Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করে পরিবার’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:২৯

ঢাকা: শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ও মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম। অথচ দেশের শিক্ষা ব্যয়ের যে খরচ তার ৭১ শতাংশই বহন করতে হয় পরিবারকে। এনজিও বা বেসরকারি স্কুলের ফি ও ব্যয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় তিনগুণ। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে এ ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় নয় গুণ।

‘ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ইউনেসকো গ্লোবাল অ্যাডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা সংক্রান্ত গবেষণা করেছে। এতে সহযোগী হিসেবে রয়েছে ব্র্যাক। প্রতিবেদনটি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রকাশ করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে। আবার বাংলাদেশে মাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।

এতে দেখা যায়, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় সর্বোচ্চ বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শ্রীলঙ্কায় ৮০ শতাংশ, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাংলাদেশে ৫৫ শতাংশ। প্রাথমিকে সর্বোচ্চ ভারতে ৪৫ শতাংশ, বাংলাদেশে ২৪ শতাংশ। মাধ্যমিকে বাংলাদেশের বেসরকারি বিদ্যালয়ে সর্বাধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ৯৪ শতাংশ, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভারতে ৫১ শতাংশ এবং উচ্চ শিক্ষায় সর্বোচ্চ ভারতে ৫৭ শতাংশ আর বাংলাদেশে এ হার ৩৬ শতাংশ। গড়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেসরকারি খাতে নির্ভরতা বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে শিক্ষা ব্যয়ের ৫৭ শতাংশ বহন করে পরিবার। নেপালে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় পরিবারের ব্যয় ৬৩ শতাংশ এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে ৭৫ শতাংশ, যেখানে সরকারি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে এই ব্যয় হার ৮ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

ভারতে শীর্ষ ২০ শতাংশ পরিবার নিচের ২০ শতাংশ পরিবারের তুলনায় সরকারি, বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং অনুদানবিহীন সবরকম স্কুলে প্রায় চারগুণ বেশি ব্যয় করে। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে পরিবার সরকারি স্কুলের তুলনায় বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং অনুদানবিহীন স্কুলে পাঁচগুণ বেশি ব্যয় করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় করে এবং ৬ শতাংশ পরিবার স্কুলের ফি মেটাতে ঋণ করে থাকে। এছাড়া প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবার ঋণ করে সন্তানদের বেসরকারি পলিটেকনিকে পড়াশোনার খরচ মেটায়।

ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় অ-রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণকারীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারি শিক্ষার্থী ঋণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি’র ওপর কর আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। ফলস্বরূপ, কিছু সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছিল।

ইউনেসকোর এই প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের এক হাজার ৫০টি কম ফি’র বেসরকারি স্কুলের মধ্যে এক হাজার স্কুল শুধুমাত্র ফি’র ওপর নির্ভর করে চলে। অন্যদিকে, আফগানিস্তান, ভারত এবং নেপালের শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো ফি’র ওপর নির্ভরতা এবং সরকারি তহবিলের অভাবকে তাদের কর্মসূচির উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মনে করে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হলেও রাষ্ট্রগুলোর বিনিয়োগ অপ্রতুল। একমাত্র ভুটান ছাড়া এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো কখনোই শিক্ষাক্ষেত্রে মোট সরকারি বায়ের ১৫ শতাংশ বা মোট দেশীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ শতাংশের কাছাকাছিও ব্যয় করেনি। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এক দশকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা শিক্ষা খাতে মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশেরও কম ব্যয় করেছে। গুণগতমান এবং শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা তাই একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মঞ্জুর আহমেদ, ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ ও গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

পরিবার শিক্ষা ব্যয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর