বাণিজ্য মেলায় বাড়ছে ভিড়, হাসি ফুটছে বিক্রেতাদের মুখে
৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৪৮
নারায়ণগঞ্জ: যত দিন যাচ্ছে তত বেচা-বিক্রি বাড়ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। দেশি-বিদেশি পণ্যের প্রচার, প্রসার ও বিক্রিতে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে এবারের বাণিজ্যমেলা। মেলার গেটে ঢুকেই কেউ ছবি তুলছেন, কেউ বা মোবাইল ভিডিও লাইভে স্বজনদের দেখাচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গনের দৃশ্য। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। পাশাপাশি কেনাকাটাও করছেন। পছন্দের জিনিসপত্র কিনছেন দামদর করে। কেউ কেউ জিনিসপত্র দেখে শুনে যাচ্ছেন পরে এসে কেনার আশায়।
প্রথম সপ্তাহেই মেলা পুরো জমে ওঠার কারণে ব্যবসায়ীরা অনেক খুশি। গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলা বেশি জমে উঠবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। দিন যত বাড়বে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী বাড়বে বলে আশাবাদী বিক্রেতারা। মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফার্নিচার এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর স্টল ক্রেতা এবং দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। খাদ্যসামগ্রীর স্টলগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ছোট-বড় মিলে ৩৫১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়নে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের প্রদর্শনী কেন্দ্রের স্থায়ী অবকাঠামোর ভেতরে ও বাইরে মিলিয়ে এবারের মেলা সাজানো হয়েছে। এতে ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে পারছেন।
স্টলমালিক, ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা বলেন, ‘এখানে মেলা হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। এখানে খোলামেলা পরিবেশ। এই এলাকায় এমনও মানুষ আছে যারা কখনও আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলায় যাননি, তারাও এখানে আসছেন। মেলার সৌন্দর্যই হলো ক্রেতা-দর্শনার্থী। তাদের আগমন যত বাড়বে মেলার সৌন্দর্য তত বাড়বে। আমাদের প্রত্যাশা, সামনে ক্রেতা-দর্শনার্থী আরও বাড়বে।’
মেলা ক্রেতামুখী করতে এবারও কমদামে নিজেদের প্রোডাক্ট ছেড়েছে বিভিন্ন কোম্পানি, রয়েছে বিশেষ ছাড়ও। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রিও বেড়েছে প্রচুর। স্টলে বিক্রি ও পণ্য উপস্থাপন কার্যক্রম পুরো দমে চালু হয়ে গেছে। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়ে অবশেষে হাসি ফুটছে বিক্রেতাদের মুখে।
এদিকে, দর্শনার্থী বাড়ার পাশাপাশি বিক্রিও হচ্ছে ভালো। রাজধানীর মালিবাগ থেকে মেলায় আসা নিহাল রহমান বলেন, ‘প্রতিবার মেলায় ঘুরতে আসি। এবারের মেলায় প্রথম এলাম। মেলার পুরো প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখার ইচ্ছা আছে। ঘুরতে ঘুরতে কিছু পছন্দ হলে কিনব। তবে নির্দিষ্ট কোনো পণ্য কেনার জন্য মেলায় আসিনি। মেলায় আসার মূল উদ্দেশ্য পরিবার নিয়ে ঘোরাঘুরি করা।’
কাঁচপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘মেলার প্রথম দিন পরিবার নিয়ে আসার ইচ্ছা ছিল। সময়-সুযোগ করতে না পারায় আসা হয়নি। পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু গৃহস্থালি সামগ্রী কেনার পরিকল্পনা আছে।’
গাজী প্যাভিলিয়েনে কথা হয় গাজী গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার (করপোরেট সেলস) এনায়েত উল্লাহ সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দর্শনার্থীরা আসছেন, দেখছেন। মেলা যত গড়ায়, বিক্রিও তত বাড়ে। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আশানুরূপ হবে বলে আমরা আশাবাদী।’ এবার মেলায় গাজীর প্রতিটি পণ্যেই ১০ শতাংশ ছাড় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘মেলায় ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। আশা করি বাণিজ্যমেলা ব্যবসা সফল হবে। আমাদের আন্তরিকতার সবটুকু দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে মেলা পরিচালনা করছি। এ বছর সড়ক ব্যবস্থা অনেকটা ভালো। সহজে দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে পারছেন। দর্শনার্থীরা যেন কোনো সমস্যায় না পরেন এমনকি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাও যেন না ঘটে সেজন্য মেলায় ভেতর ও বাইরে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন। বাড়তি নজরদারির জন্য মেলার ভিতরে ও বাইরের বিভিন্ন সড়কে বসানো হয়েছে ২৭০টি সিসি ক্যামেরা। মেলায় এবারও সাধারণ, প্রিমিয়াম, সংরক্ষিত, ফুড স্টল ও রেস্তোরসহ ১৩ ক্যাটাগরিতে স্টল রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন।’
ইপিবি সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘এবার দেশি-বিদেশি মিলে মেলায় মোট ৩৫১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি। দেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, ভারতসহ ১০টি বিদেশি রাষ্ট্রের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। গতবার শিশুপার্ক ছিল না। এবার মিনি শিশুপার্ক রয়েছে। ফুডকোর্ট নিচে চলে গেছে। পরিবেশও ভালো হয়েছে। পরিসর বড় হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবারের মেলাটা আরও বেশি জমজমাট হবে।’
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (১ জানুয়ারি) সকালে ‘২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা’র উদ্বোধন করেন। এবার মেলার পরিসর বাড়ানো হয়েছে। মেলা উপলক্ষে কুড়িল থেকে মেলার ভেন্যু পর্যন্ত যাত্রীদের আনা-নেওয়ার জন্য ৫০টি শাটল বাস চলাচল করছে। বাসের ভাড়া যাত্রীপ্রতি ৩৫ টাকা, বিকাশের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করলে যাত্রীরা ৫০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন।
মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ফ্রি। মেলা খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে ছুটির দিনে এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
সারাবাংলা/এমও