চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যয় ঢাকায়, সর্বনিম্ন ময়মনসিংহে
৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:১০
ঢাকা: দেশে চিকিৎসা খাতে মোট খরচের ৩৭ ভাগই ব্যয় করা হয় ঢাকা বিভাগে। আর সর্বনিম্ন তিন ভাগ ব্যয় করা হয়ে থাকে ময়মনসিংহে। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দেশে মানুষের চিকিৎসা খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় বা আউট অব পকেট এক্সপেনসেস (ওওপি) আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের (বিএনএইচএ) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের আয়োজনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস-ষষ্ঠ রাউন্ডের চূড়ান্ত ফলাফল অবহিতকরণ কর্মশালায় এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস সেলের ফোকাল পারসন ডা. সুব্রত পাল ষষ্ঠ রাউন্ডের ফলাফল জানান। তিনি বলেন, ‘বিভাগওয়ারি চিকিৎসা খাতে খরচের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট খরচের ৩৭ ভাগ করা হয়েছে ঢাকা বিভাগে, যা সর্বোচ্চ এবং ৩ ভাগ ময়মনসিংহে, যা সর্বনিম্ন। মাথাপিছু হিসেবে চিকিৎসা খাতে ঢাকা বিভাগের জনপ্রতি ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ ৭ হাজার ৩৯ টাকা এবং ময়মনসিংহে ২ হাজার ৬০ টাকা। সর্বোপরি ২০২০ সালে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের জন্য গড় মাথাপিছু ব্যয় ৪ হাজার ৫৭৮ টাকা।’
ডা. সুব্রত পাল বলেন, ‘২০২০ সালে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে মোট চিকিৎসা ব্যয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ) সম্পন্ন হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা কর্তৃক ব্যয়ের পরিমাণ ৫ শতাংশ। এর আগে প্রকাশিত বিএনএইচএর তথ্যানুসারে, ২০১৫ সালে মোট চিকিৎসা ব্যয়ের মধ্যে সরকারি খাতের ব্যয় ছিল ২২ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০২০ সালে সামান্য বেড়ে ২৩ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়ায়।’
তিনি জানান, ব্যক্তির পকেট থেকে ব্যয় সবসময় সরকারের ব্যয় বা সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, মোট নিজ পকেট থেকে ব্যয়ের ৫৪ শতাংশ খরচ করে থাকে দেশের শীর্ষ ধনী জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর নিম্ন দুই ভাগ মোট নিজ পকেটের যথাক্রমে ৪ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ খরচ করে থাকে।
চিকিৎসার ব্যয় বিশ্লেষণে আরও দেখা যায় যে, জনসংখ্যার সর্বনিম্ন অংশ মাথাপিছু ২০০ টাকা নিজ পকেট থেকে ব্যয় করে থাকে। যেখানে জনসংখ্যার শীর্ষ ধনী অংশ খরচ করে এর তুলনায় আটগুণেরও বেশি টাকা (১ হাজার ৭১৪ টাকা)। একই এলাকা বা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে মাথাপিছু খরচের তুলনায় দেখা যায় যে, সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলো দরিদ্রদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি ব্যয় করেছে।
ডা. সুব্রত পাল জানান, গ্রামাঞ্চলে শীর্ষ দুই ধনী অংশ খরচ করে মোট ব্যক্তি পর্যায়ে খরচের ৫৭ শতাংশ, যেখানে দরিদ্রতম দুই অংশ খরচ করে ২৫ শতাংশ। কিন্তু শহরাঞ্চলে এ খরচ যথাক্রমে ৭৬ শতাংশ ও ১২ শতাংশ। সিটি করপোরেশনভুক্ত স্থানে এ হার যথাক্রমে ৮৭ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ। এতে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের ওপর নিজ পকেটের ব্যয়ের উচ্চ অংশটি জনসংখ্যার ধনী অংশ দ্বারা চালিত হয়।
তিনি জানান, সরকারি ব্যয়ের মধ্যে মোট খরচের ৯৩ শতাংশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খরচ করে থাকে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনগুলো সম্মিলিতভাবে বাকি ৭ শতাংশ খরচ করে থাকে। বেসরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে মোট ব্যয়ের ৮৯ ভাগ ব্যক্তিপর্যায়ে নিজ পকেট থেকে খরচ করে। বাকি ১১ শতাংশ বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এনজিও এবং প্রাইভেট হেলথ ইনস্যুরেন্সের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ইতোপূর্বে প্রকাশিত বিএনএইচএর তথ্য অনুসারে, ২০১৫ সালে মাথাপিছু স্বাস্থ্য খাতে খরচ ছিল ৩৭ ডলার। যা ২০২০ সালে বেড়ে হয়েছে ৫৪ ডলার হয়েছে।
ডা. সুব্রত পাল আরও জানান, বিএনএইচএর তথ্যানুসারে, ২০১৫ সালে মোট সরকারি স্বাস্থ্য ব্যয়ের মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলোর পেছনে খরচের অনুপাত ৪০ শতাংশ। যা সর্বশেষ প্রকাশিত বিএনএইচআরের তথ্যানুসারে প্রায় ৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এদিন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু এনডিসি, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. বর্দন জং রানা প্রমুখ।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম