলা প্রশাসনের একটি কমিটি থাকবে। সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কার্যক্রেমের অনুমোদন এ কমিটিই দেবে।’

‘মাঠের চারপাশে যে দেওয়াল, সেগুলো এমনভাবে তোলা হয়েছে, যাতে সবাই সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে। নিয়মিত সাংস্কৃতিক আয়োজনের কথা মাথায় রেখে একটি মঞ্চ করা হয়েছে। একটি গ্রিন রুমও করা হয়েছে, সেখানে সাংস্কৃতিক কর্মীরা রিহার্সেল করতে পারবেন।’ লালদিঘী মাঠ উন্মুক্ত হওয়ায় ডিসি হিলে অনুষ্ঠানের চাপ কমবে বলে মন্তব্য করেন উপমন্ত্রী।

তবে জব্বারের বলিখেলার মেলা মাঠে বসতে দেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জব্বারের বলিখেলা চটগ্রামের ঐতিহ্যের অংশ। বলিখেলা মাঠেই হবে। তবে কোনো ধরনের মেলা ও গাড়ি পার্কিং এখানে করতে দেওয়া হবে না।’

মাঠের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য নগরবাসী প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি- চট্টগ্রামের মানুষের আবেগের জায়গা এ লালদিঘীর মাঠ সেটা যেভাবে আছে সেভাবেই যেন থাকে।’

৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কাজ শেষের পরও উদ্বোধনের অপেক্ষায় লালদিঘী ময়দান বন্ধ ছিল প্রায় একবছর।

স্থানীয় ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই লালদিঘী ময়দানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফাসহ বিভিন্ন সংগ্রামের সাক্ষী এই ময়দান। ১৯৮৮ সালে লালদিঘীতে জনসভায় যোগ দিতে আসার পথে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল। ইতিহাসের সেইসব ঘটনা নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে তুলে ধরা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয়ের উদ্যোগে এই কাজের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’

মাঠে মোট ১৮টি টেরাকোটায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ঐতিহাসিক সব ঘটনা। ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণ, ভাষা আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শহিদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত ও মাস্টারদা সূর্যসেনের ম্যুরাল, ৫৪’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর প্রচারণা, ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তুরের গণঅভুত্থান, ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনি প্রচারণা, ৭ মার্চের ভাষণ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ- স্থান পেয়েছে টেরাকোটায়।

এছাড়াও আছে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের দেয়াল চিত্র। শিশু কর্নারে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দেয়াল চিত্র আছে। মঞ্চে ছয় দফার তিনটি করে দফা দুইপাশে সংক্ষিপ্ত আকারে মুদ্রিত আছে। মাঝের অংশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে জাতির পিতার সভা এবং ছয় দফার দাবিতে মিছিল সমাবেশের ছবি আঁকা আছে। চারপাশে সীমানা দেওয়াল ঘেরা মাঠে আছে কিডস কর্নার, বসার বেঞ্চ আর ওয়াকওয়ে।

সারাবাংলা/আইসি/আরডি/পিটিএম

ইতিহাস টপ নিউজ লালদিঘী ময়দান সাক্ষী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর