Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তীব্র শীতে বেড়েছে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়ার প্রকোপ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৩২

ছবি: সারাবাংলা

সিরাজগঞ্জ: তীব্র শীত, বাতাস ও ঘন কুয়াশায় জেলায় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শাসকষ্ট রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এক সপ্তাহে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ৪২০ জন ডায়রিয়া ও ৬৪ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন নানা বয়সের রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।

এদিকে অতিরিক্ত রোগীর চাপ হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এছাড়া শয্যা খালি না থাকায় অনেকে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে অভিভাবকরা সচেতন হলে এই রোগ থেকে শিশুদের সহজে রক্ষা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বিজ্ঞাপন

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া কাজিপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ জন, রায়গঞ্জে ৫৭ জন, তাড়াশে ৩০ জন, উল্লাপাড়ায় ৬২ জন, বেলকুচিতে ৪২ জন, শাহজাদপুরে ২২ জন, কামারখন্দে ১৩০ জন ও সদর হাসপাতালে ৫০ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর গত সাতদিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৬৪ জন। যাদের অনেকের বয়স এক থেকে দেড় বছর।

রায়গঞ্জ উপজেলা থেকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আল্পনা বেগম জানান, তার সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে দুইদিন চিকিৎসা শেষে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তার সন্তান অনেক ভালো আছে।

বেলকুচি উপজেলার চালা গ্রামের হামিদ শেখ বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। চিকিৎসা চলছে। পাতলা পায়খানা কমে নাই। চিড়া আর স্যলাইনের পানি খাচ্ছি। শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এখন একটু ভালো আছি।’

বিজ্ঞাপন
ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

সেবা নিতে আসা শহরের বাহিরগোলা মহল্লার কহিনুর বেগম বলেন, ‘তিন দিন আগে মেয়ের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। প্রথম দিন শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে মেয়ের। এখন অবস্থা কিছুটা ভালো।’

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স জীবন্নাহার জানান, এক সপ্তাহ ধরে ৫০ জন ডায়রিয়া এবং ৩৬ জন নিউমোনিয়া রোগী ভর্তি রয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সকালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০ জন। ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যারা রোগীর কাছে থাকেন তারা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর খাওয়া-দাওয়া করার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

হাসপাতালের শিশু বিশেজ্ঞ ডা. মেহেদি হাসান বলেন, ‘রাত ও দিনে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শিশুদের এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়া ধুলাবালিও এসব রোগ বৃদ্ধির কারণ। এজন্য ঠাণ্ডা ও গরম থেকে শিশুদের সতর্কভাবে রাখতে হবে। তাছাড়া ধুলাবালির সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া ওয়ার্ডের সংখ্যা ৪০টি। এতে সিটের স্বল্পতা থাকায় ডাক্তাররা পরিস্থিতি ঠিকমতো সামাল দিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে হাসপাতালের পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে রয়েছে।’

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘তীব্র শীতের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। ঠাণ্ডার কারণে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত এসব রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তাদের সব সময় গরম পরিবেশে রাখতে হবে। ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য সব সময় গরম খাবার খেতে হবে। কোনো সময় ঠাণ্ডা বা পচা-বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, ‘এক সপ্তাহে তীব্র শীতই মূলত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগ বৃদ্ধির কারণ। তবে ঠাণ্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত মজুত আছে। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য কম্বলের ব্যবস্থা রয়েছে। এই রোগ থেকে শিশুদের রক্ষায় অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে।’

এদিকে সিরাজগঞ্জে তাড়াশের আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, নদী অববাহিকা অঞ্চলগুলোতে ঘন কুয়াশা পড়েছে। এ অঞ্চলে আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।

সারাবাংলা/এনএস

টপ নিউজ সিরাজগঞ্জ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর