‘সীমান্তে হত্যা বাংলাদেশ সরকারকে বিব্রত করে’
৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:০২
ঢাকা: সীমান্তে হত্যা বাংলাদেশ সরকারকে বিব্রত করে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ককে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারে না। সামনের দিনে সীমান্ত হত্যা কমে আসবে বলে বিশ্বাস করে ঢাকা।’
বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ-ভারত অনন্য বন্ধুত্বে হাসিনা-মোদির আমল: গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। সেমিনারের আয়োজন করে সূর্যবার্তা মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন। এতে সভাপতিত্ব করেন সূর্যবার্তার উপদেষ্টা পরিচালক অধ্যাপক ওমর সেলিম শের।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমান্ত হত্যা একটা বিরক্তের জায়গা। এতে কোনও সন্দেহ নেই। এটা আমাদের বিব্রত করে। আমাদের সম্পর্কটাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে না পারার একটা কারণ হলো সীমান্ত হত্যা। ভারতের কাছে অপ্রিয় সত্য তুলে ধরতে কখনও পিছপা হইনি। গত সপ্তাহে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি ভারতের কাছে আমরা কূটনৈতিক ভাষায় জানিয়েছি। কিছু কিছু জায়গায় সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তবে সীমান্ত হত্যা লালমনিরহাটে ইদানিং বেশি হচ্ছে, কেন সেটা হচ্ছে তা আমরা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় আসবে বলে আশা করছি।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘করোনাকালে ভারত যে ভ্যাকসিন দিয়েছিল, সেটা আমরা প্রথমেই ফ্রন্ট লাইনারদের দিয়েছিলাম। ভারত থেকে আমরা ৪/৫ ডলারে ভ্যাকসিন পেয়েছি। সেই ভ্যাকসিন পরবর্তীতে অন্য দেশ থেকে ২১ থেকে ২২ ডলারে নিতে হয়েছে। তবে সেই সময়ে আমরা ভারতকে অ্যাপ্রিশিয়েট করতে ব্যর্থ হয়েছি। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অর্জন অনেক। তবে দুই দেশে অনেক ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে। এটা যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছি আমরা। আগামী তিন মাসের মধ্যেই সেখান থেকে আমদানি ২ হাজার মেগাওয়াট হয়ে যাবে-যোগ করেন শাহরিয়ার আলম।
অনুষ্ঠানে দিল্লির বেনেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অয়নজিৎ সেন বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় উঠেছে। পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে আমাদের এই সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে। তবে দুই দেশের সম্পর্ক শুধু ভৌগলিক দিক থেকে দেখা উচিৎ নয়। এটা আমাদের নানা দিক দিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে মানবতার বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে।’
দক্ষিণ এশিয়া মৌলবাদবিরোধী ফোরামের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তি তখনও ভারত বিরোধিতা করেছিল, এখনও তারা ভারত বিরোধিতা করছে। ১৯৭৫ সালের পর পাকিস্তানপ্রেমী শাসকদের কারণেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আর এগোয়নি। তবে ভারতের সাথে সম্পর্ক কোনও সরকারের সাথে নয়। এই সম্পর্ক দুই দেশের। এই সম্পর্ক বজায় থাকবে।’
দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘শেখ হাসিনা-মোদির সরকারের পারস্পরিক রাজনৈতিক নীতিতে অমিল থাকলেও অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। মোদি সরকারের নীতি ছিল প্রতিবেশী প্রথম। আর শেখ হাসিনার সরকারের নীতি ছিল সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক গভীর হয়েছে।’
দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ৫১ বছরের নয়। এই সম্পর্ক হাজার বছরের। দুই দেশের সম্পর্কে কিছু সমস্যা আছে। এই সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠতে হবে। সীমান্তকেন্দ্রিক কোনও অর্থনৈতিক কর্মসূচি চালু করা যায় কিনা, সেটা ভেবে দেখতে হবে। এ ছাড়া ভিসা আরও সহজ করতে হবে।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন- বাসসের প্রধান বার্তা সম্পাদক সমীর কান্তি বড়ুয়া, দেশ রূপান্তরের প্রধান প্রতিবেদক উম্মুল ওয়ারা সুইটি। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সূর্যবার্তার সম্পাদক সুমি খান।
সারাবাংলা/এসবি/এমও