‘আপনি ডাক্তার না আমি ডাক্তার’
৪ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৪৭
ঢাকা: দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকরা রোগীদের কম সময় দিয়ে থাকেন। তুলনামূলক বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করলেও পর্যাপ্ত সময় নিয়ে কথা বলেন না চিকিৎসক—রোগী ও তার স্বজনদের এমন অভিযোগ নিয়ে প্রায় সময়ই আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে। সেই অভিযোগের কথা উল্লেখ করে রোগীর সন্তুষ্টির জন্য চিকিৎসকদের কথা বের করতে কষ্ট হয় বলে অভিযোগ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
তিনি বলেন, রোগীকে দুই হাজার, দেড় হাজার টাকা ফি দিয়ে একজন চিকিৎসককে দেখাতে হয়। তারপরও দেখি কথা বের করতে কষ্ট হয়। অনেকে আবার বলে- ‘আপনি ডাক্তার না আমি ডাক্তার’।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের আয়োজনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস-ষষ্ঠ রাউন্ডের চূড়ান্ত ফলাফল অবহিতকরণ কর্মশালায় এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব।
ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে যায় ট্রিটমেন্টের জন্য। আমাকে ফোন করে বলে যে, তাদের (বেসরকারি হাসপাতালে) একটু বলে দিতে। তাহলে ভালো ট্রিটমেন্ট দেবে। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেও বলে দিতে হচ্ছে— সে আমার পরিচিতি, একটু দেখে দিয়েন। তার মানে অবস্থা একটু বুঝেন।’
তিনি বলেন, ‘‘দুই হাজার, দেড় হাজার টাকা ফি দিয়ে একজন চিকিৎসককে দেখাতে হয়। রোগীর সন্তুষ্টির জন্য তার কথা বের করতে অনেক কষ্ট হয়। অনেকে আবার বলে— ‘আপনি ডাক্তার না আমি ডাক্তার’।”
তিনি আরও বলেন, ‘রোগীকে তো বুঝায় বলতে হবে যে কোনটা ঠিক, কোনটা ঠিক নয়। এই কথা বলার পর রোগীর তো টাকা পয়সা দিয়ে মন মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। এই যে খরচের জায়গা বাড়ানো হচ্ছে। সবচেয়ে যেটা বাড়ানো হচ্ছে সেটা হচ্ছে ওষুধের ব্যবহার।’
ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন বলেন, ‘ওষুধ একবার লিখে দিলে আর বন্ধ নাই। প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে চলবে, কিছু আছে প্রয়োজন হয়, আমাদের চিকিৎসকরা বলে দেন যে এটা বন্ধ করা যাবে না। এখন মূল কারণ যদি আমরা জানতে পারি তাহলে প্রেসারের ওষুধ কেন খেতে হবে?’
ওষুধের কেনার যে প্রবণতা এই জায়গাটায় কাজ করা খুব দরকার বলে মনে করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব।
এদিন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবায় ২০২০ সালে দেশের নাগরিকদের ব্যক্তি খরচের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা দিতে ২০২০ সালে সরকারের মাথাপিছু ব্যয় হতো ৫৪ ডলার। বর্তমানে সরকার স্বাস্থ্যসেবায় যে অর্থ ব্যয় করে, তার সবচেয়ে বেশি হয় ঢাকা বিভাগে। আর সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস বলছে, স্বাস্থ্যের জন্য সরকারের গড় মাথাপিছু ব্যয় ৪ হাজার ৫৭৮ টাকা বা ৫৪ ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৭ ভাগ করা হয়েছে ঢাকা বিভাগে। সবচেয়ে কম ৩ ভাগ ময়মনসিংহ বিভাগে। মাথাপিছু হিসেবে ঢাকা বিভাগের জনপ্রতি ব্যয়ের পরিমাণ ৭ হাজার ৩৯ টাকা এবং ময়মনসিংহে ২ হাজার ৬০ টাকা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু এনডিসি, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশ রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. বর্দন জং রানাসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস