বেসরকারি স্কুল-কলেজে ৮০% অর্থ অনুদান দেয় সরকার
৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:২৪
ঢাকা: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, দেশে বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ২০ হাজার স্কুল-কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের ৮০ শতাংশ অর্থ সরকারিভাবে অনুদান দেওয়া হয়। ইউনেসকো যেসব সমস্যা তুলে ধরেছে সরকার সেগুলো নিয়ে কাজ করছে।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ইউনেসকোর ‘গ্লোবাল অ্যাডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২’-এর প্রতিবেদনের বিষয় উল্লেখ করে এসব কথা বলেন দীপু মনি।
এদিন ‘গ্লোবাল অ্যাডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২’র রিপোর্টে জানানো হয়, দেশের শিক্ষা ব্যয়ের যে খরচ তার ৭১ শতাংশই বহন করতে হয় পরিবারকে। এনজিও বা বেসরকারি স্কুলের ফি ও ব্যয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় তিনগুণ। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে এ ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় নয় গুণ।
ইউনেসকো প্রথমবারের মতো গ্লোবাল অ্যাডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা সংক্রান্ত গবেষণা করে। এতে সহযোগী হিসেবে রয়েছে ব্র্যাক। প্রতিবেদনটি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রকাশ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে রিপোর্টের বিষয়ে জানানোর পরে দেশের শিক্ষাখাতের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে হয়রানি ও ভর্তিযুদ্ধ বন্ধ করতে আমরা লটারি পদ্ধতি চালু করেছি। গত দুই বছর ধরে লটারির মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করা হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষার সময় একধরনের যুদ্ধ সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে শিশুদের মনে আঘাত এলেও অভিভাবকরা তাতে নজর দিতেন না। এসব বিবেচনা করে ভর্তি কার্যক্রম ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে আনা হয়েছে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির জন্য বড়ধরনের চাপ থাকে। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সুন্দর ভবন, বড় অবকাঠামো ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক থাকলেও সেখানে ভর্তির জন্য সকলের আগ্রহ কম থাকে।’
ইউনেসকোর প্রতিবেদনে এমপিওভুক্তির ব্যাপারে অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। তবে গত দুই বছর ধরে এ খাতে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন শিক্ষামন্ত্রী। যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় এনে সেগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনোটি পিছিয়ে গেলে সেগুলোকে সহযোগিতা করে এগিয়ে আনা হচ্ছে। বারবার চেষ্টার পরও যদি কোনোটি পিছিয়ে পড়ে তবে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা সবাইকে স্কুলে আনার প্রতি জোর দিয়েছিলাম। ২০১৮ সাল থেকে শিক্ষার মানের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোন স্তরে কি ধরনের মান হওয়া প্রয়োজন তা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। তার আলোকে নতুন কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে। চলতি বছর থেকে সেটি কার্যকর করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী তিন বছরের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের সব ক্লাসে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। করোনায় অনেক শিশুর মধ্যে মানসিক আঘাত তৈরি হয়েছে। মানসিক সুস্থতায় সারাদেশের দুই লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের এ আঘাত কাটিয়ে তুলছেন। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।’ বিগত ১২ বছর ধরে শিক্ষা আইন ঘোরাফেরা করলেও সেটি চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ থেকে সংশোধন দিয়ে আমাদের কাছে পাঠালেও সেটি করে আমরা আবারও পাঠিয়ে দিই। নতুন করে আবারও কিছু সংশোধন করতে পাঠানো হয়েছে। সেটি করে ফের পাঠানো হবে। আমাদের শেখানোর পদ্ধতিতে ভুল আছে বলেই ১২ বছর ইংরেজি পড়লেও তা সঠিকভাবে শিখতে পারছে না। তাই পড়ানোর পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মনিটরিং ও তদন্ত কাজ বাড়াতে আমাদের অধীনস্থ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরকে দু’টি ভাগ করে কাজের গতি বাড়ানো হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মানজুর আহমেদ বলেন, ‘ইউনেসকোর গ্লোবাল অ্যাডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে শিক্ষায় লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়টি উঠে এসেছে। অর্থনৈতিক সক্ষমতার কারণে শিক্ষার চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও মানের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সবার কাছে শিক্ষার সমানভাবে সুযোগ তৈরি করতে সরকারের অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জবাবদিহিতা থাকলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় সেখানে এর গুরুত্ব নেই। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জবাবদিহিতা থাকা প্রয়োজন।’ এমপিওভুক্তির মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি অনুদান দেওয়া যায় কি না তা ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘ভারতে বিকেন্দ্রীকরণ হওয়ায় দিল্লিতে ৯০ শতাংশ সরাকারি আর ১০ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। দিল্লির সরকারের ক্ষমতায় ৯০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারিতে শিক্ষার্থী সংকট তৈরি হয়েছে।’ বাংলাদেশ সরকারকে সে পথে হাঁটার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউনেসকোর পরিচালক ড. মানস এনটোনেস, ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ প্রমুখ।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম